২০১৫ সালের আশপাশ। কলকাতার প্রথম সারির এক প্রযোজকের মামলা লড়তে তিনি দিল্লি থেকে কলকাতায়। হাই কোর্টে দীর্ঘ কথোপকথন। মামলা জিতলেন তিনি। আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে নিজের চেম্বারে। প্রথম সারির প্রযোজক ফুল আর মিষ্টি নিয়ে দেখা করতে এসেছেন। কথাবার্তা বলে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ইতস্তত করে প্রযোজক বললেন, “একটা কথা বলব স্যর?” ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে তিনি মাথা নাড়তেই প্রযোজকের সপাট দাবি, “আপনার আইনি লড়াই দেখছিলাম। আপনি তো দুর্দান্ত অভিনেতা! কণ্ঠস্বরের ওঠাপড়া, বিরতি, ফের কথা শুরু করা, কখনও ধমক, কখনও ব্যঙ্গ— যেন সিনেমা দেখে উঠলাম। আপনি অভিনয় করবেন স্যর?” “হ্যাঁ, ওটাই বাকি...”, হাসতে হাসতে সে দিন উত্তর দিয়েছিলেন শাসকদলের সাংসদ-আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজনীতিবিদ কুণাল ঘোষ পরিচালক অরিন্দম শীলের ‘কর্পূর’ চরিত্রে অভিনয় করবেন, সম্প্রতি ঘোষণা হয়েছে। আর এক রাজনীতিবিদ তথা শাসকদলের সাংসদ পার্থ ভৌমিককে তো আগেই দাপটের সঙ্গে দেখা গিয়েছে সিনেমার পর্দায় ও নাটকের মঞ্চে। এ বার তাঁকে দেখা যাবে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিতে, ‘শ্রীরামকৃষ্ণদেব’-এর ভূমিকায়। কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আছেন এই ছবিতে। কল্যাণও কি কোনও দিন অভিনয়ে আসবেন? তিনি কখনও প্রযোজক বা পরিচালকের থেকে ডাক পেয়েছেন? প্রশ্ন রেখেছিল আনন্দবাজার ডট কম। তখনই তিনি আগে বলা ওই গল্পটি শোনান। আরও যোগ করেন, “একমাত্র রাজনীতি আর বিনোদন দুনিয়াই উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ। চাইলেই নিজেকে এই দুই মাধ্যমে প্রমাণ করা যায়।”
আরও পড়ুন:
সম্ভবত সেই জন্যই বিনোদন দুনিয়া থেকে একঝাঁক তারকা অভিনেতাকে বিভিন্ন সময়ে শাসকদলে যোগ দিতে দেখা গিয়েছে। ইদানীং রাজনীতিবিদেরাও পা রাখছেন বিনোদন দুনিয়ায়। অনেকেই বলেন, এই আদানপ্রদান নাকি দুই মাধ্যমের জন্যই ভাল নয়...। “কেন নয়?”, কল্যাণ এ বার যেন দুঁদে আইনজীবী! নিজেই ব্যাখ্যা দিলেন, “আমার মতে, স্থায়ী উপার্জন থাকা খুবই জরুরি। রাজনীতির পাশাপাশি যাঁর এটি থাকে, তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত হন না। দেব, শতাব্দী রায়, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় বা আরও যাঁরা অভিনয় দুনিয়া থেকে এসেছেন তাঁদের নামে কোনও দুর্নীতি শুনেছেন? আমি অন্তত শুনিনি! তাই এই আদানপ্রদানকে আমি খারাপ চোখে দেখি না।” যদিও তিনি বিনোদন দুনিয়া থেকে দূরেই থাকবেন, জানিয়েছেন কল্যাণ। “আমার স্থায়ী উপার্জন আইন-আদালত। ওতেই খুশি”, হাসতে হাসতে দাবি তাঁর।
নিয়মিত ছবি দেখেন? কার কার অভিনয় ভাল লাগে? জানতে চাইতেই কল্যাণের রাজনীতিবিদ রূপ প্রকাশ্যে, “আমার প্রত্যেকের কাজ ভাল লাগে। সে তিনি বিনোদন দুনিয়া থেকে রাজনীতিতে আসুন কিংবা রাজনীতি থেকে বিনোদন দুনিয়ায় যান।” একটু থেমে লাজুক গলায় যোগ করলেন, অরুণিমা ঘোষের অভিনয় তাঁর মন ছুঁয়ে গিয়েছে। “ওঁর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে আছে”, বললেন কল্যাণ।