Advertisement
E-Paper

‘হিট-উইকেট’ হল হাসিনা

বোরখায় ঢাকা কয়েক জন মহিলার আড়ালে তিনি এলেন। অর্থাৎ হাসিনারূপী শ্রদ্ধা কপূর। সিনেমা শুরু। দাউদের মুম্বইয়ের ব্যবসা সামলানোর অভিযোগে বোনের কপালে বিস্তর ‘পিনাল কো়ড’। ‘কোর্ট রুম ড্রামা’য় চলল হাসিনার নকাব ওঠানোর চেষ্টা, এলোমেলো পূর্বকথনে।

অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:২০

হাসিনা পার্কার

পরিচালনা: অপূর্ব লাখিয়া

অভিনয়: শ্রদ্ধা কপূর, সিদ্ধার্থ কপূর, অঙ্কুর ভাটিয়া

৩/১০

‘ব্লাস্ট কা ইলজাম হ্যায় তুমহারে ভাই পর, কোই দেশভক্তিকে কাম কা নেহি’— এই একটি সংলাপই সিনেমাটির জন্য যথেষ্ট। দাউদ ইব্রাহিম বা তাঁর বোন হাসিনা পার্কার যেন রয়েছেন সিনে-ময়দানের ‘বল-বয়’ হিসেবে।

২০০৭। বোরখায় ঢাকা কয়েক জন মহিলার আড়ালে তিনি এলেন। অর্থাৎ হাসিনারূপী শ্রদ্ধা কপূর। সিনেমা শুরু। দাউদের মুম্বইয়ের ব্যবসা সামলানোর অভিযোগে বোনের কপালে বিস্তর ‘পিনাল কো়ড’। ‘কোর্ট রুম ড্রামা’য় চলল হাসিনার নকাব ওঠানোর চেষ্টা, এলোমেলো পূর্বকথনে।

সেই কথনে ইব্রাহিম কাসকারের পরিবারের স্কেচ আঁকা হল। তাতে দাদা-বোনের সম্পর্ক, ইব্রাহিম পার্কারের সঙ্গে বিয়ে ইত্যাদি প্রসঙ্গ দ্রুত দেখানো হল। আর তাতেই ছন্দপতন পরিচালক অপূর্ব লাখিয়ার। সবচেয়ে হাস্যকর হাসিনা-ইব্রাহিমের বাসর রাতের দৃশ্যটি। সলজ্জ নববধূ হাসিনারূপী শ্রদ্ধা দৃশ্যটিকে ফুটিয়ে তুলতে যে রকম ঠকঠক করে কেঁপেছেন, তার সঙ্গে ম্যালেরিয়া রোগীর বেশি সাদৃশ্য। এতেই শেষ নয়। একটি দৃশ্যে রান্না পাকাচ্ছেন হাসিনা। কপালে হাত ঠেকিয়ে ঘাম মুছছেন। সেই কপালে না আছে ঘাম, হাতে না আছে হলুদের থুড়ি রান্নার চিহ্ন। মেকআপ শিল্পী সুভাষ সিন্ধের দিব্যি মখমলি ‘গ্ল্যাম-পরশ’ সেখানে।

দ্বিতীয় পর্ব হাসিনার ‘আপা’ হয়ে ওঠার কিস্‌সা। এই কিস্‌সা বলে, হাসিনা পরিস্থিতির শিকার। দুর্জনের দাবি, ‘আপা’ হওয়াটা ‘ডি’-র নাম ভাঙিয়েই। রাতে থানা থেকে ডাক আসা, ‘দেশদ্রোহীর বোন’ তকমা, ছেলে-স্বামীর মৃত্যু— হাসিনার জীবনের সবেতেই দাদার অদৃশ্য দায়। কোর্ট রুমেও তা প্রমাণের চেষ্টা করেন সরকারি আইনজীবী রোহিণী সাতাম (প্রিয়ঙ্কা সেটিয়া)। দুর্বল ‘প্লটে’ সেই চেষ্টাটিও যেন সূত্রধর হাসিনাকে সহযোগিতাই করে। মুম্বই বিস্ফোরণ কাণ্ডে ‘ডি’-দাদাকে ‘ডি-জোন’ করার চেষ্টা একটা পর্ব পর্যন্ত করেন হাসিনা। সিনেমার শেষ তাতেই। প্লটকে জমজমাট করতে অপূর্ববাবু ঠুসে দিয়েছেন সাবেক বম্বের গ্যাং ওয়ারকে। কাসকার ভাই, করিম লালা, পাঠান ভ্রাতৃদ্বয়রা এসেছেন। তবে ইব্রাহিম খুনের জন্য যার দিকে আঙুল ওঠে, সেই অরুণ গাউলির গ্যাং প্রত্যক্ষ ভাবে অনুপস্থিত।

অপূর্ববাবু ন্যূনতম ডিটেলিংয়ে যাননি। তাই জেজে হাসপাতালে গোলাগুলি পর্ব, দাউদের দাদার খুন হওয়া— আর পাঁচটা সিনেমার ঢঙেই। ডোংরি থেকে দুবাই, স্থানবিশেষে আঞ্চলিক রংগুলিও অধরা। দাউদের চরিত্রে সিদ্ধান্ত কপূর হাস্যকর। সাবিরের চরিত্রে সুনীল উপাধ্যায়ও তাই। খানিকটা উতরেছেন ইব্রাহিমের চরিত্রে অঙ্কুর ভাটিয়া। হতাশ করেছেন শ্রদ্ধা। প্রথম অর্ধে যা-ও বা একটা চেষ্টা রয়েছে, দ্বিতীয় অর্ধে গ্যাংস্টার হওয়ার চেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ।

‘ব্যান্ডিট কুইন’, ‘গডমাদার’— মহিলা গ্যাংস্টারদের নিয়ে ছবি কম নেই। আরও একটি নতুন সিনে-চরিত্রায়নের আশা ছিল। তাতে জল ঢাললেন পরিচালক। হাসিনার জীবন সিনে-পিচে ফুলটস বলের মতো। পরিচালক থেকে অভিনেতা, সকলেই হিট-উইকেট হলেন।

সবশেষে একটি সংলাপের কথা। আইনি লড়াইয়ে ‘কু-যুক্তি’র উদাহরণে প্রশ্ন ওঠে, ‘আপনি..কি নিউজপেপার রিপোর্টার?’ সশ্রদ্ধ ভাবে বলা চলে, কুখ্যাত এই দাদা-বোনের সম্পর্কে জানতে এই সিনেমা নয়, বরং ভরসা করা চলে জ্যোতির্ময় দে বা হুসেন জাইদির ‘রিপোর্টেজ’-এ। তাঁদের বইগুলি না ওল্টালে সিনেমাটির ঘটনা পরম্পরাও বোঝা দায়!

Haseena Parkar Apoorva Lakhia Shraddha Kapoor Siddhanth Kapoor শ্রদ্ধা কপূর সিদ্ধার্থ কপূর হাসিনা পার্কার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy