Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মুভি রিভিউ শকুন্তলা দেবী: ‘স্বাভাবিকতা’-কেই প্রশ্ন করছে এই ছবি

কতটা ত্যাগ করলে আদর্শ মা বলা যায়?

শকুন্তলা দেবীর ভূমিকায় বিদ্যা বালন।

শকুন্তলা দেবীর ভূমিকায় বিদ্যা বালন।

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ ২১:০১
Share: Save:

অভিনয়: বিদ্যা বালন, যিশু সেনগুপ্ত,সান্যা মলহোত্র, অমিত সাধ প্রমুখ

পরিচালনা: অনু মেনন


কতটা ত্যাগ করলে আদর্শ মা বলা যায়?

মাতৃত্বের সংজ্ঞায় নিজে ভাল থাকার কথা রয়েছে কোথাও? নিজের মতো বাঁচা?নিজের ইচ্ছের কথা বলা? পরিবারের আগে নিজের পছন্দের কথা ভাবা?প্রশ্ন করতে শেখা? মেয়েকে প্রশ্ন করতে শেখানো?

উপরের সব ক’টি প্রশ্নের উত্তর ‘না’ হলে ছবিটি দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা কষিয়ে থাপ্পড়ের অনুভূতি তৈরি হতে পারে। কথা বাড়ানোর আগে, সমাজকে সাবধানকরা কর্তব্যের মধ্যে পড়ল। মানব কম্পিউটারের জীবন নিয়ে ছবি তৈরি হচ্ছে, সকলেই জানতেন। বিদ্যা বালন তার নাম ভূমিকায়, ফলে ছবিটি নিয়ে উত্তেজনা ছিলই। তবে শকুন্তলাদেবীর গণিতের এখানে কতটা স্থান, আর এক জন স্বনির্ভর মায়ের জায়গা কতটা, তা এ ছবি না দেখা পর্যন্ত মন্তব্য ‌না করাই ভাল। তবে এ কথা বলে দেওয়া যাক, এটি নিছক বায়োপিক নয়। আর তা নয় বলেই অস্বস্তি হতে পারে। কতটা জোরে থাপ্পড়টি গালে এসে পড়ছে, তার গতিবেগ গণনা করার ক্ষমতা শকুন্তলা দেবীর মতো সকলের থাকে না। নেইও। ফলে উপরের সতর্কবার্তায় গুরুত্ব দেওয়া ভাল।যদি একটা বড় সময় জুড়ে কেন্দ্রীয় চরিত্রকে মনের মতো না লাগে, তবে নিজেকে প্রশ্ন করা যায়। কেন লাগছে না, ভেবে দেখা যায়। সে সবের সময় ‘শকুন্তলাদেবী’ দেবে। এক অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন গণিতজ্ঞ যখন নারী, তাঁর জীবনে স্বাভাবিক ভাবেই নানা ভাব ও রসের সংমিশ্রণ হবে।

অনু মেননের ‘শকুন্তলা দেবী’ আশার আলো দেখায়

এত বড় মন্তব্যটি যখন করা হল, তখন পড়তে গিয়ে মনে প্রশ্ন উঠল না কিছু? যদি না ওঠে, তবে ভাবুন। কেন উঠল না? কেন ধরে নেওয়া হল যে তাঁর জীবন সমান্তরাল হবে না? সেটাই স্বাভাবিক, তাই না? সেই স্বাভাবিকতাকে প্রশ্ন করছে এই ছবি। কোনটা অস্বাভাবিক, কোনটা স্বাভাবিক? আদৌ স্বাভাবিক বলে কিছু হয় কি?

নারীবাদীরা নানা লেখায়, গানে, বক্তৃতায় কত বার এ প্রশ্ন করেছেন। বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, সকল নারীর এক রকম স্বভাব হয় না। ফলে নারীর ব্যবহারেও স্বাভাবিক বলে কিছু হওয়ার কথা নয়। তবে সমাজ বোঝে না। বলিউডের মূল ধারারছবি একই কথা বললে, সকলের মগজ পর্যন্ত না হোক, অন্তত বসার ঘর অবধি তো তা পৌঁছয়। ফলে অনু মেননের ‘শকুন্তলা দেবী’ আশার আলো দেখায়। ইতিমধ্যেঅ্যামাজন প্রাইমে চলা তাঁর ওয়েব সিরিজ ‘ফোর মোর শটস্ প্লিজ’ যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন তুলেছে আধুনিক মহিলাদের স্বভাব নিয়ে। সেইওটিটি প্ল্যাটফর্মেই মুক্তি পাওয়া, বিশ্ববিখ্যাতস্বনামধন্যা গণিতজ্ঞনারীর জীবনী নিয়ে ছবি বানিয়ে সে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হলেনপরিচালক। এমন সুন্দর সঙ্গীত, সাজপোশাকের ব্যবহারে যে এত কঠিন সত্য, এতসহজে বলে ফেলা যায়, তা দেখিয়ে দিলেন।

মেয়ে অনুপমার ভূমিকায় সান্যা মলহোত্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন থেকে, স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের নানা ভাঁজ— স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বিদ্যা। শকুন্তলাদেবীর প্রাণবন্ত চরিত্র আরও প্রাণ পেয়েছে যেন বিদ্যার নির্মল হাসিতে। সঙ্গে কস্টিউমও মানিয়েছে বেশ। কিছু কিছু জায়গায় ছবির শকুন্তলা দেবীর সাজপোশাক এক জন গণিতজ্ঞের তুলনায় খানিক আলাদা বলে মনে হতেই পারে। তবে সবরকম ভাবে জীবনকে উপভোগ করার প্রাণশক্তি যে গণিতজ্ঞের মধ্যে ছিল, তিনি একটুবেশি ফ্যাশনেবল সাজলে বেমানান ঠিক বলা যায় না।

ছবিটির একমাত্র খুঁত যা না বললেই নয়, তা হল গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা

শকুন্তলা দেবীর স্বামী পরিতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রে যিশু সেনগুপ্ত পরিশীলিত অভিনয় করেছেন। প্রাপ্তবয়স্ক অনুপমার ভূমিকায় ভিতরের সব অস্বস্তি ও আবেগও তেমনই যত্নের সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে সান্যার অভিনয়ে। স্ক্রিনে স্বল্প সময় থাকলেও অমিতের অভিনয়ও চোখে পড়ার মতো।

ছবিটির একমাত্র খুঁত যা না বললেই নয়, তা হল গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা। হাজারহোক জীবনী তো! ছবি যে ভাবে এগিয়েছে, মনে হতেই পারে এ যেন উইকিপিডিয়ারপাতা থেকে প্রতিটি ঘটনা মিলিয়ে মিলিয়ে তোলা। যেন সেখানে যা আছে, সবদেখিয়ে দিতে হবে। ফলে বড্ড দ্রুত গতিতে, এক-একসময়ে এগিয়েছে গল্প। আবারআর এক দিকে যা ইন্টারনেটের পাতায় ধরা নেই, সেগুলো দেখতে দেখতে কখনও ধাক্কা লাগে। তাঁর মনের ভাব, অন্তরের সংগ্রাম, সন্তানের সঙ্গেমনোমালিন্য— এত সহজে কি জীবনের প্রতিটি মাইলফলক সিনেমার ফ্রেমে যুক্ত করা যায়?
গণিতজ্ঞের জীবন বলেই এ ভাবে অঙ্ক মিলিয়ে গল্প বলার দরকার ছিল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Movie review Bollywood Sakuntala devi Vidya Balan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE