কোয়েল মল্লিক নাকি খুব ‘স্বার্থপর’? অন্নপূর্ণা বসু পরিচালিত তাঁর আগামী ছবি মুক্তি পাচ্ছে দীপাবলিতে। তার আগে এমনই প্রশ্ন ঘুরছে টলিপাড়ায়। গুঞ্জনের উত্তর দিতে শনিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি ছবির নায়িকা।
ছবিতে কোয়েল কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়েও ভীষণ ঘরোয়া। চিরাচরিত ছক ভেঙেছেন ‘স্বার্থপর’ ছবিতে। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি মধ্যমণি। তাঁকে ঘিরে রঞ্জিত মল্লিক, অনির্বাণ চক্রবর্তী, ইন্দ্রজিৎ বসু, সুরকার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, গায়িকা ইমন চক্রবর্তী, কাহিনি-চিত্রনাট্যকার স্বদেশ এবং পরিচালক নিজে। প্রযোজনায় সুরিন্দর ফিল্মস।
আগুনরঙা সিল্কের শাড়িতে ঝলমলে নায়িকা। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনিই সাংবাদিকদের প্রশ্ন করলেন, “ছবির ট্রেলার দেখেছেন আপনারা? কেমন লাগল?”
সন্তোষজনক উত্তর পেয়ে খুশির আভা ছড়াল চোখেমুখে। কিন্তু অভিনয় করতে করতে কি এতটাই খুশি হতে পেরেছিলেন? পুরনো স্মৃতি ভর করেনি যৌথ পরিবারের কন্যের মনে? কোন দৃশ্য তিনি কেঁদে ফেলেছেন?
কোয়েলকে প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। উত্তর দিতে গিয়ে নায়িকা লুকোচুরির আশ্রয় নেননি। মেনে নিয়েছেন, কিছু দৃশ্য তাঁকে খুব নাড়া দিয়েছে। তাঁকে কষ্ট দিয়েছে। বিশেষ করে ভাইবোনের আইনি যুদ্ধের দৃশ্য। “আমার ভাই বা বোন নেই। কিন্তু আমিও যে যৌথ পরিবারের মানুষ! ফলে, ভাইবোনের মধ্যে এই টানাপড়েন খুব ভাল বুঝতে পারি”, দাবি তাঁর। সেই সমস্ত দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে তাই চোখে গ্লিসারিন দিতে হয়নি। তিনি নিজেই কেঁদে ফেলেছেন।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি ইন্দ্রজিৎ বসু, কোয়েল মল্লিক, রঞ্জিত মল্লিক, অনির্বাণ চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।
দৃশ্য থেকে বেরিয়ে এসে তাঁর মনে হয়েছে, “ভাগিস্য মল্লিকবাড়ি এ রকম নয়! আমার বাবারা একদম অন্য শিক্ষায় শিক্ষিত। এতজন ভাইবোন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ আইন-আদালতের দ্বারস্থ হননি।” কখনও এটাও কি মনে হয়েছে, ভাগ্যিস তাঁর কোনও ভাই বা দাদা নেই! নইলে তাঁকেও হয়তো নিজের অধিকার চেয়ে এ ভাবেই আদালতে ছুটতে হত। কোয়েল অবশ্য এই বক্তব্য নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, “প্রথমত, অপর্ণা কিন্তু নিজের স্বার্থ নয়, নিজের অনুভূতি রক্ষা করতে আদালতে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, কিছু ভাইবোনের মধ্যে আইনি লড়াই হয়। আবার বহু ভাইবোন আজীবন এই জটিলতার বাইরে।” তাই দাদা বা ভাই না থাকায় তিনি নিরাপদ— এই ধরনের অনুভূতি তাঁর মনে জন্মায়নি।
আবার এই জায়গা থেকেই তাঁর প্রার্থনা, “এই ছবি করার পর থেকে একটাই প্রার্থনা জানাচ্ছি, কোনও দাদা-ভাই, বোন বা ভাইবোনকে যেন এ ভাবে আইনের দ্বারস্থ হতে না হয়।”
আর কবীর-কাব্য? কোয়েল একা হলেও তাঁর দুই সন্তান। ভাইবোন একসঙ্গে বড় হচ্ছে। আগামী দিনে ওরা এই জটিলতার বাইরে থাকবে তো? এ রকম কোনও শঙ্কা তাঁর মনে তৈরি হয়েছে?
এ বার নায়িকা নন, একজন মা উত্তর দিলেন। বললেন, “কবীর-কাব্যকে সে ভাবেই বড় করার চেষ্টা করব, যাতে কবীর বিশ্বাস করে, বোন ওর ক্ষতি চাইতে পারে না। একই বিশ্বাস কাব্যকেও করতে হবে। দাদা যা বলছে সেটা ভালর জন্যই বলছে। আশা করি, তা হলেই এই জটিলতা কোনও দিন ওদের জীবনে ছায়া ফেলবে না।” একটু থেমে যোগ করলেন, “শুধুই কবীর-কাব্য নয়, সমস্ত ভাইবোনের মনে পর্দার ‘অপর্ণা’ যদি এই আস্থার জন্ম দিতে পারে তবেই বুঝব, এই ছবিতে আমার অভিনয় সার্থক। সেটাই আমাদের সাফল্য।”