Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছাপিয়ে গেল প্রত্যাশা

কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতাদের প্রত্যয়ী উপস্থিতি এ ছবির বড় সম্পদ। মূল ধারার হলিউড ছবিতে কৃষ্ণাঙ্গ মানেই নিপীড়িত বা গতে বাঁধা চরিত্র। এই ছবির সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে পরিণত, আকর্ষক ব্ল্যাক চরিত্ররা।

সুনীতা কোলে
শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০৩
Share: Save:

‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: সিভিল ওয়ার’ ছবির ঘটনা দিয়ে শুরু এ ছবির। বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে আফ্রিকার দেশ ওয়াকান্ডার রাজা টিচাকা-র। দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার গুরুদায়িত্ব এখন যুবরাজ টিচলা-র (চ্যাডউইক বোসম্যান) কাঁধে। রাজা হওয়ার পরেই জানা যায়, দেশের পুরনো শত্রু ইউলিসিস ক্ল রয়েছে কোরিয়ায়। আর তাকে পাকড়াও করতে গিয়েই এরিক ‘কিলমঙ্গার’ স্টিভেনসের (মাইকেল বি জর্ডন) বোনা জালে জড়িয়ে পড়ে টিচলা। জাল কেটে বেরিয়ে আসার লড়াইয়ে তার পাশে থাকে মা রামোন্ডা (অ্যাঞ্জেলা ব্যাসেট), জিনিয়াস প্রযুক্তিবিদ বোন সুরি (লেটিশিয়া রাইট), গুপ্তচর ও প্রাক্তন প্রেমিকা নাকিয়া (লুপিতা নিয়ঙ্গো) ও মহিলা যোদ্ধাবাহিনী ডোরা মিলাজে-র প্রধান ওকোইয়ে (ডানাই গুরিরা)।

এর পরই প্রথাগত সুপারহিরো ছবির প্লট ছাড়িয়ে সর্বজনীন হয়ে ওঠে ছবিটি। নায়কের পরিণত, যোগ্য হয়ে ওঠার কাহিনিতে পরিচালক মুন্সিয়ানার সঙ্গে বুনতে থাকেন প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ, সাম্রাজ্যবাদ, শরণার্থী সমস্যা, জাতিগত পরিচয়ের মতো আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চর্চিত বিষয়গুলি। কোথাও হোঁচট না খেয়ে তিনি ওয়াকান্ডাকে তুলে ধরেন বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ হিসেবে। লোভী, সাম্রাজ্যবাদী নজর এড়াতে হলোগ্রাম চাদরের আড়ালে স্বরূপ লুকিয়ে রাখে তারা। এ দেশে প্রযুক্তিগত উন্নতির হাত ধরে অনায়াসে হাঁটে প্রাচীন‌ ঐতিহ্য। প্রোডাকশন ডিজাইন, পোশাক পরিকল্পনা ও চিত্রগ্রহণের অনবদ্য মিশেলে এই কল্পিত দেশটি হয়ে উঠেছে বিশ্বাসযোগ্য।

কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতাদের প্রত্যয়ী উপস্থিতি এ ছবির বড় সম্পদ। মূল ধারার হলিউড ছবিতে কৃষ্ণাঙ্গ মানেই নিপীড়িত বা গতে বাঁধা চরিত্র। এই ছবির সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে পরিণত, আকর্ষক ব্ল্যাক চরিত্ররা। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য, টানাপড়েন, ভাবনা ফুটিয়ে তোলার জায়গা রেখেছেন পরিচালক। আর সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন সকলে। সুরির ভূমিকায় লেটিশিয়া রাইট প্রতিটি দৃশ্যে ঝলমলে। অ্যাঞ্জেলা, ডানাই ও লুপিতার শক্তিশালী উপস্থিতি সুপারহিরো ছবিতে মহিলাদের চরিত্রায়নে নতুন মাত্রা যোগ করে। রাজা হিসেবে দায়িত্ববোধ, দ্বিধা ফুটিয়ে তোলাই হোক বা বোনের সঙ্গে খুনসুটির দৃশ্য— চ্যাডউইক সাবলীল, ক্যারিজম্যাটিক। আলাদা করে বলতে হবে মাইকেলের কথা। অনাথ বালকের অসহায়তা এবং প্রতিশোধস্পৃহা অনায়াসে খেলা করে মাইকেলের অভিব্যক্তিতে। ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি নয়, শাসক-শোষিতের চেনা সমীকরণ উল্টে দেওয়াই লক্ষ্য কিলমঙ্গারের। একটি উন্নত দেশের ভূমিকা কী হওয়া উচিত? অপরিমিত সম্পদ নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখাতেই মঙ্গল, না কি ভাগ করে নেওয়াতে? কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের ক্ষমতায়ন হবে কোন পথে, সেই প্রশ্নেই জমে ওঠে টিচলা ও কিলমঙ্গারের নৈতিক দ্বন্দ্ব। কিলমঙ্গার নিঃসন্দেহে এখনও পর্যন্ত মার্ভেলের সেরা খলচরিত্র।

ব্ল্যাক প্যান্থার

পরিচালনা: রায়ান কুগলার

অভিনয়: চ্যাডউইক বোসম্যান,
মাইকেল বি জর্ডন,
লুপিতা নিয়ঙ্গো, ডানাই গুরিরা

৭/১০

কয়েকটি দৃশ্য বাদ দিলে এ ছবির অ্যাকশন একটু নিচু তারে বাঁধা। তবে তার জন্যই ছবিটি হয়ে উঠেছে বেশি বিশ্বাসযোগ্য। তারিফ কুড়োবে আবহসংগীত।

গত এক দশকে পরপর বিভিন্ন গোত্রের সুপারহিরো ছবি দেখেছেন দর্শক। ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ দেখিয়ে দিল সুপারহিরো ছবির কী হওয়া উচিত, সংবেদনশীল হাতে পড়লে এ ধরনের ছবি কোন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে। ছকের মধ্যে থেকেও কী ভাবে ছক ভাঙতে হয়, তা দেখানোর জন্য পরিচালককে কুর্নিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE