মধুবনী গোস্বামী।
প্রায় ২ সপ্তাহ হয়ে গেল। পুরোপুরি বদলে গিয়েছে চেনা জীবন। নতুন পরিচয় পেয়েছি। মা হয়েছি। এখন আমার সারাটা দিন জুড়ে শুধু ছেলে কেশব। ও এখন আমার পৃথিবী। সকাল থেকে রাত কাটছে ওর দেখাশোনা করে। ও ঠিক করে খাচ্ছে কিনা, ঘুমলো কিনা এই ভাবনাতেই দিন কেটে যাচ্ছে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যখন হাসে, তাকিয়ে থাকি ছোট্ট মুখটার দিকে। কী জানি কী ভেবে হাসে।
স্টার জলসায় ‘ভালবাসা ডট কম’ ধারাবাহিকে ওম-তোড়া হয়ে আমি আর রাজা একসঙ্গে পথ চলা শুরু করেছিলাম। মা-বাবা হয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম মনে হয়।
আমার অনেক অভ্যাস বদলেছে। রাজাকে তো মানুষ হিসেবেই পুরোপুরি বদলে দিল ও। এখন সে খুব সাবধানী। নজর ঘড়ির কাঁটার দিকে। ছেলেকে খাবার বা ওষুধ খাওয়াতে এক মিনিট দেরি হলেই আমাকে বকাবকি শুরু করে দেয়। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও ছেলেকে মন ভরে আদর করার উপায় নেই ওর। শ্যুটিং করছে। স্টুডিয়োতে যাচ্ছে। তাই ছেলেকে কোলেও নিতে হচ্ছে মুখে মাস্ক পরে। আমাদের ঘরটাও এখন আলাদা। একটা ঘরে আমি আর কেশব। আরেকটা ঘরে রাজা। পাশাপাশি দু’টো ঘর। তবু অতিমারির ছায়ায় মনে হয় দূরত্ব কত বেড়ে গিয়েছে।
অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীনও খুব ভয়ে ভয়ে থাকতাম। বিশেষ বাইরেও বেরতাম না। পাছে কিছু হয়ে যায়! যে রাতে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছিলাম, সেই রাতটার কথা স্পষ্ট মনে আছে। আমি আর রাজা যখন গাড়ি করে যাচ্ছি, কত ভাবনা মনে আসছে। ৯ মাস যে তিলতিল করে আমার ভিতর বেড়ে উঠল, রাত পোহালেই তাকে দেখব ভেবে সারা শরীরে কেমন একটা আনন্দ খেলে যাচ্ছিল। এর পর গন্তব্যে পৌঁছলাম। রাস্তার ধারের হলদেটে আলো মিলিয়ে গেল হাসপাতালের বদ্ধ কেবিনে। শুরুতেই করোনা পরীক্ষা করানো হল আমার। জানতাম, ফল নেগেটিভ আসবে। তা-ও বুকের ভিতরটা কেমন ওঠা নামা করতে লাগল। কতগুলো প্রশ্ন যেন বেরিয়ে আসতে চাইছিল মাথা থেকে। সব ঠিকঠাক হবে তো? করোনার ফল নেগেটিভই আসবে তো?
কিছুক্ষণ পরেই এল করোনার ফল। নেগেটিভ দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। এর পর সারা রাত জুড়ে অপেক্ষা। কেবিনের জানলা দিয়ে দেখলাম হালকা আলো। বুঝলাম সকাল হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হল আমায়। একটা ইনজেকশন দিতেই কোমর থেকে পায়ের নীচ পর্যন্ত কেমন ঝিনঝিন করতে শুরু করল। বুঝলাম শরীরের নীচের অংশটুকু অবশ হয়ে গেল। এর পরেই দেখলাম একটা একরত্তিকে আমার কোলে দিয়ে দেওয়া হল। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “এটা কার বাচ্চা?” । ডাক্তার বলেছিলেন, “এই ভদ্রলোক তোমার ছেলে।” তখন প্রথম দেখেছিলাম সন্তানের মুখ। ঠিক কেমন লেগেছিল এখনও সেটা বলে বোঝাতে পারব না।
আমি ঈশ্বরে খুব বিশ্বাসী। গত বছর জন্মাষ্টমী করব বলে মনে হয়েছিল। বাড়ির এক সদস্যকে বলেছিলাম কুমোরটুলি থেকে আমাকে গোপালের একটা মূর্তি এনে দিতে। কিন্তু দেরি করে যাওয়ায় তখন শুধুমাত্র একটা মাত্রই মূর্তি ছিল। সেটাকেই বাড়িতে আনা হয়েছিল। খুব নিষ্ঠা করে পুজো করেছিলাম। তাই বলে খুব রীতিনীতি মেনে নয়। মন থেকে করেছিলাম সব কিছু, তার ১০ দিন পরেই গণেশ পূজো ছিল। ঠাকুরকে প্রণাম করে এসেই পরীক্ষা করে জানতে পেরেছিলাম আমি অন্তঃসত্ত্বা। কেশবকে ঈশ্বরই আমাকে উপহার দিয়েছেন। ওর আসায় গোপালের অবদান আছে বলে আমি মনে করি। আমাদের পরিবারে একরাশ খুশি বয়ে এনেছে ও। দাদু, ঠাম্মা সব্বার আদর খাচ্ছে এখন। ওকে নিয়েই আগামীর স্বপ্ন বুনছি আমরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy