Advertisement
E-Paper

আমিরের রিং টোনে ‘তু সফর মেরা...’

কী ভাবে তৈরি হল ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-য়ের গান? মুম্বই থেকে প্রীতম বললেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়-কেরণবীরের জন্মদিন। ‘জগ্গা জাসুস’-য়ের সেটে এতটাই ব্যস্ত যে আলাদা করে আর পার্টি করারই টাইম নেই ওর।

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০

রণবীরের জন্মদিন।

‘জগ্গা জাসুস’-য়ের সেটে এতটাই ব্যস্ত যে আলাদা করে আর পার্টি করারই টাইম নেই ওর। জন্মদিনে কী নিয়ে যাব ভাবতে ভাবতে রণবীরকে ‘চান্না মেরেয়া’র ফাইনাল মিক্সিং শোনাই। তখন ও কিছু বলেনি। সে দিন অর্জুন কপূর, আদিত্য রায় কপূরের সঙ্গে আবার ক্যাটরিনাও ছিল। দারুণ হুল্লোড়ের পর যখন মধ্যরাতে বাড়ি ফিরলাম দেখি রণবীরের পাঁচটা টেক্সট। ‘চান্না মেরেয়া’ মেড মি ক্রাই!” গানটা নাকি ওকে পাগল করে দিয়েছিল।

সেই ‘রকস্টার’ থেকে দেখছি একটা চরিত্র করতে গিয়ে কী অসম্ভব পরিশ্রম করে ও। ‘রকস্টার’-এ গিটার বাজাতে শিখল, আবার ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এ গায়কের চরিত্রের মতো মানুষকে খুঁজে বের করে, তার সঙ্গে মিশে গিয়ে অভিনয় করেছে ও।

‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এর গান এত সুপারডুপার হিট হবে আশা করিনি। কর্ণ যে দিন ফোন করে ওর অফিসে আসতে বলল সে দিন একটু ঘাব়়ড়েই গিয়েছিলাম। কর্ণ শুধু যে বিশাল মাপের পরিচালক তাই নয়, ওর ছবিতে মিউজিক একটা বড় জায়গা জুড়ে আছে। স্ক্রিপ্টটা ওর অফিসে বসে শোনার পর মনে হচ্ছিল এই ছবির গান নিয়ে প্রচুর খাটতে হবে। কর্ণের হয়তো গান পছন্দ হবে না , ও অনেক বার লেখাবে। এ রকম আশঙ্কা নিয়েই আমি আর অমিতাভ ভট্টাচার্য (‘অ্যায় দিল’-য়ের গানগুলো যার লেখা) তিনটে গানের মোটামুটি একটা খসড়া করে কর্ণকে শোনাতে গিয়েছিলাম। ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’, ‘বুলেয়া’, ‘চান্না মেরেয়া’। কর্ণ শুনে তখনই তিনটে গান ওকে করে দিল।

বরুণ ধবন বলল গানটা আমায় দাও

আমি তো অবাক! এত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি, এই প্রথম একবারে তিনটে গান আমার ওকে হয়ে গেল! ভাবতেই পারছিলাম না। এই যে ‘দঙ্গল’য়ের ট্রেলর লঞ্চ হল, আমির তো গান তৈরির সময় নিজে থেকে ওর পঞ্চগনির বাংলোয় আমাদের নিয়ে রেখেছিল। আমির দেখলাম ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ গানটা শুনে পাগল হয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে টুইট করেছে। আমিরের রিং টোনে ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ — এটাই আমার পাওয়া। আর বরুণ (ধবন) তো বলেছে ছবি রিলিজের পর ওই গানটা ওকে দিয়ে দিতে। মহেশ ভট্ট জীবনে আমায় ফোন করেননি। তিনিও ফোন করেছেন ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’য়ের জন্য...দেখলাম কর্ণ-র সঙ্গে কাজ করা খুব সহজ! রণবীরের শট হোক, অনুষ্কার নাচ বা ঐশ্বর্যা-রণবীরের অন্তরঙ্গ শ্যুট — কোনও বিষয় নিয়ে ও খুব বেশি ধানাই পানাই করে না। ওর সঙ্গে কাজ করতে করতে বুঝলাম যে গান বা সুর যা অনায়াসে চলে আসে, প্রথম লেখা হয়, সেটাকেই অ্যাকসেপ্ট করা উচিত। সেটা এত ন্যাচরাল বলেই বোধহয় হিট। সিম্পল টিউন লোককে ছুঁয়ে যায়। নইলে ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এর সব ক’টা গান কী করে লক্ষ লক্ষ লাইক পেয়ে গেল? কর্ণ ওর ছবির প্রসঙ্গে বলেছিল, ‘‘পরিবারকে নিয়ে আনন্দের উৎসব দীপাবলি। এই সেলিব্রেশনের মেজাজটা ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-য়ে আছে।’’

ঐশ্বর্যা-রণবীর জুটিকে দেখার জন্য সবাই পাগল

সারেগামাপা-র একটা শো-য়ে ঐশ্বর্যার সঙ্গে দেখা। ওর সঙ্গে আগে কখনও কাজ করিনি। দেখলাম এই সিনেমার গানগুলো নিয়ে ও উচ্ছ্বসিত। বাইরের লোক হিসেবে আমিই প্রথম কর্ণ-র এই ছবিটা পুরোটা দেখেছি। দেখতে দেখতে বুঝলাম ইন্ডাস্ট্রি খুব শিগগিরই এরকম একটা স্টিমি রোম্যান্টিক জুটি পেতে চলেছে। ঐশ্বর্যা আর রণবীরকে ফাটাফাটি লাগছে আর সবচেয়ে নজর কেড়েছে ওদের ন্যাচরাল অ্যাক্টিং। লোকে নতুন জুটির জন্যে পাগল! টুইটার-এ ‘বুলেয়া’ গানটার জন্য লোকে লিখেছে ‘ওয়েট উইল বি মুশকিল’। তবে এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলতে চাই — সোশ্যাল মিডিয়ায় এ রকম একটা চাউর হয়েছে যে, ঐশ্বর্যা আর রণবীরের ইন্টিমেট সিন-এর জন্য অমিতাভ বচ্চন নাকি রেগে আছেন। আমি একমত নই। ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-য়ে যেহেতু কর্ণ জোহরকে এডিট করতে হয়েছে তার সবটাই ছবির দৈর্ঘ্যের কথা ভেবে। কেউ কোথাও বলেনি ঐশ্বর্যা আর রণবীরের ইন্টিমেট সিনগুলো বাদ দিতে হবে।

কর্ণ বলল, ঝটপট প্রেম, চটপট ব্রেক আপ

তবে ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এ ব্রেক আপ সং-য়ের কথা যখন ভাবছি তখন কর্ণ-এর ব্রিফটা খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিল আমার। ও বলেছিল “লোকে যেমন সহজে প্রেমে পড়ে তেমনই ব্রেক আপটাও খুব সহজ। আর সেটা সেলিব্রেট করা যাবে এমন একটা গান বানাও,” অরিজিৎ-কে দিয়ে গানটা রেকর্ড করালেও আমি তার মধ্যে র‌্যাপ-য়ের পার্টটা জুড়ে দিই। আসলে কর্ণ জোহর মানেই সেলিব্রেশন। ওর সঙ্গে কাজ করতে গেলে আগে এক থেকে আধ ঘণ্টা আড্ডা হবে। ও এত হাসাবে, এত হাসাবে...

‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-য়ের ‘বুলেয়া’ রেকর্ড হবে, কর্ণ হাজির। ও ইন্ডাস্ট্রির লোকজনকে নকল করতে শুরু করল। আমি আর অমিতাভ তো হেসেই যাচ্ছি। এমন অবস্থা হল আমি হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে গেলাম। কর্ণ জোহরের মতো এ রকম উইটি মানুষ আমি ইন্ডাস্ট্রিতে আর দেখিনি।

প্রেশার থাকলেও কর্ণ বুঝতে দেয় না

আর যত সমস্যা আসুক, ও কোনও স্ট্রেস বুঝতে দেয় না। ফাওয়াদ খানকে কাস্ট করা নিয়ে কম ঝামেলা পোয়াতে হয়নি। কিন্তু ওর সঙ্গে কথা বললে সেটা বোঝা যায় না। ফাওয়াদ খানকে কাস্ট করার সময় ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক তো ভাল ছিল। এটা তো খুব স্বাভাবিক, আমাদের প্রত্যেকের কাছেই দেশ সবার আগে। এটা নিয়ে অযথা জলঘোলা করা হয়েছে।

আন্ধেরি থেকে বান্দ্রার পথে টাইটেল সং

তবে ও যার কাছ থেকে যা চায়, সেটা বের করে আনতে পারে। হঠাৎ এক দিন অফিসে ডেকে পাঠাল ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এর টাইটল সং-য়ের জন্যে। অমিতাভের তো মাথায় হাত। আন্ধেরি থেকে কর্ণের বান্দ্রা অফিস পর্যন্ত গাড়িতে সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করে গেল অমিতাভ — ‘‘আমার কিছু লেখা রেডি হয়নি। তুমি লিরিকস ছাড়াই প্রেজেন্টেশন করো।’’

অবশেষে ওই পথটুকু যেতে যেতেই লেখা হল সিনেমার টাইটেল সং। আর ওই গানটা লেখার পর এখন দেখছি অমিতাভ আমার চেয়েও বেশি ডাক পাচ্ছে চারদিক থেকে। আমি তো ওকে বলেছি ভেবেচিন্তে একদম গান লিখবি না। হট করে যা চলে আসে সেটাই তোর বেস্ট।

রণবীরের শট দেখে গাইল অরিজিৎ

কর্ণ-র গান তো পছন্দ হল। তবে ও বলেছিল রণবীর যেহেতু ছবিতেও সিঙ্গারের চরিত্র করছে তাই একটা ভয়েসে সব গান থাকবে। ইন্ডাস্ট্রিতে সব ধরনের গান গাইতে পারে এমন পুরুষ কণ্ঠকেই আমি ডেকেছিলাম। তার নাম অরিজিৎ সিংহ। ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এর টাইটেল সংটা ওকে দিয়েই গাওয়ানো হল। তবে সাধারণত রেকর্ডিংয়ের পর গান শ্যুট হয়। কিন্তু এই গানটা রণবীর শ্যুট করার পরে ওর প্রতিটা এক্সপ্রেশন দেখে দেখে অরিজিৎকে গাইতে হয়েছিল। আমার মনে হয় এই কারণে অরিজিতের গাওয়ার প্যাটার্নটা ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’য়ে অনেকটা চেঞ্জ হয়েছে। অরিজিতের আওয়াজটা অন্য রকম এসেছে।

ইন্ডাস্ট্রির নতুন হট জুটি ঐশ্বর্যা-রণবীর

‘বুলেয়া’ রণবীর আর ঐশ্বর্যার কথা ভেবে লেখা গান। ছবিতে ঐশ্বর্যা শায়েরের চরিত্রে। তাই বুলেয়া-তে অমিতাভ শায়েরির মেজাজে শব্দ চয়ন করেছে। আর আমি সুর করতে গিয়ে রণবীরের প্যাশন ধরার চেষ্টা করেছি। দু’জনকে অসম্ভব অ্যাট্রাকটিভ লাগছে।

স্টুডিয়োয় কাজ চলছে, হঠাৎই একদিন অমিতাভ ডান্স সং লিখল—

‘দিল পে পত্থর রাখকে, মুখ পে মেকআপ কর লিয়া, মেরে সাঁইয়াজি সে আজ ম্যায়নে ব্রেকআপ কর লিয়া...’ অমিতাভই কর্ণকে বলেছিল এটা ‘ব্রেকআপ সং’ নাম দেওয়া হোক। ওই গানে টুইস্ট আনার জন্যে আমি বাদশাকে দিয়ে র‌্যাপটা গাওয়ালাম। কর্ণও তাই চেয়েছিল। আর হানি সিংহের পর মুম্বইতে এখন বাদশার ভয়েসটাই বেস্ট। অমিতাভের মতো শয়তান, বিচ্ছু আর একটাও হয় না। মিটিংয়ে চুপ করে বসে থাকে আর দারুণ সব লাইন লিখে সকলকে চমকে দেয়।

আমার সেরা পাঁচে ‘দঙ্গল’

‘দঙ্গল’ নিয়ে এখন খুব কথা হচ্ছে। এ রকম একটা ফিল্ম-য়ের সঙ্গে নিজেকে জড়াতে পেরে গর্ব হয়। ‘দঙ্গল’য়ে গানগুলো কিন্তু ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-য়ের মতো আলাদা করে হিট হবে না। আমি জানি। ছবির মধ্যে ওই গানগুলো মিশে আছে।

তবে সম্পর্ক নিয়ে, আবেগ নিয়ে খেলে বেড়ানো, কাঁদিয়ে দেওয়া, ভালবেসে হারিয়ে দিতে পারার ড্রামা মাস্টার কর্ণকে স্যালুট জানাই হিউম্যান রিলেশনশিপের এত ঝলমলে, মখমলে নাজুক ক্যানভাস আমাদের সকলের সামনে তুলে ধরার জন্য।

aye dil hai mushkil pritam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy