শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণায় শকুন্তলা।
শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার পরিচয় কি আজকের? দাদা তখন মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। দারুণ সুপুরুষ। আমার বাবা সুপারিন্টেনডেন্ট। শিক্ষক-ছাত্র পরিচয়ের সুবাদে কাজে-অকাজে তিনি আসতেন আমাদের বাড়ি। আমি তখন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। শুনেছি, তখন থেকেই নাকি শুভেন্দুদার নাকি অনুরাগিনীর সংখ্যা অসংখ্য! তখন তো মেলামেশার অত সুযোগ ছিল না। ফলে, তাঁকে ঘিরে আলাদা করে মুগ্ধতা তৈরিরও সুযোগ হয়নি। কেবল চোখের দেখা ছিল। কথাবার্তা প্রায় কিছুই হত না। এটা মনে আছে, কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানের আগে আমাদের বাড়িতে নাটকের মহড়া দিতেন। ওঁদের নাটকের যাবতীয় মঞ্চসজ্জার উপকরণ আমাদের বাড়ি থেকে যেত। আমাদের আসবাবও ওঁরা নাটকে ব্যবহার করতেন।
পরে শুভেন্দুদাও অভিনয়ে এলেন। এবং ঘটনাচক্রে আমিও। আমার প্রথম ছবি ‘সুনয়নী’র নায়ক তিনিই। ছবিটি আরও একটি কারণে আমার কাছে স্মরণীয়। এই ছবিতে এক সঙ্গে উত্তমকুমার আর শুভেন্দুদার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। শুভেন্দুদা বরাবরের রসিক। সেটে আমায় দেখে তিনি বেশ খুশি। হাসতে হাসতে সবাইকে বললেন, ‘‘তোমরা জানো, একে আমি কত বছর ধরে চিনি? শকুন্তলা আমার স্যরের মেয়ে।’’ তার পরেই তাঁর কপট আফশোস, ‘‘ইসস! তখন যদি তোমায় ভাল করে দেখতাম, আমিই তো নায়িকা শকুন্তলাকে বিয়ে করতে পারতাম। তা হলে কি আর তুমি অভিনয় দুনিয়ায় আসতে পারতে?’’ কথা শেষ হতেই হা হা করে হাসি।
এই ছিলেন শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়। সেটে আমাদের খুব আড্ডা হত। অনেক মিল ছিল আমাদের। দাদা ভাল গাইতে পারতেন। আমিও গানের দুনিয়ার মানুষ। উত্তমকুমারকে তিনি দেবতার আসনে বসিয়েছিলেন। মহানায়কের কথা অক্ষরে অক্ষরে মানতেন। উত্তমকুমার শুধুই ওঁকে নয়, আমাকেও অনেক টিপস দিতেন। বলতেন, ‘‘তোমরা আগামী দিনের তারকা। কী ভাবে তারকা সত্তাকে ধরে রাখতে হয় সেটা না শেখালে তোমরাই বা জানবে কী করে?’’ মঞ্চে অভিনয়ের দৌলতে এমনিতেই অভিনয়ে দক্ষ ছিলেন শুভেন্দুদা। বড় পর্দায় তারকা অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করতে করতে সেই অভিনয় আরও ধারালো হয়েছিল। আমার ১০টি ছবির মধ্যে আটটিতেই তিনি নায়ক! ‘সুনয়নী’, ‘প্রতিশোধ’ হয়ে ‘অমর সঙ্গী’ এবং আরও।
‘অমর সঙ্গী’-তে কাজ করতে গিয়ে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে মুম্বইয়ের বিজয়েতা পণ্ডিত। ওঁর জন্য আমাদের সকাল সকাল গাড়িতে তোলা হয়েছে আউটডোর শ্যুটের জন্য। শুভেন্দুদা রেগে লাল। ওঁর দাবি, কে চেনে বিজয়েতাকে? মুম্বই থেকে এসেছে বলেই এত খাতির! প্রবীণ অভিনেতাদের ওঁর জন্য টানাহেঁচড়া করবে! আমি সমানে ওঁকে চুপ করাচ্ছি। আচমকা গাড়ি থামিয়ে দাদা বললেন, ‘‘সিগারেট কিনে আনছি।’’ ফেরার পথে তিনি এক ডাবওয়ালার মুখোমুখি। দাদা দেখি তাঁকে ধরে জিজ্ঞেস করছেন, ‘‘তুহারা নাম ক্যয়া হ্যায়? ’’ ডাবওয়ালা বলেছেন, কালীপদ। ‘‘এই তুম বিজয়েতা পণ্ডিত কো জানতা হ্যায়?’’ দাদার ফের প্রশ্ন। এ বার তিনি জানালেন, ‘‘নেহি সাব। নেহি জানতা।’’ ব্যস, কথাটা লুফে নিলেন দাদা। গাড়িতে উঠেই বললেন, ‘‘দ্যাখো শকুন্তলা, কালীপদ পর্যন্ত বিজয়েতাকে চেনে না! আর আমাদের এ কী হয়রানি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy