Advertisement
E-Paper

মানবদরদি ইরফান নেই, স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচছে ‘হিরোর পাড়া’

৩০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সেই গ্রামের মানুষ নাসিকে আসতেন শুধুমাত্র ইরফানের সিনেমা দেখবেন বলে। তাঁর অভিনয়ের ভক্ত বলে? না, মানুষ ইরফানকে এক ঝলক দেখবেন বলে। তাঁদের কাছে ইরফান যে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২০ ১৮:৩৬
ইরফান খান।

ইরফান খান।

মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার ছোট্ট গ্রাম ইগতপুরী। দু’পাশে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এই গ্রামকে জড়িয়ে রেখেছে। একটু এগোলেই ত্রিঙ্গালওয়াড়ি দুর্গ। আদিবাসী গ্রাম। এ গ্রামে কোনও সিনেমা হল নেই। সবার বাড়িতে যে টিভি রয়েছে এমনটাও নয়। অথচ, এ গ্রামের সববয়সি মানুষ এক জন তারকাকে ঠিক চেনেন। শুধু চেনেনই না, গত দশ বছরে তাঁর একটি ছবিও বাদ দেননি তাঁরা। তাঁর পদবিতেও খান রয়েছে। কিন্তু আমির, সলমন বা শাহরুখ নন তিনি। তিনি ইরফান খান।

৩০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সেই গ্রামের মানুষ নাসিকে আসতেন শুধুমাত্র ইরফানের সিনেমা দেখবেন বলে। তাঁর অভিনয়ের ভক্ত বলে? না, মানুষ ইরফানকে এক ঝলক দেখবেন বলে। তাঁদের কাছে ইরফান যে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’!

সে অনেক বছর আগের কথা। ইগতপুরীর ওই মনোরম পরিবেশে ইরফানের বড় সাধ হয়,ফার্মহাউজ বানাবেন তিনি। কিছু জমি-জায়গাও কেনেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে এক রূঢ় বাস্তবের চিত্রনাট্য একের পর দৃশ্যমান হতে থাকে অভিনেতার সামনে।

ত্রিঙ্গালওয়াড়ি, পারদেবী, কুশগ্রাম ইত্যাদি অঞ্চলে স্কুল রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাতে উপযুক্ত পরিষেবা নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, কিন্তু তাতে কোনও দিন অ্যাম্বুল্যান্সের আওয়াজ শোনা যায়নি। স্থানীয় নেতা গোরাখ বোড়কের কাছে রাস্তার পাশের এক ধাবায় বসে রুটি-সব্জি খেতে খেতে কথাগুলো শুনেছিলেন ইরফান।

আরও পড়ুন- কোয়েল, শুভশ্রীর পর এবার অঙ্কিতা, টলিপাড়ায় লাগাতার ‘গুড নিউজ’

সবার অলক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া মানুষটি এর পরেই নিঃশব্দে গ্রামে পাঠালেন অ্যাম্বুল্যান্স। দিলেন বইখাতা, রেনকোট, সোয়েটার কেনার টাকা। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাঠাতেন মিষ্টি। দিয়েছিলেন কম্পিউটার। প্রতি বছর দিয়ে যেতেন, গ্রামে গেলে সবার সঙ্গে বসে রুটি-সব্জি খেতেন ইগাতপুরির ‘হিরো’।

ইরফানের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবরটা তাঁদের কানে এসেছিল। হিরোর জন্য প্রার্থনা করেছিল গোটা গ্রাম। অনেক দিন ইরফানের ছবি না দেখতে পারায় মন উশখুশ করছিল তাঁদের। ও সুস্থ আছে তো? অবশেষে ‘আংরেজি মিডিয়াম’ মুক্তি পেতেই স্বস্তির শ্বাস ফেলেছিলেন তাঁরা।

কিন্তু আচমকাই ইরফানের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছয় সেখানে। কান্নায় ভেঙে পড়েছিল গোটা গ্রাম। হিরো নেই। তাঁদের ‘গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল’ নেই, বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কিছুতেই। ইরফানের মৃত্যুতে কেঁদেছিল বলিউড। ডুকরে উঠেছিলেন নেটাগরিকরা। কিন্তু নাসিকের এই অখ্যাত গ্রামের আদিবাসীরা অভিভাবক হারানোর শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন- রাজকে এত খুশি হতে আগে কখনও দেখিনি: শুভশ্রী

‘হিরো’রও তবে মৃত্যু হয়? সাময়িক শোক কাটানোর মরিয়া চেষ্টা তাঁদের। কিন্তু ইরফানকে তাঁরা ভুলবেন না, ভুলতে চানই না। তাই যে জায়গায় ইরফানের ফার্মহাউজ ছিল সে জায়গারই নাম বদলে রাখা হচ্ছে ‘হিরো চি ওয়াড়ি’। শব্দটি মরাঠি। বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘হিরোর পাড়া’।

সত্যিই তো, পাড়াই বটে। চেনা নেই, জানা নেই, নেই রক্তের সম্পর্কও। অথচ কোন এক জাদুবলে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন মানুষটা। চলে গিয়েছেন ইরফান। তবু স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচতে চাইছে হিরোর পাড়া।

Irrfan Khan Bollywood Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy