পথকুকুরদের হয়ে গর্জে উঠল টলিউড। স্কুল, রেলস্টেশন, হাসপাতাল চত্বর থেকে পথকুকুরদের সরাতেই হবে। শুক্রবার রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রশাসনকে এমনই নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। তার পরেই সুপ্রিম রায়ের বিরুদ্ধে আনন্দবাজার ডট কম-এর কাছে ক্ষোভ উগরে দিলেন পরিচালক-অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায় এবং শ্রীলেখা মিত্র।
তথাগত যেমন দিল্লির উদাহরণ টেনে প্রশ্ন তুলেছেন, “দিল্লিতে তো ধর্ষকের সংখ্যাও বেশি। তা হলে কি ওদেরও তুলে এনে নির্বীজকরণ করিয়ে অন্যত্র রাখার ব্যবস্থা করা হবে?” শ্রীলেখার আক্ষেপ, “আমার পিছনে পড়েছে আমার বহুতল আবাসনের বাসিন্দারা। আর পথকুকুরদের পিছনে পড়েছে সুপ্রিম কোর্ট।” উভয়েরই অভিযোগ, এতে হিংসা বাড়বে বই কমবে না! যাঁরা পথকুকুরদের সহ্য করতে পারেন না, তাঁরা আইনকে হাতিয়ার করবেন। আইন দেখিয়ে সমাজছাড়া, এলাকাছাড়া করতে চাইবেন পথকুকুরদের। ওরা অসহায়। মুখ বুজে মেনে নিতে বাধ্য।
পথকুকুরদের স্থানান্তকরণ, খোলা রাস্তায় তাদের অবস্থান নিয়ে অনেক দিন ধরেই নানা জনের আপত্তি। বলা হয়েছে, এর নেপথ্যে রয়েছে দিল্লির রাস্তায় একের পর এক পথকুকুরের কামড়ের ঘটনা। শুক্রবার বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সন্দীপ মেহতা, বিচারপতি এনভি আঞ্জারিয়ার বেঞ্চের নির্দেশ, নির্বীজকরণের জন্য পথকুকুরদের যে সব এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখানে আর তাদের ফেরানো চলবে না। আদালতের নির্দেশে নির্বীজকরণের পর পথকুকুরদের ঠাঁই হবে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রেই।
এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন তথাগত। তাঁর কথায়, “রুগ্ন, অসুস্থ পথকুকুরদের জন্য হাতেগোনা কয়েকটি আশ্রয়স্থল রয়েছে। এর বাইরে সুস্থ পথকুকুরদের থাকার জন্য কোনও আশ্রয়স্থল এখনও নেই। তা হলে এদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে বা রাখা হবে?” একই প্রশ্ন শ্রীলেখার। তাঁরও দাবি, ভারতে পথকুকুরদের জন্য এত আশ্রয়ই নেই। আগের বার পুনর্বাসন দিতে গিয়ে অর্ধেক কুকুরকে মেরে ফেলা হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে তাঁর উপলব্ধি, “পুরোটাই সুপ্রিম কোর্টের ‘অহং’-এ লেগেছে। সেই জায়গা থেকে জোর করে এই আইন বলবৎ করা হল।”
পথকুকুরদের মেরে ফেলার ভয় তথাগতরও রয়েছে। তিনি বলেছেন, “জায়গা দেওয়ার নাম করে পথকুকুরদের চোখের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তার পর তাদের মেরে ফেলে মাংস পাচার হবে না তো? বাইরের দেশে কুকুরের মাংসের কিন্তু প্রচুর চাহিদা।” শ্রীলেখার পাল্টা প্রশ্ন, “রাস্তার কুকুর রাস্তায় থাকবে না তো কোথায় থাকবে?” উভয়ের যুক্তি, আজ পথপশু, কাল হয়তো পথ-আশ্রিতদের উপরে কোপ পড়বে। মানুষ যেখানে জন্মায়, সেই স্থানের উপরে যেমন তার জন্মগত অধিকার, একই অধিকার পথপশুদেরও আছে। ঠাঁইনাড়া হলে মানুষ বাঁচে না, পশুও বাঁচে না।
তথাগত, শ্রীলেখার আরও উপলব্ধি, পথপশুদের থাবা ভোটযন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই ওদের কোনও কিছুতে অধিকারও নেই! ওরা না থাকলেও দেশের নির্বাচনে কোনও প্রভাব পড়বে না। তাই ধরে সরিয়ে দাও! এই উপলব্ধি শুধুই তথাগত বা শ্রীলেখারই নয়। দেবলীনা দত্ত, ঋষভ বসু, তনিকা বসু-সহ টলিউডের একাধিক খ্যাতনামীর। তাঁরা যে দরকারে আবার পথে নামবেন, গর্জে উঠবেন সুপ্রিম রায়ের বিরুদ্ধে— একথা জানাতে ভোলেননি কেউই।