মাত্র আঠারো বছর বয়সে বিয়ে। সংসার কী, ভাল করে বোঝার আগেই শ্বশুরবাড়িতে গায়িকা জোজো মুখোপাধ্যায়। তাঁকে হাতেধরে পাঠ পড়িয়েছিলেন শাশুড়ি-মা। খবর, সামান্য রোগভোগের পর শনিবার সকালে তিনি প্রয়াত। বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
আনন্দবাজার ডট কম-এর কাছে জোজোর আফসোস, তিনি ‘দ্বিতীয় মা’কেও হারালেন। কলকাতায় গানের রিয়্যালিটি শো ‘সারেগামাপা’-এর শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে উত্তরবঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছোতে পারেননি তিনি। “শেষ কয়েক মাস ছেলে বাবলুর কাছে কাটিয়ে গেল। মাকে শেষ দেখা দেখতে পেলাম না।”
শাশুড়ি-মায়ের বেশ কিছু স্মৃতি ভাগ করে নিয়েছেন গায়িকা। “নিজের মায়ের কাছে যত না থেকেছি ওর কাছে বেশি সময় কেটেছে। আমি তো শাশুড়ি-মায়ের হাতে মানুষ”, দাবি গায়িকার। তিনি আরও জানিয়েছেন, সদ্যপ্রয়াত শাশুড়ি-মা কর্মরত ছিলেন। চাকরি ছাড়ার পরে নিজের গানের স্কুল সামলাতেন। তিনি মেয়েদের কাজের প্রয়োজনীয়তা বুঝেছিলেন। তাই জোজোকে কোনও দিন কোনও কিছুতে বাধা দেননি। গায়িকার কথায়, “কত মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির জন্য কত কিছু ত্যাগ করতে হয়। আমায় কিচ্ছু করতে হয়নি। উল্টে আমার মেয়েকে নিজের মেয়ের মতো করে মানুষ করেছে। ওর কাছেই থাকত মা।”
সেই অনুযায়ী, গায়িকার স্বামী থাকেন উত্তরবঙ্গে। মেয়ে কর্মসূত্রে দক্ষিণ ভারতে। গায়িকা নিজে কলকাতায়। “ভারী মজার সংসার আমাদের। আমরা নানা জায়গায় থেকেও বেঁধে বেঁধে থাকতাম।” বছরে উৎসবের দিনে কিংবা শীত বা গরমের ছুটিতে একসঙ্গে জড়ো হতেন সবাই।
পাশাপাশি, জোজো অন্তরের ব্যথা প্রকাশ করেছেন বার্তায়। তিনি লিখেছেন, “সংসার শব্দটার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগেই তোমার কাছে। তখন আমি মাত্র আঠারো। কোনও দিনই তোমার নিখুঁত বৌমা হয়ে উঠতে পারিনি। কিন্তু তোমার থেকে যা শিখেছি, আমার জীবনে তার গুরুত্ব আজীবন থেকে যাবে।”
যেমন, জোজো-কন্যা বাজোকে নিজের সন্তানের মতোই লালন করেছিলেন গায়িকার সদ্যপ্রয়াত শাশুড়ি। তাঁর লেখনীতে, “তখনও আমি খুব ছোট। পেশাজীবন আর ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে শিখিনি। তুমিই আমার বাজোর দায়িত্ব নিয়ে আমায় উড়তে দিয়েছিলে, পেশাগত জীবনে যাতে স্বপ্নপূরণ করতে পারি।”
নাতনির জন্য ঠাকুরমার সেই ‘মা’ হয়ে ওঠা রূপ গায়িকা ভোলেন কী করে?
শাশুড়ি-মা, স্বামী বাবলু (কিংশুক মুখোপাধ্যায়), বাজো আর জোজো— এই ছিল তাঁদের সুখী গৃহকোণ। সেই ছবি থেকে একজন সরে গেলেন। কয়েক বছর আগে এক পুত্রসন্তান দত্তক নিয়েছেন গায়িকা। সেই পুত্র খুবই ছোট। স্বজনবিয়োগ বোঝার মতো বয়স বা উপলব্ধি, কোনওটাই হয়নি। সে কথা উল্লেখ করে গায়িকা লিখেছেন, “আদি অবশ্যই তাঁর ঠাম্মাকে মিস করবে। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে ওঠার ক্ষেত্রে সে এখনও বড্ড ছোট।”
তবে কালীপুজো বা সদল চড়ুইভাতির আনন্দ যে আগের মতো জমবে না, এ বিষয়ে কোনও সংশয় নেই গায়িকার।