আজ সোহমের জন্মদিন। সকাল থেকেই আমার ব্যস্ততা। জন্মদিনটা সোহম প্রত্যেক বছর পরিবারের সঙ্গেই কাটাতে পছন্দ করে। আমারও বিশেষ পরিকল্পনা থাকে ওকে নিয়ে।
সোমবার রাতে সোহমের জন্য একটা সারপ্রাইজ় পার্টির আয়োজন করেছিলাম। সেখানে পরিবারের সদস্যেরা ছাড়াও ওর ছোটবেলার বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কেক কেটে আমরা সকলে খুব ভাল সময় কাটিয়েছি। তবে এটাও জানিয়ে রাখি, জন্মদিন আলাদা করে উদ্যাপন করতে সোহমের খুবই অনীহা। বাড়িতেই থাকতে পছন্দ করে। তবে আমরা উদ্যোগী হলে আর আপত্তি করে না।
আরও পড়ুন:
জন্মদিনে সোহম নিয়ম করে কতগুলো জিনিস করতে পছন্দ করে। যেমন ও মন্দিরে যায়। এ বারেও লেক কালীবাড়িতে আমরা ভোগের আয়োজন করেছি। কালীঘাট মন্দিরেও যাওয়ার চেষ্টা করে। প্রত্যেক বছর জন্মদিনে আমি নিজের হাতে সোহমের জন্য রান্না করার চেষ্টা করি। মা রাঁধেন পায়েসটা। মঙ্গলবার ও নিরামিষ খায়। তাই এ বছরের জন্মদিনে কোনও আমিষ পদ রাখতে পারছি না। সোহম খুবই খাদ্যরসিক। তাই খাওয়ার পাতে পোলাও, পনির এবং আলুপোস্ত রাখছি এ বার। তবে লুচি এবং আলুর দম সোহমের অত্যন্ত প্রিয়। পাশে বিরিয়ানি থাকলেও হয়তো আগে লুচি-আলুর দমটাই ও খাবে। সেটাও আজকের মেনুতে রয়েছে।
জন্মদিনে উপহার নিয়ে এখন আলাদা করে খুব বেশি পরিকল্পনা করতে পারি না। যদিও আজকে ওর জন্য একটা বিশেষ কেকের বরাত দেওয়া হয়েছে। সেটা সন্ধ্যায় আসবে। তা ছাড়া বাবার জন্য কেক নিয়ে বাচ্চাদের একটা আলাদা উৎসাহ। সন্ধ্যায় সকলের সঙ্গে কেক কাটবে সোহম। তার আগে বাচ্চারা আমার সঙ্গে বেরোবে সোহমের জন্য উপহার কিনতে।
সময়ের সঙ্গে সোহমের দায়িত্ব বেড়েছে। অভিনয়, রাজনীতি এবং এখন প্রযোজনা। তাই অনেকেই ভাবতে পারেন যে পরিবারকে ও হয়তো সময় দিতে পারে না। এটা অত্যন্ত ভুল ধারণা। সোহমকে আমি ‘ফ্যামিলি পার্সন’ হিসেবেই উল্লেখ করতে চাই। কারণ কাজের বাইরে পরিবার ছাড়া কিছুই বোঝে না ও। যখন আমার বয়স কম ছিল, তখন পরিবারকে সময় না দেওয়ার জন্য কখনও কখনও আমার একটু মনখারাপ হত। কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছি, কাজের প্রতি ওর একটা আলাদা দায়িত্ব রয়েছে। একটা সময় ছিল, যখন কেরিয়ারে সেই অর্থে সাফল্য ছিল না। চাইলেও সব জায়গায় আমরা ঘুরতে যেতে পারতাম না। কিন্তু এখন কাজের ব্যস্ততায় কোথাও যেতে সময় পায় না। তাই আমিও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি।

সোহমের যে কোনো উদ্যোগে পাশে রয়েছেন তনয়া। ছবি: সংগৃহীত।
যে কোনও মানুষের জীবনে চড়াই-উতরাই থাকে। সোহমের জীবনেও রয়েছে। কিন্তু আমি দেখেছি, ব্যর্থতা থেকে সব সময় শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে সোহম। ওর থেকে একটা জিনিসই শিখেছি— ধৈর্য। কারণ এই একটা জিনিসই মানুষকে স্বপ্নপূরণ এবং এগিয়ে চলতে সাহায্য করে। ও একটু চাপা মনের মানুষ। মনখারাপের সময় বন্ধ দরজার পিছনে আমার সঙ্গে দুঃখ ভাগ করে নিয়েছে। আমিও আমার মতো করে বুঝিয়েছি। পরের দিন আবার দেখেছি নতুন উদ্যমে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ও হেরে যেতে পছন্দ করে না। লড়াই করতে পছন্দ করে। ওর লড়াকু মনোভাবকে সম্মান করি।
সোহমের জেদ মারাত্মক। এক বার যদি ঠিক করে কোনও কাজ করবে, তা হলে সেটা না শেষ হওয়া পর্যন্ত দম ফেলে না। একটা ঘটনা মনে পড়ছে। সে বার ‘অমানুষ’ ছবিটার জন্য ওকে মরিশাস যেতে হত। এ দিকে একটা গাড়ি ওর পছন্দ হয়েছে। কিনবেই। তার পর সে দিনই গাড়িটা কিনে ও উড়ান ধরেছিল। একটা গাড়ি নিয়ে যদি কারও এরকম জেদ থাকে, তা হলে অনুমান করা যায় পেশা এবং ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি মানুষটার দায়বদ্ধতা কতটা।
জন্মদিনে এটাই চাই, সোহম যেন আরও সফল হয়। যে পরিকল্পনাই করুক, আমি ওর পাশে ছিলাম, আগামীতেও থাকব। ২০০৭ সালে সোহমের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ। তার পর প্রেম। ২০১২ সালে বিয়ে। এখন আমরা অভিভাবক। তাই বলতে পারি ওর সঙ্গে জীবনের অনেকগুলো পর্যায় কাটিয়ে এসেছি। আগামী দিনেও আমরা যেন একই রকম থেকে যাই, আজকে সোহমের জন্মদিনে ঈশ্বরের কাছে সেটাই প্রার্থনা করি।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত।)