একসময় ভাদ্রমাসের সংক্রান্তির আগেই ভাদুগানের দল নিয়ে বেরিয়ে পড়ত। গাঁয়ের পথে, ভাদুর জীবনের সুখদুঃখের কথা বলা হতো গানে। দরদিয়া কণ্ঠে শোনা যেত ভাদুর সুরে, ‘‘ভাদুমণি দুখ পাঁইয়েছ্যে বেথা তাকে দিও না/ ভাদু বিটি বড় দুখী, তুমরা কিছু বইল্য না।’’
সে দিন গিয়েছে! বরাত জোরে এখন গাঁয়ের পথে দেখা মেলে ভাদুদলের। ভাদুগানের সেই দল ভাঙা আর গড়ার গল্প নিয়ে শনিবার প্রায় ৩০ জন শিল্পী-কলা কুশলী নিয়ে অনুষ্ঠিত হল আসর নাট্যমের নিজস্ব প্রযোজনায়, ফাল্গুনী ভট্টাচার্যের ‘মধুগাঁয়ের, সাকিন রতনপুর’ অবলম্বনে বিজয় কুমার দাস পরিচালিত ‘ভাদু কথা’। নাটকের গানে সুর দিয়েছেন জেলা অন্যতম বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তি ও সুরকার সিউড়ির রজ সাহা।
জীতেন সিংহ, বিকাশ মণ্ডল, শিশির দাস-প্রমুখ জেলার সঙ্গীত জগতের শিল্পীরাও এই নাটকে অংশ নিয়েছিলেন। নাটকের গল্পে, গ্রামের বাসিন্দা মধুসূদন ভাদুগান করেন। মধুর বাবা ঢুলি জগৎপতি। তার এই ভাদুরদল নিয়ে সবাই ব্যঙ্গ করে। কিন্তু মধু স্বপ্ন দেখে, এই ভাদুর দল নিয়ে সে একদিন কলকাতায় পা রাখবে। এরপর পঞ্চায়েতের ভাদুগানের প্রতিযোগিতায় নাম দেয় মধু। গল্প এগোয়।
জেলার লোক সংস্কৃতির শিল্পীরাও নাটকটির এ দিন প্রশংসা করেছে।
ইদানিং লোক সংস্কৃতি মঞ্চে কিংবা সরকারি অনুষ্ঠানে যে ভাদুর দেখা মেলে, তার সুর ও কথা উন্নয়নের ধুয়োয় বাধা। ছোট্ট একরত্তি যে আঞ্চলিক দেবী, যিনি আদিবাসী অধ্যুষিত জঙ্গলমহল আর মানভূমের ঘরে ঘরে পূজিতা, কোথায় তাঁর কথা! কোথায় বা রাজকুমারী ভদ্রাবতী? বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম জেলার কিছু অংশে আর মানভূম ঘেঁষা বর্ধমানের কিছু এলাকা ছাড়া ভাদু এখন হারানো এক লোক-গান।
সাঁইথিয়া পুরসভার রবীন্দ্র ভবনে ‘নিহার-স্মৃতি নাট্যৎসব’ নামে বসেছে জেলার নাটকের আসর। সাঁইথিয়ার আসর নাট্যমের এটি বাইশ’তম নাট্যৎসব। এবারের এই নাট্যৎসব শম্ভু মিত্র ও বিজন ভট্টাচার্যর স্মৃতিতে উৎসর্গিত। বিভিন্ন লোক আঙ্গিকের নাটক নিয়ে এই উৎসবে আসর নাট্যম ছাড়াও লাভপুরের দিশারী সাংস্কৃতিক চক্র এবং হলিশহরের ইউনিটি মালঞ্চ অংশ নিয়েছে।
দুদিনের তিনটি নাটক সাঁইথিয়া শহরের নাট্যপ্রেমী প্রয়াত মিনতী বন্দোপাধ্যায়, প্রয়াত শৈলেন দাস ও প্রয়াত বাসন্তীরাণি দেবীর স্মৃতিতে উৎসর্গিত। সংগঠনের পক্ষে বিজয়বাবু জানালেন “ভাদু গানের দলের ভাঙা গড়া নিয়েই এই নাটকের বিষয় বস্তু। ভাদুগান এখন অবলুপ্তির পথে। এ জাতীয় লোক আঙ্গিকের গানের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের তেমন পরিচয় নাই। সেই জায়গা থেকেই এই নাটককে আমরা নির্বাচন করেছি। আগামীকাল যে নাটক দুটি পরিবেশিত হবে সেখানেও লোক আঙ্গিকের গানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”
আগামীকাল লাভপুরের দিশারী সাংস্কৃতিক চক্র পরিবেশন করবেন তারাশঙ্করের কাহিনি অবলম্বনে বাউল ও কীর্তন বিষয়ক নাটক ‘বাউল’। এবং হালিশহরের ইউনিটি মালঞ্চ পরিবেশন করবেন মালদহের গম্ভিরা গান বিষয়ক নাটক ‘গণেশ গম্ভিরা’।