Advertisement
E-Paper

ঘণ্টায় ঘণ্টায় দিন লুব্রিকেটিং আইড্রপ

সারা দিন অফিস। রাতজেগে কোপা আমেরিকা। শরীরটা ঠিক রাখতে কী করবেন? লিখছেন অদিতি ভাদুড়ি।বল পায়ে দৌড়চ্ছেন নেইমার। মাঠ দাপাচ্ছেন ভিদাল-ভার্গাসরা। ডাগ আউটে বসে অধিনায়ক মেসি পরামর্শ দিচ্ছেন জাভিয়ের পাস্তোরকে। এ সব হচ্ছে কোথায়? কেন, কোপা আমেরিকা দেখছেন না নাকি? ওহ্, রাত জেগে খেলা দেখবেন। পরের দিনই তো অফিস।

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০০:০০

বল পায়ে দৌড়চ্ছেন নেইমার।

মাঠ দাপাচ্ছেন ভিদাল-ভার্গাসরা।

ডাগ আউটে বসে অধিনায়ক মেসি পরামর্শ দিচ্ছেন জাভিয়ের পাস্তোরকে।

এ সব হচ্ছে কোথায়?

কেন, কোপা আমেরিকা দেখছেন না নাকি?

ওহ্, রাত জেগে খেলা দেখবেন। পরের দিনই তো অফিস। সেখানে আবার ঘুমোলেই বসের চোখরাঙানি।

ভাবছেন, রাত জেগে খেলা দেখার ধকল শরীর কি নিতে পারবে?

মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. সুনীত বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু সতর্ক করলেন। ‘‘শরীরের সার্কাডিয়ান রিদমে গোলমাল মানেই তো পর দিন খারাপ পারফর্ম্যান্স। এমনও হতে পারে গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়লেন। সে জন্য যাঁদের রাতে বেশি জল খাওয়া মানা, তাঁরা জল কম খান। ওযুধ খেতে ভুলবেন না। আর হ্যাঁ, ম্যাচ দেখার ফাঁকে ঠান্ডা পানীয় একদম নয়,’’ বলেন ডা. বন্দ্যোপাধ্যায়। কথায় কথায় আরও জানান সকালের ওয়ার্কআউট কিন্তু একদম মিস করা চলবে না।

শহরের আর এক নামজাদা বেসরকারি হাসপাতাল শিল্পগোষ্ঠীর কার্ডিওলজিস্ট ডা. শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাঁরা যেন তা চেক করে নিয়ে তবেই খেলা দেখতে বসেন। হার্টের অসুখ যাঁদের রয়েছে তাঁরাও তাই। ‘‘দেখুন যাঁদের বয়স কম রাতজাগাটা তাঁদের খুব একটা অ্যাফেক্ট করবে না। তবে খেলার মাঝেমধ্যেই টুকটাক স্ন্যাকস বা অ্যালকোহলটা না খেলেই ভাল। আর খেলেও সেটা মাত্রা রেখে। অতিরিক্ত নয়,’’ বলেন তিনি। কথায় কথায় আরও জানান, বাড়িতে তৈরি ড্রিঙ্কস (কার্বোনেটেড নয়), হাল্কা চা-কফিও চলতে পারে। কিন্তু বয়স্ক মানুষরাও তো খেলা দেখতে চান। তাঁরা কী করবেন? ‘‘অবশ্যই দেখবেন। আর ওঁদের যে পরদিন সকালে উঠেই অফিস দৌড়তে হবে তা তো নয়। তবে হ্যাঁ, শরীর যতটা নিতে পারে, ততটাই দেখুন। জোর করে রাত জেগে দেখবেন না,’’ সতর্ক করেন ডাক্তার বন্দ্যোপাধ্যায়।

বেশির ভাগ ম্যাচই ভারতীয় সময় ভোর তিনটে আর সাড়ে পাঁচটা। তার পর আবার খেলা দেখার উত্তেজনায় হরমোনের বাড়তি লাফালাফি। এদিকে খেলাটাকেও কি আর মিস করা যায়? কী করবেন তা হলে!

এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা. সুজয় ঘোষকে একটু যেন চিন্তিত শোনাল। ঘুমের দফারফা। তার পর আবার রাতজাগার চোটে পেটের হালও খারাপ। ‘‘দেখুন ঘুমটা তো দরকারই। কিছুটা হলেও ঘুমিয়ে নিতে হবে। নইলে সাঙ্ঘাতিক ক্লান্ত হয়ে পড়বেন অফিসে। আর একান্তই রাত জাগলে সারা দিন হাল্কা খাবার খান।’’ সুজয়বাবুর মতে ঝামেলাটা বেশি হয় ডায়াবেটিক রুগিদের নিয়ে। ‘‘ডায়াবেটিক রুগিরা রাত জেগে খেলা দেখার মাঝে মাঝেই খেয়ে নেন। ওষুধের টাইমও ঠিকঠাক থাকে না। ওষুধের সময়টা সে ক্ষেত্রে রি-অ্যাডজাস্ট করতে হবে,’’ স্পষ্ট জানান ডা. ঘোষ।

রাতজেগে খেলা দেখবেন। এদিকে সকালে জিম, ওয়ার্কআউট?

ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়ের মতে উপায় আছে। ওঁর মতে রাতজেগে খেলা দেখলে ওয়ার্কআউটের সময়টা বদলে নিতে হবে। ‘‘সন্ধে নাগাদ একটা রিকভারি ওয়ার্কআউট করুন। অনেকটা লেট-নাইট ম্যাচ শেষ করা আইপিএল ক্রিকেটারদের মতো। দাঁড়িয়ে ব্রিদিং এক্সারসাইজ।’’ আর ভোররাতে খেলা শেষ হলে তোয়ালে ভিজিয়ে ঘাড়, বগল, পেট ভালো করে মুছে নিলে আপনাআপনি ঘুম আসবে। অন্তত ঘণ্টাদুয়েক ঘুমিয়ে নিতে হবে তখন।

কিন্তু ঝিমুনি কাটাতে, শরীরকে চাঙ্গা রাখতে কি আরও কিছু ওয়ার্কআউট করা যায়?

চিন্ময়বাবুর মতে উপুড় হয়ে কোমর মাটি থেকে তুলে পায়ের পাতা মাটিতে রেখে শরীরটা ত্রিকোণাকার করতে হবে। যাকে বলে ডাউনওয়ার্ড ফেসিং ডগ। এতে পিঠ আর কোমরের পেশি শিথিল হয়ে রিল্যাক্সড ভাব আনবে শরীরে। আর একটা সহজ ওয়ার্কআউটও করতে পারেন। মেঝেতে শুয়ে কোমরটা মাটিতে রেখে পা দু’টো সোজা তুলে দেয়ালে রাখবেন। তিন মিনিট এ ভাবে থাকবেন। রাতজাগার ক্লান্তি কেটে যাবে নিমেষে।

কিন্তু সারা রাত তো আর বসে খেলা দেখা দেখতে পারবেন না। মনে হতেই পারে যাই, একটু গড়িয়ে নিই। বা এসির মধ্যে বালিশে হেলান দিয়ে টিভিটা দেখি। বা চেয়ারে আয়েশে হেলান দিয়ে হাতে কফির কাপটা নিয়ে। ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ ডা. মৌলিমাধব ঘটক কিন্তু সতর্ক করলেন, কোমর-ঘাড় বা পিঠ ব্যথায় ভোগা মানুষদের। ‘‘বালিশে হেলান দিয়ে বা শুয়ে একদম খেলা দেখবেন না। চেয়ারে টানটান হয়ে বসুন। কাঠের চেয়ার হলে তো কথাই নেই। আর এমনি গদিওয়ালা চেয়ার হলে তাতে একটা বালিশ রেখে পিঠ হেলান দিন। এতে শিরদাঁড়াটা ঠিক পজিশনে থাকবে। আর মাঝেমাঝেই উঠে পায়চারি করে নিন।’’ তবে ডা. ঘটক আরও জানালেন ঘাড়-কোমরের ব্যায়াম করাটা মাস্ট। এতে কোমর আর ঘাড়ের পেশি কন্ডিশনড হয়। টোনড হয়। অল্পবয়সিদের যদিও এই সমস্যাগুলো যথেষ্টই কম।

এত কিছু তো হল। কিন্তু এটা কি ভেবেছেন মেসি, স্যানচেজদের গোল দেখতে চোখগুলো তো খোলা রাখতে হবে। সারা দিন অফিস। তার পর টানা রাতজাগা। চোখ জ্বালা, ক্লান্তি... কী করা যায়!

মেডিক্যাল কলেজের অপথ্যালমোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হিমাদ্রি দত্ত বললেন উপায় একটাই। পারলে সন্ধেবেলা টেনে ঘুমিয়ে নিন। কিন্তু যাঁরা রাত অবধি কাজ করবেন তাঁদের তো আর ঘুমনোই হবে না। ‘‘আর্টিফিশিয়াল টিয়ার্স মানে লুব্রিকেটিং ড্রপ দিতে হবে ঘণ্টায় ঘণ্টায়। কারণ কম্পিউটারে টানা কাজ। তার পর টিভি। না ঘুমোলে চোখ জ্বালা করবেই। চোখ ড্রাই-ও হয়ে যাবে,’’ বলেন ডা. দত্ত।

আবার কী ভাবছেন?

যান বাড়ি গিয়ে খেয়েদেয়ে রেস্ট নিন একটু। টিভিটা চালিয়ে বসতে হবে তো?

কোপা আমেরিকার নেক্সট ম্যাচ শুরু হল বলে...

copa america cup 2015 aditi bhaduri lubricating eye drops dr sunit bandyopadhyay ananda plus latest news ananda plus special lubricating eye drop overnight football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy