শ্রাবন্তী ব্যক্তিগত সমস্যা দূরে সরিয়ে রেখে কামব্যাকের প্রবল চেষ্টা করেছেন এ বছর। কিন্তু এখনও নিজের পুরনো জায়গার কাছাকাছি পৌছননি। এত ভাল অভিনেত্রী অথচ নিউ এজ ছবির জন্য ফিজ বিশেষ কাটছাঁটে বিশ্বাসী নন।
এই সব কিছু মিলেজুলে বছর যত শেষের দিকে, ততই যেন নিজের পিছনের লেন থেকে অকস্মাৎ সামনে চলে এসেছেন ঋতুপর্ণা।
আচমকা ঋতুবদলের রেসিপি কী?
‘‘ঋতুবদল কি না জানি না, তবে কাজের প্রতি আমার প্যাশনটা অনেকের চেয়ে বেশি। সেটাই হয়তো আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কাজ করতে নামলে আমার একটা অদ্ভুত অ্যাড্রিনালিন রাশ হয়, যা আমি বলে বোঝাতে পারব না,’’ বিষ্যুদবার সকালে বাড়িতে মেকআপ করতে করতে বলছিলেন ঋতু।
ঋতুপর্ণা মানেই বোধহয় সাংবাদিকের কাছে টালিগঞ্জের কঠিনতম শারীরিক চ্যালেঞ্জ। আজ দিল্লি, কাল বাংলাদেশ, পরশু সিঙ্গাপুর... নাচের প্রোগ্রাম, পুজোর উদ্বোধন... তাল রাখাটাই দুঃসাধ্য ঋতুর সঙ্গে। এত কিছুর পরেও ফোকাস রাখেন কী করে ঋতু, সেটা টালিগঞ্জের চিরকালীন জিজ্ঞাস্য। আজকের দিনে তা আরও বেড়েছে।
কিন্তু গত বারো বছর তাঁর সঙ্গে ছিলেন না প্রসেনজিৎ। হিরো হতে এতটুকু আগ্রহ দেখাননি দেব বা জিতের কেউ। তাঁর কপালে বেশির ভাগ সময় জুটত ফিরদৌস। বড়জোর কখনও যিশু। পাশে ছিল না সবচেয়ে বড় প্রোডাকশন হাউজও। জিজ্ঞেস করি, রোজ সকালে নিজেকে মোটিভেট করতেন কী ভাবে?
‘‘আমি জানতাম, যুদ্ধটা একা লড়তে হবে। এটা আমার জীবনের দীর্ঘ আর কঠিনতম লড়াই। চারিদিকে তখন শুধুই প্রবঞ্চনা আর হেরে যাওয়া। কখনও কখনও ভাবতাম এই হিরোলেস ফেজটা কাটাব কেমন করে? তার পর নিজের ছবিতে নিজেই হিরো হয়ে উঠলাম,’’ বেশ জোরের সঙ্গেই বলেন নায়িকা।
প্রবঞ্চনা এতটাই ছিল যে, বহু অভিনেতা ‘অন্য’রা চটে যাবেন এই ভয়ে তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চাইতেন না। এমনকী ঋতুর ছবি মুক্তির সময় হঠাৎ হঠাৎ নানা ঝামেলাও শুরু হত।
যে প্রযোজকরা কোনও দিন ভাবতেও পারেনি যে ঋতু তাঁদের ছবিতে ‘হ্যাঁ’ বলবেন, এমনকী তাঁদের সঙ্গেও প্রায় বাধ্য হয়েই ছবি করেছেন ঋতু।
‘‘কেঁদেছি কত। কত বার মনে হয়েছে সব ছেড়েছুড়ে দিই। কিন্তু তারপর নিজেকে বুঝিয়েছি আমাকে আবার খেলায় ফিরতে হবে,’’ বলেন নায়িকা।
কথায় কথায় নিজেই জানান শাহরুখ খান দিল্লিতে তাঁকে একবার দারুণ মোটিভেশনাল কথা বলেছিলেন।
‘‘শাহরুখ দিল্লির আড্ডায় বলেছিল এই ইন্ডাস্ট্রি খুব নির্দয়। যেহেতু নির্দয় তাই তোমাকেও নিজের কাজের ব্যাপারে রুথলেস হতে হবে। আমাকে সাঙ্ঘাতিক অনুপ্রাণিত করেছিল কথাগুলো। এত দিন এত ঝড় সামলে এটা বুঝেছি, এক মিনিটের জন্য যদি ফোকাসটা চলে যায় তা হলে কিন্তু আপনাকে হোঁচট খেতেই হবে,’’ বলেন ঋতুপর্ণা।
কিন্তু হালফিলের উজ্জ্বলতার পিছনে কোথাও তো অন্ধকারও রয়েছে। সে দিনই এক পরিচালক বলছিলেন, ঋতুকে ডাবিং স্টুডিয়োতে দেখে উনি চিনতেই পারেননি। চোখের নীচে এত কালি পড়ে গেছে।
‘‘হা হা হা হা। চোখের নীচে কালি সবার থাকে। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তো থাকেই। অ্যাট লিস্ট কালিটা তো এটা প্রমাণ করে কী পরিমাণ আপনি খাটছেন! আমার কাছে সেটা কালি পড়ার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ,’’ সাফ জবাব দেন নায়িকা।
তিনি যখন চুলের রোলার খুলছেন তার মধ্যেও প্রশ্ন করি, কোথাও কি তিনি এই আগ্রাসী মনোভাবের জন্য প্রসেনজিৎ বা সেই প্রোডাকশন হাউজের কাছে কৃতজ্ঞ? তাঁদের এই উপেক্ষাই কি তাঁর জেদ বাড়িয়ে দিয়েছে? তাঁরা কি তা হলে পরোক্ষভাবে তাঁর সবচেয়ে বড় মোটিভেশন ফ্যাক্টর?
প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেন ঋতু। ‘‘হতে পারে তো বটেই। ওরা আমাকে ইনডায়রেক্টলি সাহায্য করেছে,’’ বলেন তিনি।