কায়দার স্লো-মোশন শট, ঝকঝকে এডিটিং আর জমজমাট আবহ সঙ্গীত থাকলেই খুব দারুণ একটা ছবি হবে— এমনটা নয়। অভিরূপ ঘোষের মৃগয়া তার জলজ্যান্ত প্রমাণ।
গল্পের শুরু কলকাতার যৌনপল্লি সোনাগাছিতে। এক যৌনকর্মী খুন হন, একের পর এক ডাকাতির ঘটনার মধ্যে। ঋত্বিক চক্রবর্তী বিডন স্ট্রিট থানার অফিসার-ইন-চার্জ, ‘দেবাঞ্জন চক্রবর্তী’, যিনি এই কেসটা দেখবেন। বিক্রম চট্টোপাধ্যায় ওই থানারই সাব-ইনস্পেক্টর, ‘অনিমেষ রায়’। এই সোজাসাপটা, নিয়ম মেনে চলা পুলিশ আধিকারিকের আবার ফেলুদার মতো পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা রয়েছে। ছবিতে আবার তাকে কিছুটা শার্লক-এর মতো করে দেখানো হয়েছে।
অনির্বাণ চক্রবর্তী হলেন ঈশ্বরে বিশ্বাসী টেক-জিনিয়াস রুদ্র। তাঁর কূটকচালি চলতেই থাকে রেজওয়ান রব্বানি শেখ অভিনীত ‘ইমরান’-এর সঙ্গে। ইমরান অ্যান্টি-রাউডি স্কোয়াডের সদস্য, যিনি বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা-উপভাষার বাচনভঙ্গিতে কথা বলতে পারেন।
খলনায়ক ‘সর্দার’-এর চরিত্রে সৌরভ দাস। ছবি: সংগৃহীত।
আরও পড়ুন:
দুই জুনিয়র অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে এই চারজন রওনা দেন উত্তরপ্রদেশের দিকে, ‘ভেদিয়া গ্যাং’-এর নেতা ‘সর্দার’-কে ধরতে। ছবির বাকি অংশ যতই গোলমেলে হোক না কেন, এই দলের মধ্যে দারুণ রসায়ন। অভিজ্ঞ, রসবোধসম্পন্ন পুলিশ আধিকারিকের ভূমিকায় ঋত্বিক দুর্দান্ত। ছবির খলনায়ক একেবারেই দক্ষিণী ছবি থেকে অনুপ্রাণিত একটি চরিত্র। ‘সর্দার’ (সৌরভ দাস) প্রথম থেকেই পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মোটের উপর প্রধান চরিত্রগুলিই মৃগয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক।
কিন্তু ছবির বাকি দিকগুলি? একটি নারী চরিত্রকে প্রথমেই মেরে ফেলা হয়, অন্যজন শুধু প্রেমিকা হিসেবেই থেকে যান। আর যৌনপেশা নিয়ে যে ভাবে বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে, সেটা দেখে কপাল চাপড়ানোর জোগাড়!
সোনাগাছিকে তুলনা করা হয় আবর্জনা ফেলার জায়গা ধাপার সঙ্গে। কারণ “যদি ময়লা ফেলার জায়গা না থাকত, কলকাতা এত সুন্দর থাকত না।” শুধু তাই নয়, দেবাঞ্জনের মতে যৌনকর্মীদের উপস্থিতিতে যৌন হিংসা এবং গার্হস্থ্য হিংসা কমে, তাই তিনি তাদের ‘সোশ্যাল ওয়ার্কার’ বলে সম্বোধন করেন। আধুনিক পৃথিবীতে একটি ছবিতে কী ভাবে এ রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন সংলাপ থাকতে পারে! ভাবাই যায় না!
ছবিতে যৌনকর্মীদের ঘর দেখে মনে হয় যেন কোনও ‘ইনস্টাগ্রাম রেডি বুদোয়ার’ (ইনস্টাগ্রামের জন্য সাজানো শোয়া-বসার ঘর)! চকচকে কাঠের আসবাব, সোনার গয়না, ঝকঝকে ঘরবাড়ি। পরিচালক বা চিত্রনাট্যকার আদৌ কোনও দিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখেছেন কি সেই সব মানুষগুলো সত্যি কি অবস্থায় থাকেন?
এই হল ছবির প্রথমার্ধ। কষ্টেসৃষ্টে সেটা পার হতেই দ্বিতীয়ার্ধে গুলিবর্ষণ সহযোগে ভিলেন আর পুলিশের দাপাদপি শুরু। অ্যাকশন দৃশ্যগুলো মন্দ নয়, খানিকটা বলিউডের মেজাজ আছে। কিন্তু যুক্তিটা কী এত মারপিটের? প্রথম ভাগে যে পুলিশদের গুলি টার্গেটে একেবারেই লাগে না, তারাই পরে পাক্কা স্নাইপারদের মতো বন্দুক তাক করছে। আর অ্যাকশনের সময় এত জোরে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক চলে যে অর্ধেক ডায়লগই শোনা যায় না।
তবু, ‘মৃগয়া: দ্য হান্ট’ দেখতে যাওয়াই যায়, ঋত্বিক-বিক্রম-অনির্বাণ-রেজওয়ান-এর জন্য। তবে ছবি শেষ হওয়ার আগেই মাথা ধরতে পারে, সতর্ক থাকতে হবে।