২০২৫ নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে কেটেছে। তবে অনেকেরই জীবন বদলে দিয়েছে এই বছর। ঘুম থেকে ওঠা বা ঘুমোতে যাওয়ার সময়ে এসেছে আমূল পরিবর্তন। কারও আবার হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে অনেকটা ধৈর্য। কারণ তাঁদের জীবনে হয়েছে খুদেদের আগমন। ২০২৫ সালে মাতৃত্বের অনুভূতি পেয়েছেন, টলিপাড়ার এমন তারকাদের কী অনুভূতি এই বছরকে বিদায় জানানোর আগে? নতুন বছরে সন্তানদের নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনাই বা কী? খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডট কম।
দেখতে দেখতে ছ’মাস বয়স হয়ে গিয়েছে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও পিয়া চক্রবর্তীর পুত্র নিষাদের। তাই বিদায় জানানোর আগে ২০২৫ সালকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চান পিয়া। নতুন মায়ের কথায়, “আমাদের জীবনের সেরা উপহারটি ২০২৫ দিয়েছে। সেই উপহারের বয়স সাড়ে ছ’মাস পেরিয়ে গিয়েছে। সে এখন হাত-পা ছুড়ে লুটোপুটি খেয়ে হামাগুড়ি দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত। সারা পৃথিবী হয়তো নানা রকম দুর্ঘটনা, দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। তাই নতুন বছরে শান্তি বজায় থাকুক এটুকু চাইব।” নিষাদের জন্মের পরে জীবনযাপনে বেশ কিছু বদল এসেছে। নিয়মের হেরফেরও হয়েছে। এর মধ্যেই খুদেকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি নতুন বছরে দুটো নতুন বিষয় শিখতে চান মনোবিদ তথা সমাজকর্মী। পিয়ার কথায়, “আমি সাঁতার ও গাড়ি চালানো শিখতে চাই নতুন বছরে। নডিকে (নিষাদের ডাকনাম) নিয়ে বেশ কিছু জায়গায় ঘুরতে যেতে চাই। আর এই সময়টা আমি ওর বড় হয়ে ওঠার সফরে মন দিতে চাই। সবাই বলে, এই সময়টা খুব দ্রুত কেটে যায়। তাই এই সময়টার ছোট ছোট মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই।” নডির জন্মের পরে সবচেয়ে বড় বদল এসেছে ‘স্লিপ-সাইকেল’-এ। তা ছাড়া জীবনের সমস্ত সিদ্ধান্ত ও কাজের কেন্দ্রে এখন একরত্তি। পিয়ার স্বীকারোক্তি, “এখন সবটাই ওকে ঘিরে। এখন আমি সকালে অনেকটা আগে ঘুম থেকে উঠে পড়ি। সকালের দিকে ওর মেজাজ সবচেয়ে ভাল থাকে। ওই সময়টায় ওর এনার্জিও থাকে অনেক বেশি। তাই অফিস যাওয়ার আগে যাতে ওর সঙ্গে সময় কাটাতে পারি, সেই চেষ্টা করি। সকালে নডির সঙ্গে আমি ও পরম দু’জনেই গানবাজনা করি। নডিও গান শুনতে খুব ভালবাসে।”
সন্তানের বয়স এখন ১০ মাস। এখন জীবনের ‘ম্যাজিক পার্সন’ যেন কন্যা তিষ্যা। জীবন এমনও হতে পারে, আগে কল্পনা করেননি ছোটপর্দার অভিনেত্রী অনিন্দিতা রায়চৌধুরী। অভিনেত্রীর কথায়, “এই বছরটা সত্যিই আমার ও সুদীপের জীবনে খুবই স্পেশাল। এই ভাবে তো কখনও জীবনকে ভাবতেই পারিনি। তিষ্যা আমাদের সকলকে সব সময়ে মাতিয়ে রাখে। ওইটুকু একটা বাচ্চা নানা কিছু করে আমাদের ভাল রাখার চেষ্টা করে চলেছে, যেটা আমরা খুব উপভোগ করি।” বিশ্বের নানা প্রান্তে নানা রকমের নেতিবাচকতা, নিরাপত্তাহীনতা, হিংসার খবর উঠে আসে। এই পরিবেশে শিশুকে বড় করে তোলা এই প্রজন্মের বাবা-মায়েদের কাছে যেন বড় একটা দায়িত্ব। এই প্রসঙ্গে অনিন্দিতা বলেন, “এই বছরের শুরুটায় অনেক উদ্বেগ, উত্তেজনা ছিল। তখন তিষ্যা গর্ভে। নতুন বছরের জন্য কখনও কোনও প্রতিজ্ঞা করি না। নিজের প্রতি আস্থা রেখে যে ভাবে এগোনো যায়, সেই ভাবেই যেন এগোতে পারি, সেই চেষ্টা করি। যে মানুষটাকে পৃথিবীতে এনেছি, তার যেন দায়িত্ব পালন করতে পারি। ও যেন আমাদের এমন ভাবে দেখে, যাতে বড় হয়ে ও একটা ভাল মানুষ হতে পারে। তবে জানি না, দশ বছর পরে আমরা ঠিক কোথায় দাঁড়াব। ভয় হয় এই সব ভেবে। তবে আমরাও তো করোনা অতিমারির এবং আরও খারাপ পরিস্থিতি পার করেছি। বাবা-মা সেই ভাবেই বড় করেছিলেন। আমরাও চেষ্টা করব সন্তানকে সেই ভাবে বড় করার। সে যেন কখনও কোনও পরিস্থিতিতে হাল না ছাড়ে, সেই শিক্ষাটা দিতেই হবে।”
২০২৫ সাল বড় চমক দিয়েছে অহনা দত্তকে। ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র অভিনেত্রীও নতুন মা হয়েছেন। বছরের শুরুটাও চমক দিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর। অহনা বলেন, “বছরটা শুরু হয়েছিল সারপ্রাইজ়ের সঙ্গে। জুলাইতে ও এল আমার কোলে। তাই বছরটা শেষও হচ্ছে সেই সারপ্রাইজ়ের রেশ রেখেই। নিঃসন্দেহে ২০২৫ আমার জীবনের অন্যতম সেরা বছর হয়ে থাকল। মা হিসাবে আমার পথচলা শুরু হল। তবে আমি এই খবরটা প্রথম জানতে পেরে খুব ভয় পেয়েছিলাম। এখন সেই ভয় কাটিয়ে উঠিয়েছি।” কন্যা মীরার সঙ্গে নানা ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নেন অহনা। এখন একরত্তির আরও একটু বড় হওয়ার অপেক্ষায় তিনি। “ও আর একটু বড় হয়ে গেলেই ২০২৬-এ অনেক জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাব। পুথিগত বিদ্যার চেয়েও নানা জায়গায় বেড়িয়ে বাচ্চারা বেশি আনন্দ পায় এবং নানা কিছু শিখতে পারে। চারপাশ দেখে যেন ও শিখতে পারে এবং আমরা যেন ওকে ওই পরিবেশটা দিতে পারি, সেটাই চাইব”, বলেন অহনা। নিজের সন্তানকে তিনি রোজ নতুন করে চিনছেন। গান শুনলে একরত্তি আনন্দ পায়, লক্ষ করেছেন অভিনেত্রী। তবে আরও বেশি করে বুঝেছেন, কন্যা বেশ দুষ্টু হয়েছে। অভিনেত্রীর কথায়, “সব সময় দেখি দাদুর চশমা ধরে টানাটানি করে। এমন নানা দুষ্টুমি ওর লেগেই থাকে। ওকে যেটা নিষেধ করা হয়, সেটাই বেশি করে ও করে। ফাজলামিও শিখেছে খুব।”
২০২৫ সালে মাতৃত্বের সফর শুরু করেছেন টলিপাড়ার এই নতুন মায়েরা। জীবন বদলে দেওয়া এই বছরকে বিদায় জানাতে গিয়ে তাই সামান্য মনখারাপ হলেও, আগামীর আশায় তাঁরাও প্রতীক্ষায়। নতুন বছরগুলোয় সন্তানের বড় হয়ে ওঠার প্রতি মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে থাকতে চান তাঁরা প্রত্যেকেই।