Advertisement
E-Paper

মুভি রিভিউ: ‘বসু পরিবার’-এর অন্দরে গিয়েও চেনা গেল না অনেককেই

সঙ্গীত, আবহ বা সম্পাদনায়ও নতুন কোনও প্রয়োগ চোখে পড়েনি। আর পাঁচটা পারিবারিক ছবির টেমপ্লেটের মতোই লাগে। কেবল, কৌশিক সেন অভিনীত সমকামী চরিত্রটি সাম্প্রতিক সমস্যাকে প্রতিফলিত করে।

দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:৪৮

পরিচালক: সুমন ঘোষ

অভিনয়: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, যিশু সেনগুপ্ত, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌশিক সেন

আজ যখন একা হতে হতে ডিপ্রেশন আর ফ্রাস্টেশন আমাদের নিত্য সঙ্গী, তখন কী ভাবে আমরা আবার আগের মত সুন্দর জীবন ফিরে পাব? আধুনিক দুনিয়ায় এ চিন্তা ভাবাচ্ছে তাবড় ভাবুকদের। উত্তর কিছুটা হলেও দিতে পারে সুমন ঘোষের ছবি ‘বসু পরিবার’। সারা দুনিয়াও যেমন ভেবে চলেছে ফের শেকড়ের দিকে ফেরার কথা, এ ছবিও আসলে সেই ফেরার কথাই বলে। ফেরার পথে নিশ্চয়ই কিছু অতীতের ভুলের মুখোমুখি হতে পারি আমরা। মুখোমুখি হতে পারি কোনও না-খোলা পাতার। রাত জাগা কান্নার, তবু তা পেরিয়ে আমাদের তাকাতে হবে সত্যের দিকে। জীবনের দিকে। এ ছবি দেখে বেরিয়ে, এপ্রিলের বিকেলে এটাই মনে হল।

‘পারিবারিক ছবি’ আমরা অনেক দেখেছি ৮০-র দশক ও তার পরবর্তী সময় । মূলত, ৯০-এর দশকে ধারাবাহিক ভাবে বেশ কিছু ছবিতে মধ্যবিত্ত জীবন ছাপ ফেলছিল। প্রসঙ্গে অনিবার্য ভাবে মনে পড়বে ঋতুপর্ণ ঘোষ ও অপর্ণা সেনের নাম। ক্রমশ ক্যামেরা ঢুকে আসছিল মধ্যবিত্ত পরিবারের অন্দরে। শুনতে পাচ্ছিলাম, চেপে রাখা অন্ধকারের হাসি-কান্না। রাস্তার বুলেটের বদলে যে সব বুলেট চলে চার দেওয়ালে, অবিরত। শুনতে পাচ্ছিলাম, তা-ও।

বসু পরিবার দেখতে দেখতে সে-সব ছবির কথাই মনে পড়ছিল বারবার। বাঙালি অন্দরের জীবন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়েও ছবি হয়েছে। কিন্তু তা হয়েছে মূলত নস্টালজিয়া আকড়ে ধরে। কিন্তু এ ছবি সত্যজিৎ রায়ের ‘শাখাপ্রশাখা’-র মতোই হাত দেয় ইতিহাসের আত্মায় ও শরীরে। তাই কেবল নস্টালজিয়ার বদলে, এখানে ডানা মেলে পারিবারিক কোন্দল। ডানা মেলে লুকিয়ে রাখা ইতিহাস। ইতিহাস, যা চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে, তা যে আসলে বানানো। ম্যানুফ্যাকচারড। তার আড়ালে যে অন্য ইতিহাস আছে, তাতে চকিতে আলো পড়ে। জ্বলজ্বল করা রাজবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে অন্ধকার ঘর। অন্ধকার ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন ৫০ বছর ধরে লুকিয়ে রাখা বাড়িরই এক সদস্য, যিনি এক খুনের সাক্ষী। যা এক পলকে নিভিয়ে দেয়, ৫০ বছরের সৌমিত্র-অপর্ণার বিবাহ বার্ষিকীর জৌলুস।


ছবির দৃশ্যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

অরুণ মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় অন্যতম সেরা মনে হয়। ভাল লাগে ব্যর্থ কর্মহীন দাদার চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও অপর্ণা সেনের জুটিও বহুদিন পর। আরেকটু কি নতুন ভাবে এই প্রবাদপ্রতিম জুটিকে ব্যবহার করা যেত না? এই বাবা-মা’র টাইপ চরিত্রে তো এদের বারবার ব্যবহার করাই হয়েছে। প্রশ্ন থেকে গেল পরিচালকের কাছে। যিশু সেনগুপ্ত, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তদেরও কি আরেকটু ব্যতিক্রম ও বিস্তারিত ভাবে ব্যবহার করা যেত না? এ ছবি তারকাখচিত সত্যি। কিন্তু আরও একটু কি খুলে ব্যবহার করা যেত না সকলকে, প্রশ্ন সেখানেও।

আরও পড়ুন, বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন প্রিয়ঙ্কা-নিক?

সঙ্গীত, আবহ বা সম্পাদনায়ও নতুন কোনও প্রয়োগ চোখে পড়েনি। আর পাঁচটা পারিবারিক ছবির টেমপ্লেটের মতোই লাগে। কেবল, কৌশিক সেন অভিনীত সমকামী চরিত্রটি সাম্প্রতিক সমস্যাকে প্রতিফলিত করে। তার পরিবারেও স্ত্রীর সামনে টানাপড়েন দেখতে ভালো লাগে। সমকালীন লাগে। এ ছাড়া বাকি প্লট অনেকটাই প্রচলিত। আর তাই এ ছবির কাছে আরও কিছু প্রত্যাশা তৈরি হয়।

আরও পড়ুন, ঋষি কি ক্যানসারে আক্রান্ত? কেমন আছেন? রণবীর বললেন…

এই ডিজিটাল সাইকোটিক সময়ে যখন সমস্ত দুনিয়া এসে বাসা বেঁধেছে স্মার্টফোনে, তখন ব্যক্তিমানুষের জীবনের টানাপড়েনও বদলেছে অনেকটাই। বদলেছে সমস্যার মাত্রা। সাম্প্রতিক সময়ের ইরানের ছবির দিকে তাকালে, সে সমস্যা বলার গল্পের দিকে তাকালে বোঝা যায়, ছবির মান বদলে গেছে। তাই বাংলা ছবি যখন সম্পর্কের গল্প বলে, তখন প্রত্যাশা জাগে। খবর কাগজের গল্পগুলোই হয়তো দেখতে পাব পর্দায়। বসু পরিবারের মতো ছবি খুব কাছাকাছি যায় সে বাস্তবের। কিন্তু উপস্থাপনায় কেন যে আজও অভিনব কিছু দেখলাম বলে মনে হল না, হল থেকে বেরিয়ে, সেটাই ভাবায়!

(মুভি ট্রেলার থেকে টাটকা মুভি রিভিউ - রুপোলি পর্দার সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদন বিভাগ।)

Film Review Tollywood Bengali Movie Celebrities Movie Review মুভি রিভিউ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy