আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ
পরিচালনা: কঙ্কণা সেনশর্মা
অভিনয়: বিক্রান্ত, রণবীর, কালকি, ওম পুরি, তনুজা, তিলোত্তমা, গুলশন
৭.৫/১০
স্কুল-কলেজে থাকার সময় এমন কাউকে-কাউকে আমরা দেখেছি যাদের ইচ্ছে করে বাকিদের সঙ্গে হুল্লোড় করতে, ইয়ার্কি মারতে, ক্লাস বাঙ্ক করতে...অথচ পারে না। কোথাও আটকে যায়। একাকিত্বের পারদটা বুঝতে না দিয়ে মুখ গুঁজে নেয় বইয়ের পাতায়। নয়তো বা ব্যস্ততার ভান করে।
কঙ্কণা সেনশর্মার ‘আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’ ছবির সুতু এদের কথা মনে করায়। সুতু যেন বিষাদের অভিমানী মুখ। হালকা করে বললে ইন্ট্রোভার্ট। কেউ যখন তাকে ‘বুলি’ করে, ধমকায় মনে মনে গুমরোতে থাকে। বিক্রান্ত মেসিকে এই চরিত্রটায় নেওয়ার জন্যই কঙ্কণাকে অতিরিক্ত বাহবা দেওয়া যায়। বিক্রান্তের বাঙ্ময় চোখ আর অভিব্যক্তি তাঁকে পুরোপুরি সুতু করে তোলে।
হয় সেই গোয়েন্দা নয়তো বিদেশি ছবির জোড়াতালির থ্রিলার দেখে ক্লান্ত দর্শককে কঙ্কণা অন্য রকম একটা পরশ দিলেন। এখানে যে রহস্যটা বুনেছেন সেটা আসলে জটিল মনস্তত্ত্ব ছাড়া আর কিছু নয়। অথচ গোটা ছবি জুড়ে কিছু একটা হবে...এই রকম ভাব জিইয়ে রাখা।
বিহারের ম্যাকলাস্কিগঞ্জে প্রকৃতি আর রহস্য হাত ধরাধরি করে থাকে। একটু যেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ গন্ধ রয়েছে। শীর্ষ রায়ের ক্যামেরায় প্রকৃতিও পার্শ্বচরিত্র। অতিরিক্ত দেখনদারি নেই।
আরও খবর
আর টুইটার না, এ বার লাইভ টিভি চ্যানেল লঞ্চ করব
হাইওয়েস্ট জিনস, বেলবটস, টিভি তো দূরঅস্ত ক্যাসেট রেকর্ডার যেখানে দুর্মূল্য সেই সময়টা ধরেছেন পরিচালক কঙ্কণা। চরিত্ররা যে বেশ উচ্চবিত্ত, সেটা তাদের মদ্যপান আর সিগারেটের ভাষা থেকে বোঝা যায়।
ম্যাকলাস্কিগঞ্জে বড়দিনের ছুটি কাটাতে আসে চারজন। নন্দু (গুলশন দেবাইয়া) তার স্ত্রী বনি (তিলোত্তমা সোম), মেয়ে তানি (আরিয়া শর্মা) তুতো ভাই সুতু (বিক্রান্ত মেসি) আর বনির বন্ধু মিমি (কালকি কেঁকলা)। জুটে যায় নন্দুর দুই বন্ধু বিক্রম (রণবীর শোরে) আর ব্রায়ান (জিম সরাভ)। বা়ড়িটা নন্দুর বাবা-মায়ের। সেই চরিত্রে ওম পুরি আর তনুজাকে দেখে ভাল লাগে।
অলস ছুটির দিনগুলো হুল্লোড়ে মেতে ওঠে। সুতু মিশতে গিয়েও ঠিক মিশতে পারে না। বাকিরা যে তার চেয়ে বেশি পুরুষালি। সুতুর নরম স্বভাব নিয়ে ঠাট্টা করে তারা। বাড়ির উটকো কাজ, আলস্যের আবদার তাকেই মেটাতে হয়। মেয়েরাও বেশ ব্যক্তিত্বময়ী। তাই সুতু কোথাওই নিজেকে মেলে ধরতে পারে না। মিমির উপর তার হালকা মায়া তৈরি হয়। কিন্তু মিমি নিজের স্বার্থেই মগ্ন! কেউ তাকে সামান্য গুরুত্ব দিলে ব়়ড্ড খুশি হয়ে যায় সুতু। তার একলা দিনের গল্পের সঙ্গী ছ’বছরের ছোট্ট তানি। সেই তানিও যে দিন মুখ ফিরিয়ে নেয় সুতু একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে ওঠে।
ছবির ক্লাইম্যাক্স খানিকটা প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু কঙ্কণা যে ভাবে ধীরে ধীরে সে দিকে এগিয়েছেন, সেই ন্যারেশনটা বড্ড ভাল। একঘেয়েমি নেই। যে সুতু ছোটবেলায় পড়াশোনা ভাল ছিল, সে কেন হঠাৎ ফেল করে? শুধুই কি তার বাবা মারা যাওয়ার শোক নাকি আরও কিছু আছে? নাকি তার বোবা জীবন তাকে নিষ্ঠুর পরিণতির দিকে ঠেলে দিল? এই জায়গাটা পরিচালক খোলসা করলে ভাল লাগত।
মুকুল শর্মার গল্পের মধ্যে একটা ‘আনক্যানি’ ব্যাপার থাকে। ছবিতেও কঙ্কণা সেটা বজায় রেখেছিলেন। প্ল্যানচেটের মুহূর্ত কিংবা জঙ্গলে ফাঁদে পড়ে যাওয়া একলা সুতু আটকে থাকা শিরদাঁড়া সোজা করে বসতে বাধ্য করে। বাকি চরিত্রগুলোও বেশ যত্ন নিয়ে তৈরি। নন্দু আর বনি হাল আমলের দম্পতিদের মতোই। রণবীরের বিক্রম চরিত্রটা বেজায় পুরুষালি। নিরীহের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে খুশি হয়। মিমি জটিলতায় ভরা। বিক্রমের প্রতি দখলদারি মনোভাব আটকে যায় বিক্রমের স্ত্রীকে দেখে। তাই শরীরী চাহিদা মেটাতে চড়াও হয় সুতুর উপর। মিমির কাছে যেটা খেলা, সুতুর কাছে সেটাই জীবন। তাই পেয়েও হারিয়ে ফেলার অনুভূতি তাকে হয়তো চরম পরিণতির কিনারায় নিয়ে যায়।
কঙ্কণার ছবিকে থ্রিলারের জঁরে ফেলা যাবে না। গল্প বলতে গেলেও যে অনেক কিছু বলার তাও নয়। অথচ দু’ঘণ্টায় প্রাপ্তির ঝুলিটা ভরে যায়। হল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসার মতো একটা ছবি ‘আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy