দেশের সীমান্তে তাঁরা অতন্দ্র প্রহরী। তাঁরা সেনা জওয়ান। সাধারণ নাগরিকের জীবন ও সম্পদরক্ষায় সদাব্রতী। ভারতের বুকে যুদ্ধ কম হয়নি। স্বাধীনতা-পরবর্তী কালেও রক্ত ঝরেছে অনেক। আর সেই সব ঘটনা, সেনা জওয়ানদের জীবন নিয়ে লেখা হয়েছে অজস্র কাহিনি, সে সব উঠে এসেছে রুপোলি পর্দায়ও।
বরাবরই বলিউডে জনপ্রিয়তা পায় যুদ্ধ, সেনার জীবনকাহিনি। শুধু যুদ্ধ নয়, তার বাইরেও সেনাজীবনের মর্মস্পর্শী কাহিনি উঠে এসেছে এই সব ছবিতে—
‘প্রেম পূজারী’ ছবিতে দেব আনন্দ ও ওয়াহিদা রহমান ছবি: সংগৃহীত
প্রেম পূজারী:
১৯৭০ সালের ২৮ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছিল দেব আনন্দ পরিচালিত ও অভিনীত এই ছবিটি। তাঁর বিপরীতে ওয়াহিদা রহমান। কাহিনি ও প্রযোজনাও ছিল দেবেরই। শচীনদেব বর্মনের সৃষ্টি সুরে মেতেছিল গোটা দেশ।
কাহিনি অনুযায়ী, নায়ক রামদেব বক্সীর বাবা লেফেটেন্যান্ট দুর্গাদাস বক্সী। তিনি চান রামও তাঁর মতো সেনায় নাম লেখাক। কিন্তু রাম প্রকৃতিপ্রেমী। পঞ্জাবের এক গ্রামে তার বেড়ে ওঠা, গ্রামের মেয়ে সুমনের প্রেমে পাগল। একদিন চিঠি আসে রামের নামে— যুদ্ধে যেতে হবে ভারত-চিন সীমান্তে। বাবার সঙ্গে মতবিরোধ সত্ত্বেও যুদ্ধে যেতে হয় রামকে। কিন্তু সে অহিংসার পূজারী, তাই অস্বীকার করে যুদ্ধ করতে। সেনার বিরুদ্ধাচারণ করায় দু’বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হয় রামকে। কিন্তু সেখান থেকেও পালায় সে। ঘুরে বেড়ায় উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ি এলাকায়। শেষ পর্যন্ত মন পরিবর্তন হয় নায়কের। প্রতিবেশী দেশে গুপ্তচরবৃত্তিতে রাজি হয় সে। তার এনে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রক্ষা পায় ভারতীয় সার্বভৌমত্ব। সুমনের সঙ্গে বিয়ে, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের মধ্যে দিয়ে মধুর সমাপতন হয় এ ছবির।
জেপি দত্ত পরিচালিত ‘বর্ডার’ বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় ছবিগুলির একটি। ছবি: সংগৃহীত।
বর্ডার:
১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় জেপি দত্তর ছবি ‘বর্ডার’। ভারতীয় চলচ্চিত্র দুনিয়ায় এক অন্য রকমের সৃষ্টি। সানি দেওল, জ্যাকি শ্রফ, সুনীল শেট্টি, অক্ষয় খন্না, পুনীত ইশার অভিনীত এ ছবির বিষয়বস্তু অবশ্যই ভারতীয় সেনা এবং যুদ্ধ। কিন্তু তারই মাঝখানে ফল্গুধারার মতো বয়ে গিয়েছে মানবিকতার প্রবাহ। এক দিকে ভারতীয় সেনার পরিবার, তাঁদের মা, স্ত্রী, সন্তানদের কথা, অন্য দিকে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই। ছবির একেবারে শেষ ভাগে এসে ভারতীয় মেজর কুলদীপ সিংহ (সানি) মুখোমুখি হন এক সাধারণ পাকিস্তানি সৈনিকের। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে প্রাণভিক্ষা করে। জানায় বাড়িতে রয়েছে তার ছোট্ট দুই ছেলেমেয়ে। পরম মমতায় তাদের নাম জানতে চায় ভারতীয় মেজর। নির্দেশ দেয় নিচুতলার ওই সেনাকে যেন মেরে ফেলা না হয়। তবে কুলদীপ তার কাছ থেকে কৌশলে জেনে নেয় শত্রুবাহিনীর রণকৌশল। এ ছবি শেষ হয় ভারতের জয়ে। কিন্তু ছবিতে তারই মধ্যে চলে গিয়েছে শতেক মানুষের প্রাণ— যেমন ‘বর্ডার’-এর এ পারের, তেমনই ও পারের। অদ্ভুত কারুণ্য মিশে যায় বীর রসাত্মক এই ছবির কাহিনিতে।
‘পান সিংহ তোমর’ ছবিতে প্রশংসিত হয় ইরফান খানের অভিনয়। ছবি: সংগৃহীত
পান সিংহ তোমর:
একেবারে অন্য ধারার ছবি। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত, তিগমাংশু ধুলিয়া পরিচালিত এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল ২০১২ সালে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক জওয়ানের কাহিনি, যিনি খেলাধুলায়ও নাম করেছিলেন, পুরস্কার এনে গর্বিত করেছিলেন দেশকে। কিন্তু অবসরের পর জড়িয়ে পড়েছিলেন এক পারিবারিক সমস্যায়। প্রতিশোধস্পৃহা তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল অন্য খাতে। সেই কাহিনি, মানবিক সংবেদনে প্রকাশ করেছিলেন।
দায়িত্বজ্ঞানহীন যুবক করণ শেরগিলের দায়িত্ববান জওয়ান হয়ে ওঠার কাহিনি ‘লক্ষ্য’। ছবি: সংগৃহীত
লক্ষ্য:
জাভেদ আখতারের লেখা চিত্রনাট্যে ‘লক্ষ্য’ ছবির পরিচালক ছিলেন ফারহান আখতার। ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবিতে দেখা যায় অমিতাভ বচ্চন ও হৃত্বিক রোশনের সঙ্গে প্রীতি জ়িন্টাকে। এ-ও এক জওয়ানের নিজস্ব জীবনকাহিনি। ছবির শুরুতে দেখা যায় দায়িত্বজ্ঞানহীন করণ শেরগিলকে। ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি-তে যোগ দেয় সে। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বেপরোয়া যুবকই হয়ে ওঠে দেশ রক্ষার কাজে ব্রতী।