Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment News

‘আমি বেকার, কারও কাছে পার্ট আছে?’

সাক্ষাত্কারের বিষয় ছিল মূলত কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত আসন্ন ছবি ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’। কিন্তু সামনে সুদীপ্তা চক্রবর্তী থাকলে আড্ডা অন্য পথেও যে গড়াবে, এ যেন স্বাভাবিক... সাক্ষাত্কারের বিষয় ছিল মূলত কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত আসন্ন ছবি ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’। কিন্তু সামনে সুদীপ্তা চক্রবর্তী থাকলে আড্ডা অন্য পথেও যে গড়াবে, এ যেন স্বাভাবিক...

স্বরলিপি ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ১১:০৫
Share: Save:

জ্যেষ্ঠপুত্র’ তো দুই ভাইয়ের গল্প। আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

ঠিকই। মূলত দুই ভাইয়ের গল্প। আমাকে যখন কৌশিকদা ফোন করেছিল, বাবাকে (প্রয়াত অভিনেতা বিপ্লবকেতন চক্রবর্তী) বাঁচানোর যুদ্ধ চলছে। এই গল্পের ঋতুদা (ঋতুপর্ণ ঘোষ) যে লাইনআপটা রেডি করেছিল, সেখানে তিন ভাই ছিল। মেজ ভাই ছিল এক জন। কৌশিকদা বলেছিল, আমি সেটাকে ভাই রাখব না। বোন করেছি। মজা পাবি রোলটা করে। আমি চাই তুই কর। ডেট নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছিল। সেটা সলভ করেছিলাম। কৌশিকদা ‘কেয়ার অব স্যার’-এর অনেক দিন পরে ডাকল। কৌশিকদার এই ছবিটা করব বলে অন্য একটা ছবি ছেড়ে দিয়েছিলাম। অনেক পরে স্ক্রিপ্ট পেয়েছিলাম। তখন বুঝেছিলাম কেন করতে বলছিল। অথবা আপনার প্রশ্ন অনুযায়ী, আমি কতটা গুরুত্বপূর্ণ (হাসি)।

রাজি হওয়ার পর স্ক্রিপ্ট পড়েছিলেন…

হ্যাঁ। তবে তার পর সেটা নিয়ে বসার আর সময় পাইনি। কারণ আমার জীবনে একটা সাংঘাতিক সময় চলছে তখন। বাবা চলে গেলেন ৩০ নভেম্বর ভোরে। ৪ ডিসেম্বর থেকে ডেট দেওয়া ছিল। ৩ তারিখ বাবার কাজ, যেটুকু নিয়ম মা চেয়েছিলেন আমরা তিন বোন করেছিলাম। সেটা শেষ করে ৪ তারিখ ভোরে রওনা হয়ে গেলাম। শান্তিনিকেতন। তখন মাথা প্রায় কাজ করছে না। আসলে কোনও কিছু নিয়ে শারীরিক, মানসিক ভাবে ব্যস্ত থাকার পর হঠাত্ করে ফাঁকা হয়ে যায় না…। বাবা চলে যাওয়ার পর আমারও তাই হয়েছিল। ফলে লোকেশনে পৌঁছনোর আগে স্ক্রিপ্টটা রিয়ালাইজ করারই সময় পাইনি।

আরও পড়ুন, বুম্বাদার ডেডিকেশন আমাকে ইনসিকিওর করে দেয়, স্বীকারোক্তি ঋত্বিকের

তার পর?

বাবার মৃত্যুর কাজ সেরে লোকেশনে পৌঁছলাম। সিন। সেখানেও বাবার মৃত্যু। সেখান থেকে ছবিটা শুরু।

সুদীপ্তা আর ইলা (‘জ্যেষ্ঠপুত্র’-এ সুদীপ্তার চরিত্রের নাম) মিলে গিয়েছিল একেবারে!

একদম। আমাদের জীবনটাই খুব অদ্ভুত। প্রথম সিনটাতেই আমি জানতে পারছি আমার বাবা মারা গিয়েছে। বাবা বলে চিত্কার করে কাঁদছি। শটে বাবা বলার পরের আধ ঘণ্টা কী হয়েছে, আমি জানি না। ইউনিট জানে। সেই একই ঘটনা আবার ডাবিং করার সময়েও হয়েছিল।


‘জ্যেষ্ঠপুত্র’-এ সুদীপ্তা।

আলাদা করে আর অভিনয় করতে হয়নি আপনাকে…

আসলে আমি বাবার কনিষ্ঠা কন্যা হলেও বাড়ির জ্যেষ্ঠপুত্র। অনেক সময় অনেক ইমোশন দেখানো যায় না। বাবা চলে যাওয়ার পর সে সময়টা সবাইকে ঠাণ্ডা মাথায় সামলে রাখা কাজ ছিল আমার। ইমোশন কন্ট্রোলে রাখতে হয়েছিল। কৌশিকদা তো বুদ্ধিমান পরিচালক। আমাকে বলেছিলেন, এই চার-পাঁচ দিন ধরে যেটা করতে পারিসনি, সেটা করে ফেল। যেটা আটকে আছে সেটা বের করে দিস সিনে।

ইলা কেমন? সে-ও কি সবাইকে সামলে রাখে?

না। ইলাকেই সবাই সামলে রাখে। সে অ্যাপারেন্টলি স্বাভাবিক। আসলে স্বাভাবিক নয়।

আরও পড়ুন, ‘ও জানতেই পারল না, আমার ওকে মনে আছে…’

‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ তো অভিনেতাদেরই ছবি। কতটা লড়াই হল অনস্ক্রিন?

আমি একেবারেই ওই স্কুলের নই যে টক্কর দিতে অভিনয় করব। ‘মেরে বেরিয়ে যাব’, এমন একটা মনোভাব থাকবে, এটা নয়। এই যে ‘বসু পরিবার’-এ এত চরিত্র রয়েছে। কিন্তু দর্শক এত নামী অভিনেতাদের মাঝেও আমার কাজ পছন্দ করেছেন। কী ভাবে সুদীপ্তা আউটশাইন করে গেলেন, বলছেন সবাই। সেটা করার আমার কোনও ইনটেনশন ছিল না, বা থাকে না। সুমন ঘোষ (‘বসু পরিবার’-এর পরিচালক) বলছেন, আমি ভাবতেই পারিনি তোমার রোলটা নিয়ে এত কথা হবে। আমিও এক্সপেক্ট করিনি। কারণ এটা সৌমিত্র-অপর্ণা নিয়ে কথা হওয়ার কথা। তার পর তার ছেলেমেয়ে। সেখান থেকে ‘পম্পি’ (‘বসু পরিবার’-এ সুদীপ্তার চরিত্রের নাম)-কে নিয়ে এত কথা। কিন্তু এখানে ‘ইলা’ যত ক্ষণ আছে সিনে, তত ক্ষণ ওর দিকেই চোখ থাকবে।

আরও পড়ুন, ইন্ডাস্ট্রিতে সকলকেই কাজের জন্য বলি, কিন্তু…

তা হলে তো অনস্ক্রিন অভিনয়ের লড়াই হয়েইছে?

এটা ঠিক লড়াই নয়। চিত্রনাট্যকার এমন ভাবে ‘ইলা’ চরিত্রটা তৈরি করেছেন, যে-ই অভিনয় করুক না কেন, আলোচনা হবেই। ‘ইলা’ কিন্তু শুরু থেকে শেষ, সারা ক্ষণ নেই। ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ দুই ভাইয়ের গল্প। কিন্তু ‘ইলা’ যত ক্ষণ থাকবে, চোখ ফেরানো মুশকিল। চরিত্রটাই ও ভাবে তৈরি। আমাকে খুব বেশি কিছু করতে হয়নি। অনেস্টলি বলছি। এত সুন্দর সংলাপ, কথোপকথন। শুটিংয়ে আমি যে ক’দিন ছিলাম, কৌশিকদাকে বলে গিয়েছি, মনে হচ্ছে ঋতুদার স্ক্রিপ্টে কাজ করছি। কিন্তু স্ক্রিপ্ট ঋতুদার নয়। কৌশিকদার লেখা। বাড়িটাতেও মনে হয়েছিল ঋতুদার ছবির শুটিং করছি। ছবির গতিটা এত সহজ…। আর ঋত্বিককে সবাই ন্যাচারাল অ্যাক্টর বলে। আমাকেও তাই বলে। কিন্তু গিয়ে প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়ের ন্যাচারাল অ্যাক্টিংটা দেখুন। মাই গুডনেস। সবাই শেষ (হাসি)। পাশে দাঁড়ানোই যাচ্ছে না। এত সুন্দর দেখাচ্ছে। লোকটা ভিতর থেকে গ্ল্যামারাস তো, সাদা চিকনের কুর্তা-পাজামা পরে ছেড়ে দিন। উফ…!


‘জ্যেষ্ঠপুত্র’-এ প্রসেনজিত্ এবং সুদীপ্তা।

প্রসেনজিৎকে আলাদা করে দেখবেন সকলে, তাই তো?

অফকোর্স। আর ওই চোখ! আমার জীবনে বুম্বাদার সঙ্গে প্রথম অভিনয় করতে গিয়ে, সেটা টেলিভিশনের জন্য, ওই চোখের দিকে তাকিয়ে ডায়লগ ভুলে গিয়েছিলাম। পরে বুম্বাদাকে বলেছিলামও সে কথা। আমার হিরো ছিল। এই রকম চোখ! এ কি মানুষের চোখ! যখনই কোনও ইমোশনাল ইনটেন্স সিন করতে হয়, বুম্বাদার চোখের দিকে তাকালে…শেষ! মহিলারা কী ভাবে বেঁচে থাকে আমি জানি না (হাসি)। অবিশ্বাস্য চোখ! চোখ দিয়েই অর্ধেক কথা বলে দেয়। যত দিন যাচ্ছে ওটা আরও রপ্ত করছে। শুরুর দিকে বুম্বাদার চোখের ওই ভাষা ছিল না, অনেস্টলি। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে চোখের ভাষা আরও পরিণত হচ্ছে। অ্যাজ অ্যান অ্যাক্টর আমি চোখ দিয়ে অভিনয় করতে পছন্দ করি। ফলে বুম্বাদার চোখের অভিনয় খুব এনজয় করি। চোখ দিয়ে সব কথা বলে দেয়…। এখানের যে জ্যেষ্ঠপুত্র, সে এক জন সুপারস্টার। বিখ্যাত মানুষ। এই রোলটা বুম্বাদা ছাড়া আর কেউ করতে পারত না।

আরও পড়ুন, ‘আমি ভাগ্যবান #মিটু ফেস করিনি, কিন্তু কেন ভাগ্যবান বলব বলুন তো?’

‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ নিয়ে প্রতিম ডি গুপ্তর দাবি, সে সংক্রান্ত বিতর্ক— আপনি কী বলবেন?

আমি কাগজ পড়ে ব্যাপারটা জেনেছি। তার পর প্রতিমের ফেসবুক পোস্ট দেখেছি। এটা যদি হয়ে থাকে তা হলে খুবই আনফেয়ার। কৌশিকদার সঙ্গে দেখা হলে জিজ্ঞেস করব। তবে প্রতিমও তো আমাদের ইন্ডাস্ট্রিরই অংশ। ভাল কিছু ছবি বানিয়েছে। প্রমিসিং। ফিল্ম জার্নালিস্ট হিসেবেও নাম করেছিল এক সময়। ও যদি অপমানিত বোধ করে, সেটা শুনে আমার খারাপ লাগছে। কৌশিকদা, বুম্বাদা যখন আছেন বিষয়টা নিশ্চয়ই সলভও হবে।

এপ্রিলেই দুটো ছবি হল আপনার। আর কী কী আসছে?

কোনও ছবি নেই আর। আমি বেকার। কারও কাছে পার্ট আছে? (হাসি)

লিখব এটা?

হ্যাঁ, লিখবেন।


রিয়েল এবং রিল লাইফ যখন এক হয়ে যায়...।

সত্যিই রেডি নেই আর কোনও ছবি?

রানাদা-সুদেষ্ণাদির ‘সামসারা’ করলাম। জুলাই-অগস্টে রিলিজ বোধহয়। অতনুদার ‘বাহাত্তর ঘণ্টা’ কবে রিলিজ জানি না। দেবারতির ‘অনেক দিনের পরে’ তো ডিজিটালি রিলিজ হবে। কিন্তু থিয়েটার রিলিজের জন্যই বানানো হয়েছিল।

প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কোনও না কোনও বাংলা ছবি রিলিজ করছে। কিন্তু ব্যবসা কতটা হচ্ছে?

হিউজ প্রফিট কেউ করতে পারছে বলে তো শুনিনি। আসলে পুরো সিস্টেমটাই তো গন্ডগোলের হয়ে আছে। প্রথম সপ্তাহেই পারফর্ম করতে না পারলে তো অর্ধেক হল থেকেই তুলে দেবে ছবি। ফলে এই সিস্টেমটাই তো গন্ডগোলের।

আরও পড়ুন, ‘আর কী করলে আমাকে অন্য চরিত্রেও ভাববে, জানি না’

প্রোমোশন স্ট্র্যাটেজি কি নতুন করে ভাবার দরকার?

সিনেমা হলে, টেলিভিশনে ছবির ট্রেলার দেখানো হয় না এখন। কারণ সেটাতে যা খরচ সেটা প্রযোজকরা করতে চান না। মানুষকে সিনেমা হলে ট্রেলার দেখিয়ে ওই ফিলটা দেওয়া উচিত। সেটা কিন্তু মোবাইলে হয় না। প্রোমোশন স্ট্র্যাটেজিতে সমস্যা আছে তো বটেই।

(সেলেব্রিটি ইন্টারভিউ, সেলেব্রিটিদের লাভস্টোরি, তারকাদের বিয়ে, তারকাদের জন্মদিন থেকে স্টার কিডসদের খবর - সমস্ত সেলেব্রিটি গসিপ পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদন বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE