Advertisement
E-Paper

হঠাৎ বুকে অস্বস্তি হলে কী করবেন

উপসর্গ দেখা গেলে অনেকেই অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা ভেবে ভুল করে অ্যান্টাসিড খেয়ে বাড়িতে বসে থাকেন। এঁদের অনেকেই এসব উপসর্গের কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান। বললেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সরোজ মণ্ডল।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ২০:১১
হঠাৎ বুকে ব্যাথা হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ।

হঠাৎ বুকে ব্যাথা হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যথেষ্ট সচেতন বলেই খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসা পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নন। নিঃশ্বাসের কষ্ট, বুকে পাথর চাপিয়ে দেওয়ার মতো অনুভূতি, সঙ্গে দরদর করে ঘাম। ব্যথা ক্রমশ হাত, কাঁধ ও চোয়ালে ছড়িয়ে পড়া, এ রকম উপসর্গ দেখা গেলে অনেকেই অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা ভেবে ভুল করে অ্যান্টাসিড খেয়ে বাড়িতে বসে থাকেন। এঁদের অনেকেই এসব উপসর্গের কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান। কেন না, এই লক্ষণগুলি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ, বললেন এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিয়োলজি বিভাগের প্রধান, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সরোজ মণ্ডল। ১৯৯০ সালে আমাদের দেশে হার্ট অ্যাটাকে ২২ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ লক্ষ ৭০ হাজারে। একটু সচেতন হলেই এই মৃত্যুহার কমানো যায়, বললেন সরোজ মণ্ডল।

হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ

কাঁধে ব্যথা শুরু হয়ে তা হাতে ছড়িয়ে পড়ে। চোয়ালে ব্যথা করে পেটের উপরের দিকে ব্যথা অনেকের ক্ষেত্রে বুকে চাপ ধরা ভাব দিয়ে হার্ট অ্যাটাকের সূত্রপাত হয় হাঁটা চলা বা এক্সারসাইজ চলাকালীন তো বটেই, অনেক সময় বিশ্রামরত অবস্থাতেও বুকে চাপ ধরা ভাব ও শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্ট সহ অন্যান্য উপসর্গ শুরু হতে পারে মাথা ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে মাথা হালকা হয়ে গিয়ে শরীর টলমল করে শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করে, ক্রমশ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা চলে যায় হাত, ঘাড় শক্ত হয়ে যায় ঘাম হয় ও নাড়ির গতি বেড়ে যায়শরীর ঠান্ডা হয়ে যেতে শুরু করেঅনেকে আবার অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অনেকে অ্যান্টাসিড খেয়ে নিজের চিকিৎসা করার চেষ্টা করেন। তা না করে রোগীকে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাইয়ে এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে কাছাকাছি হার্টের চিকিৎসার সুবিধেযুক্ত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

হার্ট অ্যাটাকে জ্ঞান হারালে কী করবেন

যদি হার্ট অ্যাটাকের সময় রোগী অজ্ঞান হয়ে যান, তবে প্রথমে তাঁর নাড়ির গতি বা পালস দেখে নিয়ে কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন বা সিপিআর করতে হবে। রোগীর বুকের উপর থেকে পাম্প করে মুখে ফুঁ দিয়ে কৃত্রিম ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস চালু করাকে সিপিআর বলে। এ ক্ষেত্রে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে আম্বুল্যান্সে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করাতে হবে। অ্যাম্বুল্যান্সের সহায়কদের অনেকেই সিপিআর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।

ঝুঁকি বেশি যাঁদের

হার্ট অ্যাটাক ও হার্টের অসুখ কিছুটা বংশগত। তাই যাঁদের পরিবারে এই অসুখ আছে তাঁদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে বেশি, জানালেন সরোজ মণ্ডল। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বিটিস, রক্তে এলডিএল নামক কোলেস্টেরলের মাত্রাধিক্য স্বাভাবিকের থেকে বেশি ওজন কোমরের চারপাশে প্রচুর চর্বি ও ভুঁড়ি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে তুলনামূলক ভাবে ছেলেদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেশি ধূমপান ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটির অভাব মানসিক চাপ। এই সব সমস্যা থাকলে নিয়মিত হার্ট চেক আপ করানো দরকার।

কী করা উচিত

মানুষের হৃৎপিণ্ড প্রত্যেক দিন এক লক্ষ বার পাম্প করে। কিডনি, ফুসফুস, চোখ বা কানের মতো আমাদের দুটো হার্ট নেই। তাই হার্টের যত্ন নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই রোগীর হার্ট একেবারে থেমে যায়। অথচ একটু সতর্ক হলেই আচমকা মৃত্যু রুখে দেওয়া যায়। হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বুঝলে দ্রুত কাছাকাছি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো উচিত। গ্রামের হাসপাতালেও এখন থ্রম্বোলিটিক থেরাপি করে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা করা হয়। বড় হাসপাতালে নিয়ে যেতে বেশি সময় লাগলে রোগীর অবস্থা সংকটজনক হতে পারে। কাছাকাছি হাসপাতালে থ্রম্বোলিটিক থেরাপি করে নিয়ে পরে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করার কথা ভাবা যেতে পারে। যে কোনও ভাবে হার্টের পেশিতে রক্ত চলাচল বজায় রাখতে হবে। যাঁদের ইস্কিমিয়া আছে বা এক বার হার্ট অ্যাটাকের পর বাইপাস সার্জারি হয়েছে, অনেক সময় তাঁদের বারে বারে হার্ট ফেলিয়োর হয়। সিআরটি ডিভাইসের সাহায্যে চিকিৎসা করে এই সমস্যা এড়ানো যায়।

হার্ট ভাল রাখতে ধূমপান ছাড়ুন

হার্টের অসুখের একটা বড় রিস্ক ফ্যাক্টর ধূমপান। অন্যান্য অনেক অসুখের জন্যেও দায়ী এই নেশা। সিগারেট বিড়ি টানার বদভ্যাস ত্যাগ করলে আচমকা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও কয়েকটি ক্যানসারের হাত এড়ানো যায় সহজেই। এছাড়া বাড়তি ওজন ও ভুঁড়ি হার্ট অ্যাটাকের জন্যে দায়ী। ওজন ঠিক রাখতে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম অথবা মর্নিং বা ইভিনিং ওয়াক, ফাস্ট ফুডের বদলে বাড়িতে রান্না টাটকা খাবার, ফল খাওয়া, অকারণে টেনশন না করা ইত্যাদি কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। বংশে হার্টের অসুখ ও আচমকা হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকলে নিয়মিত চেক আপ ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

আরও পড়ুন :

Heart Attack Chest pain Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy