বেহাল সংহতি মঞ্চেই নাটকের আয়োজন। নিজস্ব চিত্র।
এ যেন এক নেই রাজ্যের নাটক। পেশাদারি নাট্যমঞ্চ নেই, শহরের একমাত্র ব়ড় মঞ্চে মেলে না পর্যাপ্ত আলো, নেই মহিলাদের জন্য আলাদা গ্রিন রুম। কিন্তু তবুও ওঁরা থেমে না থেকে স্বল্প পরিকাঠামো নিয়েই নাগাড়ে করে চলেছেন নাটকের চর্চা। ওঁরা কাটোয়ার বিভিন্ন নাট্যদলের সদস্য। অভিযোগ, প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে নাট্যমঞ্চের জন্য বারবার আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি।
কাটোয়ার শিক্ষক তুষার পণ্ডিতের দাবি, প্রায় এক শতাব্দী ধরে শহরে নাট্যচর্চা চলছে। কিন্তু এ যাবৎ কোনও স্থায়ী নাট্যমঞ্চ গড়ে ওঠেনি। অগত্যা একমাত্র ভরসা কাটোয়ার সংহতি মঞ্চ। সেখানেও পরিকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে বলে জানান নাট্য নির্দেশক বাবু চট্টোপাধ্যায়। নাট্য-অভিনেতাদের দাবি, সংহতি মঞ্চে আবহাওয়ার কারণে বছরের প্রায় সাত মাস কোনও নাটক করা যায় না। তা ছাড়া গ্রিন রুম রয়েছে মোটে একটি। সমস্যা রয়েছে মঞ্চের আলো নিয়েও। স্থানীয় এক নাট্য নির্দেশকের কথায়, ‘‘মঞ্চে আলো কম থাকায় নাটকের দৃশ্যায়নে অনেক সময়েই সমস্যা হয়।’’ ‘জাগরী’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংস্থার তরফে অপূর্ব চক্রবর্তী জানান, নাটকের দৃশ্যায়নের জন্য জরুরি বিভিন্ন আসবাবপত্র, খাট, চেয়ারও বয়ে নিয়ে যেতে হয়। তা ছাড়া বাইরে থেকে কোনও মঞ্চ সফল নাটক কাটোয়ায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও খরচে কুলোয় না বলে জানান একাধিক নাট্যকর্মী। তাঁদের বক্তব্য, সংহতি মঞ্চে মাত্র ৭৮০টি দর্শকাসন রয়েছে। তাই বড় বাজেটের নাটক আনা যায় না। অভিযোগ রয়েছে লাউড স্পিকারের গুণমান, শৌচাগারের অবস্থা নিয়েও। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা বা বাইরের কোনও দল কাটোয়ায় এসে নাটক করতে গেলে সমস্যায় পড়ে বলে জানান অপূর্ববাবু। তা ছাড়া ডিসেম্বর-জানুয়ারি থেকে শুরু হয় মঞ্চ বুকিং-এর হুড়োহুড়ি।
তবে এই পরিস্থিতির মধ্যেও কাটোয়ার নাটকের চর্চায় ছেদ পড়েনি। ‘জাগরী’র তরফে বছরে একবার নাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয়। সেখানে যোগ দেয় কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গার নাট্যদল। ২২ জানুয়ারি থেকে ‘কৃষ্টি’ নামে ব্যবস্থাপনায় কাটোয়ায় শুরু হয়েছে ‘সারা বাংলা নাটক প্রতিযোগিতা’। চলবে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। সংস্থার সম্পাদক বুদ্ধদেব মণ্ডল জানান, প্রতিযোগিতায় হুগলি, মেদিনীপুর, বর্ধমান, কলকাতা ও বীরভূমের মোট ১২টি নাট্যদল যোগ দিয়েছে। কাটোয়ায় মঞ্চের সমস্যা নিয়ে সরব হয়েছেন ভিন জেলা থেকে আসা নাট্যকর্মীরাও। যেমন, চন্দননগরের রামকৃষ্ণ মণ্ডল, শান্তিপুরের কৌশিক চট্টোপাধ্যায়দের বক্তব্য, ‘‘এখানে মঞ্চের সমস্যা রয়েছে। তবে স্থানীয় নাট্যকর্মী ও দর্শকেরা নাটকের চর্চায় উৎসাহ হারাননি।’’ উৎসাহ যে রয়েছে তা টের পাওয়া গেল জ্যোৎস্না বিশ্বাস, মনীষা সাঁই নামে বেশ কয়েকজন দর্শকদের সঙ্গে কথা বলে।
তুষারবাবুদের দাবি, ‘‘নাট্যমঞ্চ তৈরির দাবি জানানো হয়েছিল পুরপ্রধান অমর রামের কাছেও। কিন্তু ফল মেলেনি।’’ ‘কৃষ্টি’, ‘জাগরী’, ‘অনুভব’, ‘অন্য চেতনা’ ও ‘রবীন্দ্র পরিষদ’, ‘বইমেলা অছি পরিষদ’-সহ কাটোয়ার বিভিন্ন নাট্যদল ও সাংস্কৃতিক সংস্থার দাবি, অবিলম্বে শহরে গড়ে উঠুক নাট্যমঞ্চ। মঞ্চ পরিচালনার জন্য তৈরি হোক পরামর্শদাতা কমিটি। যদিও কাটোয়ার পুরপ্রধান অমর রামের দাবি, শহরে নতুন কোনও মঞ্চ তৈরির জায়গা নেই। তবে তাঁর আশ্বাস, ‘‘সংহতি মঞ্চের সমস্যাগুলি মেটানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy