প্রয়াত অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
প্রয়াত অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার। অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে টলিউডে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। বিগত ৩ বছর ধরে ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে ভুগছিলেন অভিনেত্রী। মারণরোগের সঙ্গে লড়াই শেষ হল শনিবার। না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন অভিনেত্রী। অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শোকে আচ্ছন্ন পরিবার। অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন তাঁর সতীর্থরা। শনিবার রাতেই কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে অভিনেত্রীর।
১৩ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত টাটা মেডিক্যাল ক্যানসার সেন্টারে ভর্তি ছিলেন শ্রীলা। তার পর অভিনেত্রীকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। জানিয়েছেন শ্রীলার স্বামী এসএনএম আব্দি। গত বছর নভেম্বর মাসে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় অভিনেত্রীর। তখন বাড়িতেই ছিলেন অভিনেত্রী। অভিনেত্রীর ছেলে সোহেল আব্দি পড়াশোনার সূত্রে লন্ডনে থাকেন। মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তিনি দেশে ফিরে আসেন। শ্রীলার চিকিৎসকই তাঁকে ফিরে আসার কথা বলেন। সোহেল সেই সময় তড়িঘড়ি দেশে ফেরেন মায়ের কাছে।
শেষ বার কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘পালান’ সিনেমায় শ্রীলাকে পর্দায় দেখা গিয়েছিল। তবে পর্দার বাইরে শেষ বার তাঁকে দেখা যায় গত বছর আলিপুর জেল মিউজিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে।
১৯৮০ সালে মৃণাল সেনের ‘পরশুরাম’ ছবির মাধ্যমে অভিনয় জগতে হাতেখড়ি শ্রীলার। তখন শ্রীলা ১৬ বছরের কিশোরী। নাটকের মহড়ায় শ্রীলার অভিনয় দেখেই তাঁকে নিজের সিনেমার অভিনেত্রী হিসাবে বেছেছিলেন মৃণাল। তার পর ‘এক দিন প্রতি দিন’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘খারিজ’-এর মতো উল্লেখযোগ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন শ্রীলা। শাবানা আজমি, স্মিতা পাতিল, নাসিউরুদ্দিন শাহের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নিয়েছেন তিনি।
শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় কাজ করেছেন ‘আরহণ’, ‘মান্ডির’ মতো ছবিতে। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’ সিনেমায় ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের হয়ে কণ্ঠ দিয়েছিলেন শ্রীলা। পর্দার পাশাপাশি মঞ্চাভিনয়েও সাড়া ফেলেছিলেন শ্রীলা। সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘নহবত’ নাটকে শ্রীলার অভিনয় নজর কেড়েছিল। বাণিজ্যিক ধারার ছবিতেও কিন্তু শ্রীলার অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। অঞ্জন চৌধুরির ‘পূজা’ ছবিতে শ্রীলার অভিনয় মনে ধরেছিল দর্শকের। তেমনি হরনাথ চক্রবর্তীর ‘প্রতিবাদ’ ছবিতেও শ্রীলা সমান নজর কেড়েছেন। এই দুটি ছবির হাত ধরেই গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। তবে ইদানীং কাজ কমিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীলা। খানিকটা অসুস্থতার কারণেই পর্দায় শ্রীলাকে বিশেষ দেখা যাচ্ছিল না। শ্রীলার সহকর্মীদের অনেকেরই আক্ষেপ, দক্ষ এবং পেশাদার অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও পর্দায় তাঁকে ঠিকমতো ব্যবহার করা হয়নি। তবে এ সব নিয়ে অবশ্য কখনওই তেমন সরব হননি শ্রীলা। বরাবরই শান্ত, স্থির ছিলেন। কম কথা বলতেন। ঠিক তেমন ভাবেই এই মাঘের শীতে নিঃশব্দে পাড়ি দিলেন পরপারে।
শ্রীলা মজুমদারের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন অভিনেত্রী মমতা শঙ্কর। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে ফোন পেয়ে কান্নাভেজা গলায় তিনি বললেন, ‘‘আমি ভাবতেই পারছি না যে এই খবরটা সত্যি। ‘পালান’ ছবিতে আমরা একসঙ্গে শুটিং করেছিলাম। কিন্তু শ্রীলা যে ক্যানসারে ভুগছিল, সেটা কখনও আমাদের বলেনি। এত কষ্ট চেপে শুটিং করেছে! মুখ ফুটে এক বার সেটা বলেওনি। ভীষণ খারাপ লাগছে। খুবই মনখারাপ করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy