টলিউডে সম্ভবত এমন কেউ নেই, যিনি কটাক্ষের শিকার নন। কারও চেহারা তো কারও গায়ের রং— কটাক্ষের কারণ। অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বিশেষে এই ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য শুনে অভ্যস্ত। এ বার চেহারা নিয়ে কটাক্ষের জেরে জেরবার ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়।
ওড়িশি নৃত্যশিল্পী এবং ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী ডোনা সরকারি অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন। তাঁর নৃত্য প্রতিষ্ঠান ‘দীক্ষামঞ্জরী’ যেমন দুর্গাপুজোর পর রেড রোড কার্নিভালে যোগ দেয়, তেমনই কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন এবং সমাপ্তি অনুষ্ঠানেও থাকে। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন স্বয়ং ডোনা। অনুষ্ঠান শেষ। কটাক্ষের সেখান থেকেই শুরু।
এত ভারী চেহারা নিয়ে কী করে সরকারি বড় বড় অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন? সমাজমাধ্যম ছয়লাপ এই ধরনের মন্তব্যে। অনেকে সৌরভ-পত্নী হওয়ার সুবিধাকে কাজে লাগানোর কথাও উল্লেখ করেছেন। সব মিলিয়ে গত দু’তিন ধরে সমাজমাধ্যমে চোখ রাখা দায়! অনেক অশ্লীল মন্তব্যও ধেয়ে এসেছে তাঁর দিকে। পরিবর্তে ডোনা কী করেছেন? তিতিবিরক্ত নৃত্যশিল্পী প্রশাসনে অভিযোগ জানিয়েছেন। যদিও তাঁর কটাক্ষের শিকার হওয়া নতুন নয়। এর আগে আরজি কর-কাণ্ড-সহ নানা কারণে একাধিক বার এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে।
এ বার কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে? তাই তিনি প্রশাসনের দ্বারস্থ?
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, ডোনার অভিযোগের আঙুল একটি বিশেষ সমাজমাধ্যমের দিকে। ওই নির্দিষ্ট সমাজমাধ্যম থেকে তাঁর লাগাতার ‘বডি শেমিং’ করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁকে উদ্দেশ করে অশালীন মন্তব্যও করা হয়েছে। যা তাঁর খ্যাতি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে । বিষয়টি নিয়ে কী বলছেন টলিউডের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বরা?
চেহারা ভারী হওয়ার কারণে সারা ক্ষণ কটাক্ষের শিকার অভিনেত্রী অরিজিতা মুখোপাধ্যায়। একই ভাবে গায়ের রঙের জন্য লাগাতার কটাক্ষ শুনতে হয় শ্রুতি দাসকে। আবার কারণ ছাড়াই কুমন্তব্যে নাজেহাল সুদীপা চট্টোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র। এঁরা প্রত্যেকেই কিন্তু দায়ী করেছেন সমাজে বাড়তে থাকা হতাশা, রাগ, অবসাদ, ঘৃণা, না-পাওয়ার যন্ত্রণাকে। শ্রুতি যেমন বলেছেন, “আমিও থানা-পুলিশ করেছি। মামলা লড়েছি। সেই মামলা দু’বছর পর্যন্ত গড়িয়েছে। এখন এড়িয়ে চলতে শিখে গিয়েছি।” অরিজিতাও সমর্থন করেছেন, ডোনার প্রশাসনের কাছে যাওয়াকে। পাশাপাশি এ-ও দাবি করেছেন, “সব কিছু গায়ে মাখতে নেই। ছবির বিশেষ প্রদর্শনীতে আমার ক্লিভেজ দেখা গেলে সমাজমাধ্যমে কটূক্তির ঝড় বয়ে যায়। আমি গায়ে মাখি না।”
তা হলে কি প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়া অন্যায়? সেটাও বলছেন না কেউ। তবে সঙ্ঘশ্রী সিংহ মিত্রের মতে, ডোনার মতো সকলে এই সুবিধা না-ও পেতে পারেন। সমাজের একেবারে সাধারণ মানুষদের কথা প্রশাসনও শোনে না। তাঁদের নিজের সমস্যা নিজেদেরই মেটাতে হয়। শ্রীলেখা যেমন আগে কটাক্ষে হাবুডুবু খেতে খেতে প্রতিক্রিয়া জানাতেন। “এখন আমার হয়ে অনেকে প্রতিবাদ জানান। আমি চুপ করে গিয়েছি।”
আরও পড়ুন:
শ্রুতি আর অরিজিতার মতে, “আমরা তাই দেখি, কোন শ্রেণি আমাদের আক্রমণ করছেন। খেয়াল করে দেখেছি, যে সব মহিলার জীবনে হতাশা আর ব্যর্থতায় ঢাকা, তাঁরাই আমাদের আক্রমণ করেন। শুধু আমাদের নয়, যে সব মহিলারা নিজের পরিচয়ে পরিচিত, তাঁদের উপরেই যেন জাতক্রোধ!” একই কথা সুদীপারও। তিনি বলেছেন, “এঁরা হতাশা উগরে দেওয়ার জায়গা পান না। তাই আমাদের নিশানা বানান। যেনতেনপ্রকারেণ আমাদের উপরে রাগ ফলিয়ে যেন নিজেদের গায়ের জ্বালা মেটান!” এঁরা তিন জনেই বলেছেন, “মহিলা খ্যাতনামী মানেই যেন নিশানার বস্তু। কারণ, বাকিরা ব্যর্থ। ডোনাও সেই তালিকায় পড়েন। তিনি জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী। আবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী। বাকিরা এত কিছু থেকে বঞ্চিত।”
প্রত্যেকের ক্ষোভ, খ্যাতনামীদের কটাক্ষ করা যেন ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সমাজমাধ্যম যেন কলপাড়! সেখানে অবিরাম কটূক্তির বন্যা। এখনও এর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না করলে আগামী দিনে আরও খারাপ দিন দেখতে হবে সমাজকে।