Advertisement
E-Paper

আলিঙ্গনের উষ্ণ আদর ওষুধের মতো কাজ করে, ‘হাগ ডে’ নিয়ে রূপম, সৌরভ, মধুমিতা, ঋতাভরী

“‘হাগ ডে’-তে সারা ক্ষণ জাপটে থাকলাম, আর অন্য দিনগুলোতে পাত্তাই দিলাম না, সেটা করলে হবে না”, প্রেমের আলিঙ্গন নিয়ে কী বলছে টলিপাড়া?

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:০২
‘হাগ ডে’ নিয়ে কী মত রূপম ইসলাম, ঋতাভরী চক্রবর্তী, সৌরভ চক্রবর্তী, মধুমিতা সরকার, সৌরসেনী মৈত্রের?

‘হাগ ডে’ নিয়ে কী মত রূপম ইসলাম, ঋতাভরী চক্রবর্তী, সৌরভ চক্রবর্তী, মধুমিতা সরকার, সৌরসেনী মৈত্রের? গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আলিঙ্গন নিমেষে মুছে ফেলতে পারে দীর্ঘ দিনের অভিমান। রাগ, ভুল বোঝাবুঝি, সম্পর্ক ভাঙনের সম্ভাবনাকে এক লহমায় ভুলিয়ে দিতে পারে ভালবাসার মানুষের উষ্ণ আলিঙ্গন। নিঃশব্দে আঁকড়ে জড়িয়ে ধরে বুঝিয়ে দেওয়া যায়, ‘এই তো আমি, কোথাও যাইনি ছেড়ে।’ প্রেমের সপ্তাহ ওরফে ‘ভ্যালেন্টাইনস উইক’ জুড়ে গোলাপ, প্রোপোজ়, চকোলেট, টেডি, প্রমিস ডে-র ভিড়ের মাঝে এ যেন এক না-বলা প্রশান্তি, আশ্রয়ের জায়গা।

কেউ মনে করছেন জড়িয়ে ধরার জন্য বিশেষ দিনের প্রয়োজন নেই। আবার কেউ ভাবেন, ভালবাসা প্রকাশের জন্য বিশেষ দিন হলে মন্দ নয়। এই প্রসঙ্গে মতামত জানালেন রূপম ইসলাম, ঋতাভরী চক্রবর্তী, সৌরভ চক্রবর্তী, মধুমিতা সরকার, সৌরসেনী মৈত্র।

সঙ্গীতশিল্পী রূপম ইসলামের কথায়, “জড়িয়ে ধরার জন্য বিশেষ দিনের প্রয়োজন কে বলেছে? যখন মনে হবে তখনই জড়িয়ে ধরতে হবে।” সম্প্রতি বইমেলায় এক অনুরাগী যখন প্রশ্ন করেন তাঁকে, “জড়িয়ে ধরব?” রূপমের পাল্টা প্রশ্ন “কেন নয়?” শিল্পী জানালেন, সে দিন ‘হাগ ডে’ ছিল না। শারীরিক ভাবে হোক বা মানসিক দিক থেকে, জড়িয়ে ধরায় কোনও বাধা নেই। আলিঙ্গন প্রসঙ্গে তাঁর কাছে উপযুক্ত উদাহরণ মুন্নাভাইয়ের ‘জাদু কি ঝাপ্পি’!

নমস্কার বা হাত মেলানোর মতো জড়িয়ে ধরা এখন সৌজন্য প্রকাশের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ে শিল্পী জানালেন, জড়িয়ে ধরা মানুষের ভালবাসা ও আবেগের প্রকাশ। শুধুই যে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ধরা হয়, তা মানতে নারাজ গায়ক, “ছেলেকে জড়িয়ে ধরি। সেটাও তো আমাদের বাবা-ছেলের সম্পর্কের সমীকরণের বহিঃপ্রকাশ।” তাঁর মতে, প্রীতির সম্পর্কে জড়িয়ে থাকেন, তারই দৈহিক প্রকাশ ঘটে আলিঙ্গনের মাধ্যমে। ‘হাগ ডে’-এর মাধ্যমে আমাদের জীবনে জড়িয়ে ধরার তাৎপর্য আবার আলোচনায় উঠে আসবে, এমনই মনে করেন রূপম।

অভিনেতা-পরিচালক সৌরভ চক্রবর্তীর জীবনেও ভ্যালেন্টাইন সংক্রান্ত কোনও বিশেষ দিন আলাদা ভাবে গুরুত্ব পায়নি। তবে তাঁর কাছে জড়িয়ে ধরা বা জাপটে ধরার বিশেষত্ব রয়েছে বইকি! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সৈনিকরা যুদ্ধে যাওয়ার আগে প্রিয়জনদের আলিঙ্গন করে যেতেন। ফুটবলের ময়দানে খেলোয়াড়েরা জড়িয়ে ধরেন সতীর্থদের— কখনও উচ্ছ্বাসে, কখনও বিষণ্ণতায়। তাঁর মতে, অনুভূতির কাছে শব্দ কখনও অপ্রতুল হয়ে পড়ে। অনেক সময় শব্দের মাধ্যমে আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো যায় না। ‘পাশে আছি’ বলা অপেক্ষা নিঃশব্দে আলিঙ্গন যেন আরও ভরসা জোগায়, প্রতিশ্রুতি দেয়।

“যখন একাকিত্ব গ্রাস করে, ছুটে চলা জীবনের মাঝে কোথাও গিয়ে মনে হয় আমি হেরে যাচ্ছি বা কোথাও পৌঁছতে পারছি না, জীবনে ওঠাপড়ার সময় প্রিয়জনের উষ্ণ আলিঙ্গন ওষুধের মতো কাজ করে”, বললেন সৌরভ। তাই আলিঙ্গনকে উপেক্ষা করার কোনও জায়গাই নেই। সৌরভের কথায়, “জড়িয়ে ধরার বিশেষ দিবস হয় না। ‘হাগ ডে’-এর দিন সারা ক্ষণ জাপটে থাকলাম, আর অন্য দিনগুলোতে পাত্তাই দিলাম না, সেটা করলে হবে না।”

অন্য দিকে, প্রাক্তন স্ত্রী মধুমিতা সরকার সদ্য প্রেমে পড়েছেন। ‘হাগ ডে’-এর কথা শুনেই সলজ্জ হাসি অভিনেত্রীর। তাঁর প্রশ্ন “প্রেমিকের উষ্ণ আলিঙ্গন সব সময় ভালই লাগে। কিন্তু ৩৬৫ দিনের মধ্যে কেন শুধু একটা মাত্র দিনই জড়িয়ে ধরার সুযোগ করে দেবে এ ব্রহ্মাণ্ড?” প্রেমিক দেবমাল্য চক্রবর্তী ‘হাগ ডে’ অর্থাৎ বুধবার কাজে ব্যস্ত থাকবেন। জড়িয়ে ধরার সময় পাবেন না। তাই তিনিই উদ্যোগী হয়ে আলিঙ্গন করবেন মনের মানুষকে।

তবে দেখা হলেই সৌজন্য বিনিময়ের উদ্দেশ্যে জড়িয়ে ধরা পছন্দ করেন না অভিনেত্রী। এ ক্ষেত্রে হাত মেলানোতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন মধুমিতা। খুব কাছের কেউ না হলে জড়িয়ে ধরায় অস্বস্তি হয় অভিনেত্রীর। ভালবাসার মানুষকে রোজ জড়িয়ে ধরলে সেই স্বাদ কি একঘেয়ে হয়ে যায়? ঘোর বিরোধিতা করে অভিনেত্রী বলে উঠলেন, “না না! তাতে তো ভালবাসা বাড়ে।”

সৌরভ মনে করেন, অদূর ভবিষ্যতে পৌষ পার্বণের মতো বিলুপ্তপ্রায় হয়ে দাঁড়াবে প্রেম-ভালবাসা, চুমু, জড়িয়ে ধরা। যত দিন যাচ্ছে প্রেমের সংজ্ঞা পাল্টে যাচ্ছে। একশো বছর পরে প্রেমের অস্তিত্ব থাকবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে অভিনেতার। অদূর ভবিষ্যতে মেটাভার্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জমানায় মিউজ়িয়ামে রাখতে হবে ‘হাগ ডে’। মানুষের এআই অবতার ঘুরে বেড়াবে, একে অন্যের সঙ্গে আলাপচারিতা করবে। তখন এ সবের গুরুত্ব বাড়বে। তাই তাঁর কবিতায় লিখেছেন, ‘‘এক দিন খুব ঝড়ঝাপটাতে লোটাকম্বল নিয়ে হাতে হাতে মহাকাশ জুড়ে বেড়াতে বেড়াতে অনুভবকে বুঝব।’’

জড়িয়ে ধরার অছিলায় অপ্রীতিকর স্মৃতিও তৈরি হয় অনেক সময়। পুরুষ বন্ধুর আলিঙ্গনের পরমুহূর্তে উপলব্ধি হয়, এই আলিঙ্গন বন্ধুত্বসুলভ নয়। এই প্রসঙ্গে সৌরভের মত, এটা ঠিক পরমাণু আবিষ্কারের মতো। কী কারণে আবিষ্কার আর কী কারণে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই বিচ্যুতি থাকবেই। বললেন, “কিছু সামাজিক ব্যাধির কারণে জড়িয়ে ধরার মতো ভালবাসার প্রকাশকে গুরুত্বহীন ভাবলে ভুল করা হবে। জড়িয়ে ধরার অছিলায় স্বার্থসিদ্ধি করলে সেটা তার মানসিক সমস্যা।” তিনি মনে করেন, শব্দে অলঙ্কার দিয়ে ভরিয়ে দেয় মানুষ। তাই উপলব্ধি করা যায় না প্রকৃত উদ্দেশ্য। কিন্তু স্পর্শ কখনও অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য গোপন রাখতে পারে না।

ঋতাভরী চক্রবর্তী প্রেমে থাকতে ভালবাসেন। প্রেমজীবন নিয়ে বরাবরই প্রকাশ্যে মত রাখেন। তবে ‘হাগ ডে’ নিয়ে বিশেষ কোনও বক্তব্য নেই তাঁর। “নো হাগ, নো ডে”, বলে ধোঁয়াশা বজায় রাখলেন অভিনেত্রী।

সৌরসেনী মৈত্রের কাছে প্রেমের ভাষা মানেই উষ্ণ আলিঙ্গন। প্রেমিক তো বটেই, বন্ধুত্বেও আলিঙ্গনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করেন অভিনেত্রী। মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে আলিঙ্গনকে সহজ ভাবেই দেখেন অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, “আমার পুরুষ বন্ধুর সংখ্যাই বেশি। পেশার দুনিয়াতেও পুরুষ সহকর্মীদের আলিঙ্গনেও কখনও অস্বস্তি অনুভব করিনি।” তবে কেউ যদি বন্ধুত্বপূর্ণ আলিঙ্গনের অছিলায় সুযোগ নিতে যান তা হলে সেটা সমস্যার, জানালেন অভিনেত্রী।

Valentines Day Special Rupam Islam Ritabhari Chakraborty Sourav Chakraborty Madhumita Sarcar Sauraseni Maitra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy