Advertisement
E-Paper

‘কৃষ্ণকলি’র মেকআপ রুমে কী কী আড্ডা হয় জানেন?

রিমঝিম তিয়াশার উদ্দেশে বললেন, “এই, খাটের ভেতর দিকে সরে বস। পড়ে যাবি। দিনে চারবার পড়ে যাস সেটা বল...”

মৌসুমি বিলকিস

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:০০
‘কৃষ্ণকলি’র সদস্যরা।

‘কৃষ্ণকলি’র সদস্যরা।

‘অথবা চায়ের মগে কুটুম হয়েছে এই জ্ঞানে/ মিলেমিশে গেল তারা চারজোড়া কানে’ (লঘু মুহূর্ত, জীবনানন্দ দাশ)। হ্যাঁ, একসঙ্গে থাকতে থাকতে ‘কুটুম’ তো বটেই। উপরন্তু এর কান ওর কান রোজই মিলেমিশে যাচ্ছে। ফিসফিস, হাসাহাসি, খুনসুটির কমতি নেই। কলতলা, কুয়োপাড়, নদীর ঘাট, অন্দর মহল ছেড়ে একেবারে মেকআপ রুমে। কফি হাউজের আড্ডা না থাক, মেয়েদের আড্ডা দিব্বি আছে।

কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকের মেয়েদের মেকআপ রুম। সারাক্ষণই ‘লঘু মুহূর্ত’। তিন বৌমা (দিশা, পাপিয়া, শ্যামা), বিজলী আর রাধারানীকে নিয়ে দিব্যি আসর জমাচ্ছেন শাশুড়ি সুজাতা চৌধুরী। যদিও এদিন রাধারানীর অফ-ডে। তা কী নিয়ে এত গল্প তাঁদের?

এতক্ষণ গম্ভীর হয়ে বইয়ের পাতায় চোখ ছিল সুজাতা ওরফে নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়ের। হাতে ধরা ‘পৃথিবীর পাঠশালায়’ (ম্যাক্সিম গোর্কি)। আড্ডার গন্ধ পেয়েই চনমন করে উঠলেন। বই বন্ধ করে চেয়ার টেনে বসলেন মুখোমুখি। আড্ডার বিষয় শোনালেন, “আমাদের তো কবে কী খাওয়া হবে সেটা নিয়েই আড্ডা শেষ হয় না... এনকারেজিং ব্যাপার... রিফ্রেশ হয়ে যাই। আর একটা ব্যাপারে তো বিস্তর আড্ডা চলে... যৌনতা... সে ব্যাপারে মৌনতা অবলম্বন করাই ভাল (প্রাণ খুলে হাসি)...।”সবাই এ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছেন।

নিবেদিতা বললেন,“মেয়েরা আড্ডা দেবে আর এব্যাপারে আলোচনা হবে না... অবিশ্বাস্য (হাসি চলছে)... এখানেও হয়... মাঝে মাঝে তো ছেলেরা ভয়ে ঢোকেই না... বড় ছেলে (কৌশিক ভট্টাচার্য) তো এই ঘরে আসতেই চায় না। সারাক্ষণ চরিত্র হয়ে বসে থাকা তো সম্ভব নয়... সিনিয়র চরিত্র করলে সবাই সিনিয়র হিসেবেই ধরে নেয়। একে তো সমবয়সী বড় ছেলে, সেই নিয়ে একটা ডিপ্রেশন কাজ করে... ডিপ্রেশন কাটানোর জন্য...হা হা হা (বাকিটা চেপে যান)।”

আরও পড়ুন, ‘আমি বেকার, কারও কাছে পার্ট আছে?’

কেন? বিহাইণ্ড দ্য সিন কিছু হয় না? নিবেদিতা বললেন, “সিনিয়র চরিত্র করছি মানে বিহাইণ্ড দ্য সিনও কিছু হবে না... (মুখে দুষ্টুমির হাসি)... গোটা পশ্চিমবঙ্গেও সেরকম ছেলে নেই, যারা একটু বড় মহিলাদের পছন্দ করে বা ডিল করতে পারে... এখানেও কেউ নেই... আমার বর খুব নিশ্চিন্তে থাকে... হা হা...”

উপস্থিত সবাই হাসছেন। প্রিয়াঙ্কা হালদার ওরফে পাপিয়া যোগ করলেন, “রিমঝিমদি (দিশা) আমাদের বিহাইণ্ড দ্য সিন-এর লিডার... কবে কী খাওয়া হবে, কোথা থেকে আনা হবে সব ঠিক করে।” রিমঝিমের মুখে মৃদু হাসি। ঘরে ঢুকলেন প্রোডাকশন বয়। তাঁকে উল্টোদিকের রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আনতে দিলেন রিমঝিম। চিরকুটে লিখে দিলেন কী কী আনতে হবে। টাকা শেয়ার করলেন যাঁরা যাঁরা খেতে চান। অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর স্ক্রিপ্ট দিয়ে গেলেন প্রিয়াঙ্কাকে।


আড্ডার মেজাজে ‘কৃষ্ণকলি’র সদস্যরা ।

বিজলি মানে পূর্বাশা রায় খাটের পাশের দেয়ালে নিজের নাম লিখে রেখেছেন। জায়গাটা তাঁর। অন্য কেউ যেন শুয়ে না পড়ে। “এই সরসর” বলে তিনি হেয়ার ড্রেসার টুম্পাকে সরিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে জায়গা দখল করলেন। রিমঝিম আধশোয়া হয়ে পূর্বাশার পাশে। একটাই খাট। সবার একসঙ্গে জায়গা হওয়া সম্ভব নয়। তিয়াসা খাটের কোণায় বসে। প্রিয়াঙ্কা তখন দৃশ্যের জন্য রেডি হচ্ছেন। টুম্পা খাট ছেড়ে উঠে গেল খোঁপা বাঁধতে। প্রিয়াঙ্কাকে মাঝে মাঝে তাড়া দিতে আসছে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর। তিনি রেডি হলেই শুরু হবে পরবর্তী শুট। তাঁর কল টাইম পরে ছিল।

রিমঝিম তিয়াশার উদ্দেশে বললেন, “এই, খাটের ভেতর দিকে সরে বস। পড়ে যাবি। দিনে চারবার পড়ে যাস সেটা বল...”

তিয়াসা ভেতরের দিকে সরে বসলেন, “হা হা হা... আমি তো যেখানে সেখানে পড়ে যাই... কিন্তু সামনে যারা থাকে তাঁরা ধরতেই পারে না... আমার হাতই খুঁজে পায় না... হা হা...”

রিমঝিম,“পড়াটাও অদ্ভুত! স্লো মোশনে পড়ে... এই দেখা যাচ্ছে, স্টার্ট হল ওর পড়া... মানুষ কী করে? নিজেকে সামলে নেয় তো? ও কিন্তু পুরোটা পড়বে... পুরো ল্যাণ্ড করবে...”

তিয়াসা,“হে হে হে...”

আরও পড়ুন, ভাল নেই প্রিয়ঙ্কা, আপাতত গৃহবন্দি

রিমঝিম,“তারপর বলবে, ‘এ বাবা! আমি পড়ে গেলাম!’, বলে উঠে বসবে।”

তিয়াসা,“হা হা হা হা...”

পূর্বাশা,“হো হো হো হো...”

নিবেদিতার মুখে মৃদু হাসি। প্রিয়াঙ্কা পর্দার আড়ালে গেলেন শাড়ি পরতে। তাঁকে সাহায্য করছেন টুম্পা। বাতানুকূল যন্ত্রের হাওয়ায় নড়ে উঠছে পর্দা।

রিমঝিম,“আগের দিন কোনও কারণ নেই, হঠাৎ করে খাট থেকে উল্টে পড়ে গেল...”

তিয়াসা,“হি হি হি... আগের দিন রাতে শুট ছিল... সবাই মিলে বসে ভূতের গল্প করছে... হঠাৎ করে আমি পড়ে গেলাম... হি হি...”

টুম্পা,“ভূতে ফেলে দিয়েছে।”

তিয়াসা,“সবার ধারণা ভূত ফেলে দিয়েছে... আমি আগেই বলেছিলাম, ‘ভূতের গল্প কোর না, এরকম কিছু হবে’... হা হা...”

মেয়েদের আড্ডায় উছলে উঠছে হাসি। ভূতের প্রসঙ্গ পেয়েই আবার শুরু গল্প। কার বাড়িতে এক রাতে নিজে নিজেই সব জলের বোতল একটা একটা করে পড়তে শুরু করেছিল, কে গাড়ির সামনে গভীর রাতে কাপড়ে মুখ ঢাকা ভূত দেখেছিল, কার ঘরে ইলেকট্রিক বাতি নিভে গিয়েছিল কোনও কারণ ছাড়াই... নন এণ্ডিং ভূতের গল্পরা জাগছে। বিভূতিভূষণের ভর দুপুরের ভূতরা এবার সত্যি সত্যি এই মেকআপ রুমের আড্ডায় যোগ দিতে আসছে। দরজায় শব্দ, ঠক্‌ঠক্‌। দরজা খুলে দেখা গেল না কাউকে! শুধু মেকআপ রুমের বাইরেটা অলৌকিক রোদে ভেসে যাচ্ছে!

(টলিউডের প্রেম, টলিউডের বক্স অফিস, বাংলা সিরিয়ালের মা-বউমার তরজা -বিনোদনের সব খবর আমাদের বিনোদন বিভাগে।)

Krishnakoli TV Tollywood Celebrities কৃষ্ণকলি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy