Advertisement
E-Paper

দেবীর কোপ, পিশাচিনীর বিভীষিকা! চেনা গল্পে কেমন ‘ভোগ’ পরিবেশন করলেন পরমব্রত?

পুজোআচ্চায় বিশ্বাস না করা কমিউনিস্ট অতীন স্বপ্নাদেশ পেয়ে নিজের মনের মতো করে এক দেবীমূর্তির পুজো করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে সেই দেবীমূর্তিই হয়ে ওঠে অতীনের মা। সেই অসীম দেবীভক্তির কারণেই অতীন এবং তার নিকটজনের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। ভুল পথে দেবতার আরাধনা কী ভাবে মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ‘ভোগ’ সে গল্পই বলে।

শ্রুতি মিশ্র

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৫ ১৬:১০
Parambrata Chattopadhyay’s Bhog web series poster starring Anirban Bhattacharya and Parno Mitra

‘ভোগ’ ওয়েব সিরিজ়ের পোস্টারে অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং পার্নো মিত্র। ছবি: সংগৃহীত।

বেশ কয়েক বছরের পুরনো গল্প। রেডিয়োতে নাটক আকারে প্রচারিত হয়ে শ্রোতাদের কাছে বিপুল প্রশংসা অর্জন করেছে। বড় পর্দায়ও সেই চেনা গল্প নিয়ে কাজ হয়ে গিয়েছে। অতিপরিচিত কাহিনি দর্শকের সামনে নতুন করে নিয়ে আসার কাজ সহজ নয়। সেই কাজ করলেন বলি অভিনেতা এবং পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। অভীক সরকারের লেখা ‘ভোগ’ গল্প নিয়ে ওয়েব সিরিজ় পরিচালনা করেছেন তিনি। মুখ্যচরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং পার্নো মিত্র। চেনা গল্প আবার রেঁধে কেমন ‘ভোগ’ পরিবেশন করলেন পরমব্রত?

পূজারী বেশে অনির্বাণ হাতজোড় করে বসে রয়েছেন। তাঁর মাথায় হাত দিয়ে সারা গায়ে সবুজ রং মেখে অনির্বাণের পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পার্নো। ‘ভোগ’ ওয়েব সিরিজ়ের পোস্টার মুক্তি পেতে না পেতেই হাসির খোরাক হয়ে উঠতে শুরু করেছিলেন পার্নো। সত্তর বা আশির দশকের ইংরেজি কমিক্‌স বইয়ে কিছু চরিত্রকে এই রঙে দেখা যেত। তাই হরর ঘরানার সিরিজ়ে ‘সবুজ পার্নো’কে দেখে কেউ তাঁর সঙ্গে ‘শি-হাল্ক’-এর তুলনা করেছেন, কেউ আবার বলে ফেলেছেন ‘গামোরা’। তবে এ তো অতিমানব (সুপারহিরো) কোনও চরিত্র নয়! পার্নো এই সিরিজ়ে পিশাচিনী। অনির্বাণ অভিনীত চরিত্র অতীন কলকাতার নামজাদা সংস্থার সেল্‌স বিভাগের কর্মী। কর্মপরায়ণ, হাসিখুশি অতীন সকলের ভালবাসার পাত্র। মাতৃসম পুষ্পরানি এবং বাবার বন্ধু ভবেশ— এই দুই অভিভাবকের শাসনে-আহ্লাদে দিব্যি দিন কেটে যায় অকৃতদার অতীনের।

Anirban Bhattacharya in Bhog Web Series

‘ভোগ’ ওয়েব সিরিজ়ের একটি দৃশ্য়ে অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত।

শখ বলতে বন্ধু সুবেশের দোকান থেকে পুরনো জিনিসপত্র কেনা। সেই দোকানেই এক দেবীমূর্তি চোখে পড়ে যায় অতীনের। পুজোআচ্চায় বিশ্বাস না করা কমিউনিস্ট অতীন স্বপ্নাদেশ পেয়ে নিজের মনের মতো করে মূর্তিটির পুজো করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে সেই দেবীমূর্তিই হয়ে ওঠে অতীনের মা। অসীম দেবীভক্তিই অতীন এবং তার নিকটজনের জীবনে অন্ধকার নিয়ে আসে। ভুল পথে দেবীর আরাধনা কী ভাবে মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, ‘ভোগ’ সে গল্পই বলে।

পরিচালক পরমব্রত ওটিটির পর্দায় বিগত কয়েক বছর ধরে হরর ঘরানার সিরিজ় উপহার দিয়ে চলেছেন। ইতিমধ্যেই তাঁর পরিচালিত ‘পর্ণশবরীর শাপ’ এবং ‘নিকষছায়া’ হরর সিরিজ় দু’টি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের হাত ধরে দর্শকের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।

Parno Mitra in Bhog Web Series

‘ভোগ’ ওয়েব সিরিজ়ের একটি দৃশ্য়ে পার্নো মিত্র। ছবি: সংগৃহীত।

‘ভোগ’ সিরিজ় শুরু হতেই চোখে পড়ে অনির্বাণকে। চরিত্রের উত্থান-পতনের সঙ্গে অনির্বাণ যেন নিজেকে একেবারে মিশিয়ে ফেলেছেন। তাঁর অভিব্যক্তি কখনও ভয় ধরায়, কখনও আবার অনির্বাণের কারণে অতীনকে পাশের বাড়ির ছেলে বলে মনে হয়। অনির্বাণের বিশ্বাসযোগ্য অভিনয়ের উপর নির্ভর করে সিরিজ় এক একটি পর্ব ধরে এগিয়ে যেতে থাকে। অভিনেতার পারদর্শিতায় দর্শক যেন চুম্বকের মতো ‘ভোগ’-এর সম্ভোগে প্রবেশ করতে থাকে। পার্শ্বচরিত্রে সুদীপা বসু, রজতাভ দত্ত এবং অতিথি চরিত্রে শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের অভিনয়ও যথাযথ। অতীনের অবাঙালি বন্ধু সুবেশও ভাঙা ভাঙা বাংলা-হিন্দিতে বেশ ভালই সংলাপ বলেছে। একটি বারের জন্যও মনে হয়নি যে তিনি বাঙালি নন।

হরর ঘরানার সিরিজ়ে কাহিনির মাঝে প্রবেশ করেন ‘পিশাচিনী’ পার্নো। পোস্টার মুক্তির পর তাঁকে ঘিরে যা হাসিঠাট্টা শুরু হয়েছিল, পার্নো তাঁর অভিনয় দিয়ে সব ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়েছেন। ‘সবুজ’-এর লেশমাত্র রাখেননি তাঁর চরিত্রে। আবহসঙ্গীত নির্দেশনার জন্য নবারুণ বসুর প্রশংসা প্রাপ্য।

মূল কাহিনি থেকে চিত্রনাট্যে নূন্যতম পরিবর্তন করা হলেও তা ছন্দে ব্যাঘাত ঘটায়নি। বরং এই স্বাদবদল মন্দ লাগবে না। তবে যে দেবীমূর্তিকে ঘিরে ছ’পর্বের সিরিজ় জুড়ে এত বিভীষিকা ছড়ানো হয়েছে, তার মূর্তির মধ্যে তেমন ছাপই ফুটে উঠল না। এমন আকাশছোঁয়া দামের প্রাচীন দেবীমূর্তি কিউরিয়ো শপ থেকে কোনও যত্নআত্তি ছাড়াই দিব্যি সিটবেল্ট লাগিয়ে গাড়িতে চড়ে বসল। মনে প্রশ্ন জাগে, এই মূর্তি কি তবে অপটু হাতে সবুজ রঙে ডোবানো কোনও প্লাস্টিকের মূর্তি! দর্শকমনে সেই দেবীমূর্তি কতটা ভয়-ভক্তির সঞ্চার করতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

প্রায় সম্পূর্ণ সিরিজ় জুড়েই পোশাকের মধ্যে অবিন্যাস দেখা গিয়েছে। নিজেদের ইচ্ছামতো কোনও চরিত্র গরমের পোশাক পরে ঘুরছে, কেউ আবার একই সময়ে সোয়েটারের উপর কোট চাপিয়ে। ফলত শীত-গ্রীষ্মের মধ্যে অজান্তেই বিরোধ লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

Bhog Web Series rating card

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কথায় রয়েছে, যার শেষ ভাল তার সব ভাল। অন্তিম পর্বে আসল রূপ বেরিয়ে এসেছে পিশাচিনীর। তবে পার্নো সর্বস্ব দিয়ে অভিনয় করলেও তাঁর পরিশ্রম এবং সিরিজ়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে দায়িত্ব নিয়ে জল ঢেলেছে বালখিল্য মেকআপ এবং হাস্যকর ভিএফএক্স। ভয়ধরানো দৃশ্য যদি ভয়ই না ধরাতে পারে, তা হলে আর হরর ঘরানার মান থাকে কী করে? কম সময়ের মধ্যে কাহিনির দুর্দান্ত বাঁধন, অসাধারণ অভিনয় দিয়ে ‘ভোগ’ পরিবেশন করলেন পরমব্রত। সে মহাভোগ পেট ভরালেও শেষপাতের পদ মন তৃপ্ত করতে পারল না।

New Web series New Bengali web series Parambrata Chatterjee parambrata chattopadhay Anirban Bhattacharya Parno Mitra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy