সত্য একটি বিলাস। এই বিলাসকে কেন্দ্র করেই ‘দ্য তাসখন্দ ফাইলস’-এর আখ্যানটি নির্মাণ করতে চেয়েছেন বিবেক অগ্নিহোত্রী। সেই নির্মাণের কেন্দ্রে রয়েছে ১৯৬৬-তে ভারতবর্ষের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর তাসখন্দে মৃত্যুর বহুল চর্চিত প্রসঙ্গটি।
আখ্যানটি এগিয়েছে তরুণী সাংবাদিক রাগিণী ফুলের (শ্বেতা বসু প্রসাদ) কর্মক্ষেত্রে কঠিন পরিস্থিতি, তা থেকে উদ্ধারের জন্য এক অপরিচিতের করা ‘ফোন’-এর সূত্র ধরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু ‘রহস্য’ সম্পর্কে প্রতিবেদন লেখা, তা কেন্দ্র করে কমিটি বসানো, রহস্যের জাল ছাড়ানোর একমুখী ঝগড়াকে সঙ্গে করে। এ সবের মূল লক্ষ্যই যেন, ‘লোকসভা ভোটের জন্য এক জবরদস্ত বিষয়’কে উস্কে দেওয়া, বলে অন্যতম চরিত্র শ্যামসুন্দর ত্রিপাঠী (মিঠুন চক্রবর্তী)।
কিন্তু সিনেমার আখ্যানের গবেষণায়, নির্মাণে, সংলাপে বা ব্যবহৃত উপকরণগুলিতে যেন একটি বিশেষ রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে। বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা একটি রাজনৈতিক দলের নেতা কে এল মালকানির একটি বই, সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার নথি সংরক্ষক ভাসিলি মিত্রখিনের ‘আর্কাইভ’-এর বিতর্কিত কিছু অংশের ব্যবহারে সেই বার্তা আরও স্পষ্ট। যদিও আর্কাইভের অংশের দাবিগুলির প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই বলে জানান পরিচালক। আখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য করতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর দুই সন্তান, দু’জন বিশিষ্ট সাংবাদিকের বয়ান।
দ্য তাসখন্দ ফাইলস
পরিচালনা: বিবেক অগ্নিহোত্রী
অভিনয়: মিঠুন, নাসিরউদ্দিন, শ্বেতা ৪.৫/১০
এ সব সত্ত্বেও সংলাপে হেলিকপ্টার, টু-জি, বোফর্স ইত্যাদি সংক্রান্ত ‘নির্বাচিত’ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগকে উস্কে দেওয়া কেন, প্রশ্ন থাকে। প্রশ্ন ওঠে, শাস্ত্রীর মৃত্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিনেমার ‘আখ্যান গবেষণাটি’ প্রবল ভাবে একমুখী কেন? সত্তরের দশকে ভারতবর্ষে কেজিবি-র প্রভাবের দাবি বা সোশ্যালিজ়ম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সংক্রান্ত বক্তব্যের বিপরীত মত বা যুক্তিগুলি কী, তা-ও ‘ইতিহাস’ নির্ভর আখ্যানটিতে অনুপস্থিত।
শাস্ত্রীকে ভারতবর্ষের অর্থনীতির প্রথম সংস্কারক বলে দাবি করা হয়েছে। অথচ প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ‘মিশ্র অর্থনীতি’তে দেশের বার্ষিক শিল্পবৃদ্ধির হার ছিল সাত শতাংশ (সূত্র: ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া’, জুডিথ ই ওয়ালস)। শাস্ত্রী নিঃসন্দেহে দেশে ‘হোয়াইট রেভলিউশন’-এর অন্যতম কারিগর। কিন্তু তাঁর গুরুত্ব বোঝাতে প্রসঙ্গটির উত্থাপন কেন করেন পরিচালক?
তবে বিষয় নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আখ্যানের একমুখী কাঠামোটি যথাসম্ভব জবরদস্ত করার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়ের সিনেমা যতটা ঝকঝকে হওয়া দরকার, তা হয়নি। আবহ, সঙ্গীতের ব্যবহার চড়া দাগের। অভিব্যক্তিতে দুর্দান্ত মিঠুন। শ্বেতাও সাবলীল। তবে পি কে আর নটরাজন, গঙ্গারাম ঝা, মুক্তার, ওমকার কাশ্যপ প্রভৃতি চরিত্রে যথাক্রমে নাসিরউদ্দিন শাহ, পঙ্কজ ত্রিপাঠী, বিনয় পাঠক, রাজেশ শর্মার মতো অভিনেতারা থাকলেও তাঁদের অভিনয়ের সুযোগ কম। তুলনায় অনেক বেশি জায়গা পেয়েছেন পল্লবী জোশী (অয়সা আলি শাহ)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy