ফের টলিউড পরিচালকদের পাশে কলকাতা হাই কোর্ট। টালিগঞ্জের পরিচালক বনাম ফেডারেশনের কাজিয়া নিয়ে মামলার আরও এক দফা শুনানি ছিল সোমবার। এ দিন এক নির্দেশে বিচারপতি অমৃতা সিংহ ফের জানিয়ে দেন, টলিউডে কেউ স্বাধীন ভাবে কাজ করতে চাইলে বাধা দেওয়া যাবে না। কারও জীবিকা, ব্যবসা বন্ধ করার অধিকার কোনও সংগঠনের নেই। এটা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিবকে। তার পরেও সমাধান না মিললে বা কোনও সমস্যায় পড়লে স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিতে পারবেন পরিচালকেরা।
এ ব্যাপারে আনন্দবাজার ডট কমের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার (ডিএইআই) সম্পাদক সুদেষ্ণা রায়ের সঙ্গে। তিনি আদালতের এই নির্দেশকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি দাবি করেছেন, রাজ্যের আইন-আদালতের উপরে তাঁর আস্থা রয়েছে। এই প্রসঙ্গে মতামত জানতে চেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গেও। তিনি যথারীতি ফোনে সাড়া দেননি।
বিষয়টি নিয়ে সবিস্তার বলতে গিয়ে পরিচালক আরও বলেন, “বিকেলে অর্ডার বেরোবে। রাজ্যের উচ্চ আদালত পরিচালকদের স্বার্থরক্ষার্থে আর কী কী নির্দেশ দিয়েছে সে সব আরও বিশদে থাকবে। তবে এ টুকু বলতে পারি, শুরু থেকেই হাই কোর্ট আমাদের পক্ষেই কথা বলে আসছে। তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের সচিবকে যুক্ত করার অর্থ, এ বার রাজ্য সরকারও পুরো বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত থাকবে, যা আমার কাছে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আগামী দিনে সংশ্লিষ্ট দফতরকে সমাধান সূত্র খুঁজতে হবে। দরকারে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।” এতেও সমস্যার সমাধান না হলে শেষ অস্ত্র প্রশাসন। পরিচালকেরা সব দিক থেকে ব্যর্থ হলে তখনই পুলিশি সহায়তা নিতে পারবেন।
সুদেষ্ণা আরও জানান, ১৬ জুন পরবর্তী শুনানি। সে দিন এক যোগে ১৫ জন পরিচালকের মামলার চূড়ান্ত ফয়সালা হবে। দীর্ঘদিন ধরেই পরিচালক গিল্ডের অভিযোগ, ফেডারেশনের অকারণ হস্তক্ষেপ তাঁদের কাজ করার স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে। গত বছর সেই কাজিয়া তুঙ্গে ওঠে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে। রাহুল বাংলাদেশের ওয়েব প্ল্যাটফর্মের হয়ে সিরিজ় পরিচালনা করেন। তিনি কলকাতার পাশাপাশি ও পার বাংলায় গিয়েও পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছিলেন। তাঁকে পরিচালক গিল্ড সমর্থন জানালে দ্বন্দ্ব জোরালো হয়। দফায় দফায় সেই বিরোধ বছরশেষে সাময়িক মিটেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে।
আরও পড়ুন:
কিন্তু তা যে সাময়িক, তা বোঝা গিয়েছিল চলতি বছরের শুরুতেই। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, শ্রীজিৎ রায়, সুদেষ্ণা রায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য-সহ যাঁরাই ফেডারেশনের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন তাঁদের কাজ বন্ধ হয়ে যায় অজানা কারণে। এঁদের আগে একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল পরিচালক বিদুলা ভট্টাচার্যের। বাকি পরিচালকেরা যখন দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তখনই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন বিদুলা। অভিযোগ জানিয়ে মামলা দায়ের করেন। এর পরেই একে একে পরিচালক সুব্রত সেন, সুদেষ্ণা রায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য-সহ মোট ১৫ জন পরিচালক বিদুলাকে সমর্থন করেন। একযোগে মামলাও করেন উচ্চ আদালতে।
রাজ্যের উচ্চ আদালত এ বার কি পরিচালকদের এত দিনের দাবি পূর্ণ করতে পারবে? পরিচালকেরা সেই আশায় আপাতত চূড়ান্ত শুনানির দিকে তাকিয়ে।