আলো-আঁধারি সাদা-কালো ঘরে এলোমেলো হাওয়ার ঝাপটে দুলে উঠছে পর্দা। বাতাসের তাড়নায় ঘরের ভিতরে হেমন্তের পাতার মতো ঝরে পড়ছে কাগজের টুকরো। ঘরের ধূসর অস্পষ্টতায় দেখা যাচ্ছে একটি মানুষকে, যার মুখের উপরে এসে পড়া আলোর বর্ণনা দিতে গেলে বলতে হয়, যেন আলো আঁধারের অধিক!
এ রকম একটি দৃশ্য কল্পনা করলে যাঁর নাম বোধহয় অনিবার্য ভাবে মনে আসে, তিনি গুরু দত্ত। ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক স্বভাব স্বতন্ত্র স্রষ্টা। স্বল্পমেয়াদি জীবনে প্রাপ্য স্বীকৃতি তিনি পাননি। তবে ১৯৬৪ সালে তাঁর মৃত্যুর পরমুহূর্ত থেকে পরবর্তী ষাট বছর ধরে সিনেমা রসিকেরা ক্রমাগত বোঝার চেষ্টা করছেন তাঁর শিল্পের গভীর তাৎপর্য ও চিরায়ত সমকালীনতার অভিঘাত।
‘পিয়াসা’ ছবিতে গুরু দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
পরিচালক ও অভিনেতা হিসাবে গুরু দত্ত বেশ কয়েকটি ছবি করলেও তাঁর মরণোত্তর খ্যাতির বিপুলতা গড়ে উঠেছে প্রধানত তিনটি ছবি ঘিরে: ‘পিয়াসা’ (১৯৫৭), ‘কাগজ কে ফুল’ (১৯৫৯) আর ‘সাহেব, বিবি অউর গুলাম’(১৯৬২)। তাঁর ছবি নিয়ে সত্যিকারের সিরিয়াস আলোচনা দেরিতে শুরু হলেও একটা পর্ব পর্যন্ত ভারতীয় গণ-কল্পনায় গুরু দত্ত মানেই চর্চিত হত তাঁর ব্যক্তিজীবন ঘিরে নানা রকম গালগল্প। সে-যুগের জনপ্রিয় সিনেমা পত্রিকাগুলি দীর্ঘদিন ধরে যথাবিহিত সাফল্যের সঙ্গে সেই সব ‘গল্প’ জিইয়ে রাখতে পেরেছিল। এমন চর্চার গুরুত্ব এখানেই যে, শিল্প না-হোক, শিল্পী সম্পর্কে এক ধরনের আলোচনা অন্তত চলতে থাকে।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় ছবির দর্শক সম্পর্কে ১৯৮৯ সালে ফরাসি সাংবাদিক-পরিচালক পিয়ের ব্যুটাংকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎ রায় মন্তব্য করেছিলেন, ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলন ইত্যাদি সত্ত্বেও ‘উই হ্যাভ আ ফেয়ারলি ব্যাকওয়ার্ড, আনসফিস্টিকেটেড অডিয়েন্স (ভারতে)’। এ রকম ‘রুষ্ট’ মন্তব্যের পিছনে ওঁর যুক্তি ছিল, এই বৃহত্তর দর্শক সমাজ প্রধানত খেলো বাণিজ্যিক ছবিতে এতটাই অভ্যস্ত যে, তারা ভাল শিল্পের রসগ্রাহী হবে, এমনটা আশা করাই অনুচিত। সমস্যাটা ঘোরালো করে তোলে ছবিতে যাঁরা অর্থলগ্নি করেন, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও। লোকপ্রিয় বাণিজ্যের সহজ সূত্র বার করার চেষ্টায় তাঁরা দু-চারটি ‘পরীক্ষিত’ ধাঁচের বাইরে বেরোতে চান না। এ বিষয়ে আগ্রহী পাঠক গুরু দত্তের লেখা নিবন্ধ ‘ক্লাসিক্স অ্যান্ড ক্যাশ’ শীর্ষক নিবন্ধটি পড়তে পারেন।
আমি কমিউনিস্ট নই, কার্টুনিস্ট (‘আর পার’)
স্বাধীনতা ও দেশভাগের পরের এক-দেড় দশকে হিন্দি চলচ্চিত্র যাঁদের মাধ্যমে স্বতন্ত্র, স্বকীয় চিত্রভাষা খুঁজেছিল তাঁদের অন্যতম গুরু দত্ত। চলচ্চিত্র গবেষক ইকবাল মাসুদের মতে, হিন্দি ছবির জগতে পঞ্চাশের দশকের সেরা চার পরিচালক মেহবুব খান, বিমল রায়, গুরু দত্ত এবং রাজ কপূরের দৃষ্টিভঙ্গি ত্রিশ এবং চল্লিশের দশকের মর্মঘাতী অভিজ্ঞতার উপরে ভিত্তি করেই। স্বাধীনতার লড়াই, দেশভাগ, দুর্ভিক্ষ, সামাজিক কাঠামোয় ভাঙন, ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন— এ সবই ওই পরিচালকদের দৃষ্টিভঙ্গিকে গড়ে তুলেছিল। এঁদের চারজনের চিন্তাভাবনায় কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান বৈশিষ্ট্য হল সজাগ মানবিকতা। ইতিহাসের ওই বছরগুলিতে দেশজোড়া দারিদ্র ও বিশ্বযুদ্ধের আবহে বেড়ে ওঠা কালোবাজারির কারণে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য জনমানসকে ঠেলে দিয়েছিল ক্রোধ এবং হতাশায়।
পরিচালক-প্রযোজতক-অভিনেতা গুরু দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
উপরোক্ত পরিচালকদের কাজে নানা ভাবে সেই ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ও পরিবর্তনের আহ্বান দেখা গিয়েছে। এর পাশাপাশি, এঁদের আর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল উচ্চ এবং নিম্ন দুই স্তরের ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি কৌতূহল। গুরু দত্ত পরিচালিত ছবিগুলির মধ্যে ‘পিয়াসা’র আগে, ‘আর পার’ (১৯৫৪)এবং ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ফিফটি ফাইভ’-এ (১৯৫৫) এই বিষয়গুলি সূক্ষ্ম হিউমার এবং আয়রনির মধ্যে দিয়ে ধরার চেষ্টা হয়েছে। ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ফিফটি ফাইভ’-এ বিত্তশালী সীতা দেবীর (ললিতা পওয়ার) প্রশ্নের জবাবে যখন নবসৃষ্ট রাষ্ট্রের সাধারণ চাকরির তরুণ নাগরিক প্রীতম (গুরু দত্ত) বলে, ‘আমি কমিউনিস্ট নই, কার্টুনিস্ট’, তখন পরিচালক সমাজের প্রতিফলন কোন আয়নায় দেখছেন, দর্শকের বুঝতে বাকি থাকে না। ‘আর পার’ ছবিটিতে সে-যুগের (এবং আজকের) সামাজিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথাই শুনিয়েছেন গুরু দত্ত। সেখানে গ্যারাজ মালিক (জগদীশ শেঠি) জেলফেরত ট্যাক্সি চালক কালু (গুরু দত্ত) তাঁর মেয়ের পাণিপ্রার্থী শুনে রাগে-বিরক্তিতে ফেটে পড়ছে। কারণ, কালুর দাবি মেয়ের বাবার মধ্যবিত্ত মূল্যবোধের উপরে সরাসরি আঘাত। যার জবাবে কালু দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানায়, সে নিতান্তই পরিস্থিতির শিকার। তার চাহিদার সঙ্গে শ্রেণিভেদের কোনও সম্পর্ক নেই। নিকিকে বিয়ে করে সে মধ্যবিত্তই হয়ে উঠতে চায়। সেটাই তার জীবনের স্বপ্ন। থিমের দিক থেকে এ ছবিতে অভিনবত্ব না থাকলেও পরিচালকের বৈশিষ্ট্য ছবির পার্শ্বচরিত্রগুলিকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে ফুটিয়ে তোলায়। বড় শহরে টিকে থাকতে গেলে ছোটখাটো পেশার অপাংক্তেয় মানুষদের প্রতিনিয়ত কী ধরনের বুদ্ধি ও উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিতে হয়, মানিয়ে নেওয়া এবং মানিয়ে চলার কৌশল কী ভাবে রপ্ত করতে হয়, সেই উপকাহিনিগুলি ছবির মূল কাহিনিকে পোক্ত করেছে।
‘আর পার’ ছবির গুরুত্বের আর একটি বড় কারণ, এই ছবিতেই সংলাপ লেখক হিসাবে গুরু দত্তের সঙ্গে যুক্ত হন আব্রার আলভি। সিনেমাটোগ্রাফার ভি কে মূর্তি বাদে গুরুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতম সৃজনশীল সহযোগী। ‘কাগজ কে ফুল’-এর বাণিজ্যিক ব্যর্থতার পর গুরু দত্তের অনুরোধে ‘সাহেব, বিবি অউর গুলাম’ ছবি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন আলভি। যদিও অনেকেরই ধারণা, আলভির নামটা সামনে রেখে বকলমে ছবিটি পরিচালনা করেন স্বয়ং গুরু। এহেন অনুমান বরাবরই আলভির মর্মপীড়ার কারণ ছিল। উনি সেটা সারা জীবন বলেছেন, তথ্যপ্রমাণও দিয়েছেন। ওই ছবিতে গানের দৃশ্যের পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছিলেন গুরু। কিন্তু ছবির পরিচালক ছিলেন আলভি।
কলকাতার দিনলিপি
গুরু দত্তের জন্ম এক সারস্বত ব্রাহ্মণ পাড়ুকোন পরিবারে, বেঙ্গালুরুতে (তৎকালীন ব্যাঙ্গালোর), ১৯২৫ সালের ৯ জুলাই। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয় বসন্তরাও শিবশঙ্কর পাড়ুকোন। যেহেতু দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার, তাই এক মামা তাঁর নাম রাখেন গুরু দত্ত। শৈশবে নানা জায়গা ঘুরে চার বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে গুরু আসেন কলকাতায়। তাঁর বাবা শিবশঙ্কর রাও পাড়ুকোন ছিলেন বর্মা শেলের করণিক। টুকটাক সাংবাদিকতাও করতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন কোনও কাজে লেগে থাকা তাঁর ধাতে ছিল না। সংসারের আর্থিক তাগিদ মেটাতে গুরু দত্তের মা বাসন্তী গৃহশিক্ষকতার কাজ নিতে বাধ্য হন। শিবশঙ্কর ও বাসন্তীর পাঁচ সন্তান— চার পুত্র এবং এক কন্যার মধ্যে গুরুই ছিলেন সকলের বড়। কলকাতায় পাড়ুকোন পরিবারের প্রথম ঠিকানা ছিল ভবানীপুরের পদ্মপুকুর এলাকার একটি ছোট ফ্ল্যাট। পরে সেখান থেকে তাঁরা উঠে যান চক্রবেড়িয়ার কাছে অ্যাসটন রোডে। আর্থিক অনটন ও শিবশঙ্করের অস্থিরচিত্ততার কারণে স্বামীর সঙ্গে বাসন্তীর সম্পর্ক কোনও দিনই খুব মসৃণ ছিল না। সন্তানদের সুশিক্ষিত করে তোলার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই নিয়েছিলেন বাসন্তী। কলকাতায় থাকতেন তাঁর এক দাদা, সে-কালের নামকরা কমার্শিয়াল আর্টিস্ট বি বি বেনেগাল। গুরু ও বাসন্তীর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ললিতাকে (পরে বিশিষ্ট শিল্পী ললিতা লাজমি, চিত্রপরিচালক কল্পনা লাজমির মা) বড় করে তোলার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন বি বি বেনেগাল।
গুরুর ছেলেবেলা সম্পর্কে বেনেগালের স্মৃতিচারণ, ‘আমি ওকে জেসুইটদের পরিচালিত ডেভিড হেয়ারের স্কুলে ভর্তি করে দিই (এখানে একটু তথ্যগত বিচ্যুতি রয়েছে। হেয়ার স্কুল কস্মিনকালেও জেসুইট পরিচালিত নয়)। তার আগে ও একটি দক্ষিণ ভারতীয় স্কুলে যাচ্ছিল, যেখানে পড়াশোনা কিছুই হত না। তবে, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে গিয়ে গুরু মন দিয়ে লেখাপড়া করত। ভাল ছাত্র হয়ে উঠেছিল। পাশাপাশি, সৃজনশীল কাজেও প্রচুর উৎসাহ ছিল। মাঝেমাঝে আমার ক্যামেরা নিয়ে ছবিও তুলত। পরে ও লন্ডন থেকে একটা ১৬ এমএম বেসার্ড বেলক্স ক্যামেরা এনে আমায় উপহার দেয়।’ গুরুর শৈশব ও কৈশোর সম্পর্কে তাঁর ছোট ভাই আত্মারামের (যিনি নিজেও চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন) স্মৃতিচারণ: ‘গুরু ১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেছিল, তার পরে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা আর করতে পারেনি। তবে, প্রচুর পড়ত। এই অভ্যাসটা বোধহয় বাবার থেকে পেয়েছিল। হিন্দি ভালই জানত, তবে বেশি স্বচ্ছন্দ ছিল ইংরেজি আর বাংলায়। দিব্যি বাংলা পড়তে পারত। বাড়িতে কোঙ্কনি ভাষাতেও কথা বলত। সবরকম খেলাধুলো ভালবাসত, পায়রা আর ঘুড়ি ওড়ানোর শখ ছিল প্রবল।’ কলকাতা এবং বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি অন্তরের টান তাঁর বরাবরই ছিল। ‘পিয়াসা’ ও ‘সাহেব, বিবি অউর গুলাম’-এর আউটডোর শুটিং হয়েছিল যথাক্রমে কলকাতা এবং মগরাহাটের ধানপোতায়।
সাহেব বিবি অউর গুলাম’ ছবিতে মীনাকুমারীর সঙ্গে গুরু দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
উদয়শঙ্কর থেকে বলিউড
উপার্জনের তাগিদে মাত্র ১৬ বছর বয়সে একটি জুট মিলে টেলিফোন অপারেটরের চাকরি নেন গুরু। মাসিক বেতন ৪০ টাকা। তবে, সেই কাজ বেশিদিন করতে হয়নি। মামা বি বি বেনেগালের আর্থিক সহায়তায় তিনি নাচ শিখতে যান আলমোড়ায়, উদয়শঙ্করের নাচের স্কুলে। সেই স্কুল বন্ধ হওয়ার পরে তিনি যান পুণেয়, ভি শান্তারামের প্রভাত স্টুডিয়োয় সিনেমার কাজ শিখতে। পুণেতেই তাঁর বন্ধুত্ব হয় দেব আনন্দ এবং অভিনেতা রেহমানের সঙ্গে। এর কিছু পরেই তিনি তখনকার বম্বের (অধুনা মুম্বই) দুই বিখ্যাত পরিচালক অমিয় চক্রবর্তী এবং জ্ঞান মুখার্জির সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজের সুযোগ পান। গুরু দত্ত জ্ঞান মুখার্জিকেই তাঁর গুরুজি হিসাবে মানতেন। ‘পিয়াসা’ ছবিটা তাঁকেই উৎসর্গ করা। গুরু দত্তকে প্রথম ছবি পরিচালনার সুযোগ দেন দেব আনন্দ। দেব আনন্দ-চেতন আনন্দের নিজেদের সংস্থা নবকেতনের দ্বিতীয় ছবি ‘বাজি’-তেই (১৯৫০) প্রথম পরিচালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে গুরুর। এটা ছিল তাঁদের বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি রক্ষা। পুণেতেই দেব এবং গুরু একে অপরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দেব যেদিন নিজে ছবি প্রযোজনার সুযোগ পাবেন, তা পরিচালনার দায়িত্ব দেবেন গুরুকে। আর গুরু যদি পরিচালক হিসাবে কাজ পান, তিনি নায়কের রোলে নেবেন দেবকে। কথা রেখেছিলেন দু’জনেই। ছ’বছর পর, ১৯৫৬ সালে গুরু দত্ত ফিল্মস লিমিটেডের ব্যানারে ‘সিআইডি’ ছবিতে দেবকেই মুল চরিত্রে রেখেছিলেন গুরু।
ক্রাইম থ্রিলার থেকে ‘পিয়াসা’
‘বাজি’ ছবিটির থিম এক জন মানুষ কী ভাবে পরিস্থিতির চাপে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। এটা গুরুর পরের কয়েকটি ছবিতেও এসেছে। পঞ্চাশের দশকে এই ধরনের ছবি তোলা হত হলিউডে যাকে ‘ফিল্ম নয়ার’ বলা হত, সেই ধাঁচে। এগুলি ছিল মূলত ক্রাইম কাহিনি; আলো-ছায়ার জটিল নকশা, গা-ছমছমে আবহসঙ্গীত, ধূসর চরিত্রের সাহায্যে ভীতিপ্রদ আবহাওয়া তৈরি করা ছিল ওই ধরনের ছবির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। ফিল্ম নয়ারের স্টাইল ভারতীয় ছবিতে প্রথম আনেন জ্ঞান মুখার্জি, তাঁর সে-আমলে সাড়া জাগানো ‘কিসমত’ (১৯৪৩) ছবিতে। গুরু দত্ত পরিচালিত প্রথম তিনটি ছবি ‘বাজি’, ‘জাল’ (১৯৫২) এবং ‘বাজ’ (১৯৫৩) তৈরি হয়েছিল ‘নয়ার’ ছবির চিত্রশৈলী অনুসরণ করেই। পঞ্চাশের দশকে রাজ কপূরের ছবি ‘আওয়ারা’ (১৯৫১), ‘শ্রী ৪২০’ (১৯৫৫), বা জ্ঞান মুখার্জির আর এক শিষ্য শক্তি সামন্তের ‘হাওড়া ব্রিজ’ (১৯৫৮) ও পরে ‘চায়না টাউন’ (১৯৬২) ছবিগুলিতে ‘নয়ার’ স্টাইলের ব্যবহার হয়েছে।
জুয়াড়ি, স্মাগলার ও অ্যাডভেঞ্চারের গল্প ছেড়ে গুরু দত্তের প্রথম উল্লেখযোগ্য ছবি ‘আর পার’। এখান থেকেই বলা যায় গুরু দত্তের আর একজন চিত্র পরিচালক থেকে ‘অটার’ (auteur) হয়ে ওঠার যথার্থ সূচনা। যার পরিণতি ‘পিয়াসা’ ও ‘কাগজ কে ফুল’। গুরু দত্তের ছবিতে তাঁর স্বতন্ত্র শৈলী এবং নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যায় তাঁর আখ্যান নির্মাণের ধরনে, সংলাপের বৈশিষ্ট্যে, গান, বিশেষ করে গানের চিত্ররূপে এবং ক্যামেরার কাজে। এখানে মনে রাখতে হবে, সিনেমায় আবিষ্ট হয়ে থাকা অতিরিক্ত সংবেদনশীল গুরু দত্ত ব্যক্তিটি ছিলেন চারিত্রিক বৈপরীত্য ও বিবিধ অন্তর্দ্বন্দ্বের জটিল সমাবেশ। এক দিকে তিনি প্রবল ভাবে অন্তর্মুখী, অন্য দিকে যাকে বলে হুজুগে ও হুল্লোড়বাজ। এক দিকে অত্যন্ত সংবেদনশীল, অন্য দিকে তাঁর ঔদাসীন্য নিষ্ঠুরতার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। নিজের কাজে অত্যন্ত মনোযোগী, অন্য দিকে প্রচণ্ড অস্থিরমতি। চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ অরুণ খোপকর এক বার মন্তব্য করেছিলেন, বলিউডের শর্ত মেনে ছবি করতে গিয়ে গুরু দত্ত ‘পথের পাঁচালী’র মতো সৃজনশীল পরীক্ষানিরীক্ষা করার সুযোগ পাননি। মনে হয়, কথাটা আংশিক ভাবে গ্রহণযোগ্য। কারণ, ছবি করার ক্ষেত্রে যাকে ‘সেন্স অফ ইকোনমি’ বলা যেতে পারে, সেটা গুরুর চরিত্রে ছিল না। একমাত্র ‘সাহেব, বিবি অউর গুলাম’ ছাড়া ওঁর একটি ছবিরও আগাম পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা ছিল না। একটি শট পছন্দ না হলে বার বার রি-টেক করা, অনেক পয়সা খরচ করে একাধিক ছবির কিছুটা বানিয়ে তার পরে সেটা বাতিল করা গুরু দত্তের ক্ষেত্রে আকছার ঘটত।
‘কাগজ কে ফুল’ ছবিতে গুরু দত্ত, ওয়াহিদা রহমান। ছবি: সংগৃহীত।
আইকনিক সিনেমা স্রষ্টা
অতীতে হিন্দি ছবির সংলাপ লেখক ও গীতিকারেরা প্রায় সকলেই ছিলেন উর্দুতে পারদর্শী। ফলে, চরিত্র যেমনই হোক, তাদের কথায় এবং গানে যে ধরনের শব্দ এবং বাক্যশৈলী ব্যবহার করা হতো তা ছিল উচ্চাঙ্গের উর্দু। আব্রার আলভির পরামর্শে ‘আর পার’ ছবি থেকেই সংলাপ লেখার ধরনে বড় রকম পরিবর্তন আনেন গুরু দত্ত। চরিত্রের শিক্ষা-দীক্ষা, সামাজিক অবস্থান, এমনকি সে যেখানকার বাসিন্দা, সেখানকার স্থানীয় কথ্যভঙ্গিও সংলাপে আনা হতে থাকে। আলভির লেখাতেই পড়ি, ‘পিয়াসা-য় বিজয়ের (গুরু দত্ত) এক দাদার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মেহমুদ। বাঙালি পরিবার শুনে মেহমুদ বাংলা ধরনে হিন্দি বলতে শুরু করেন। অথচ, বিজয়ের মা এবং অন্য দাদারা শুদ্ধ হিন্দি উচ্চারণেই কথা বলছেন! শুটিংয়ের সময়ে আমি ছিলাম না, যখন নজরে এল তখন দৃশ্যটি ক্যান হয়ে গিয়েছে। ফলে, কিছু করার ছিল না। আজও ‘পিয়াসা’ দেখতে বসলে ওই দৃশ্যগুলি পীড়াদায়ক ঠেকে’।
গানের দৃশ্যের চিত্রায়নে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও ছবিতে গান ব্যবহার করতেই হবে, এমন সরলীকরণে আপত্তি ছিল গুরু দত্তের। কিন্তু এখানেই বলিউডের মূল ধারার ছবির লগ্নিকারীদের প্রধান একটি শর্তের সঙ্গে আপস করতে হয়েছিল তাঁকে। তবে হিন্দি বাণিজ্যিক ছবিতে সেই ছক ভেঙে, গানকে কাহিনিরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরু দত্ত এবং রাজ কপূরের ভূমিকা পথিকৃতের। বিশেষ করে গুরু দত্তের। সচরাচর হিন্দি ছবিতে গান শুরুর আগে সেই গানের মুডের একটা প্রারম্ভিক মূর্ছনা বা প্রিলিউড থাকে। এর ফলে দর্শকের মন গান শোনার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে। এটা যথাসম্ভব নাকচ করার প্রথম চেষ্টা সম্ভবত করেছিলেন গুরু দত্তই। যদি বা সুর ভেঙে ইন্টারল্যুড করলেনই, তো মূল গানের সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকত সামান্যই। যেমন, ‘আর পার’-এর ‘সুন সুন সুন সুন জালিমা’ গানটি। গীতিকার মজরুহ সুলতানপুরী জানিয়েছেন, ‘পরিচালক আমাকে পুরো গল্পটা শুনিয়ে গানের সিচুয়েশনগুলি বিশ্লেষণ করতেন। তারপর সঙ্গীত পরিচালক সুরগুলি শোনাতেন। গুরুর সুরের কান ছিল মারাত্মক। যে চরিত্র গানটি পর্দায় গাইবে, তার সংলাপ, সংলাপে ব্যবহৃত শব্দ এগুলিও স্পষ্ট করে দেওয়া হত। চরিত্রের সংলাপে যে শব্দ, বাক্যগঠন থাকত, গানেও তা রাখতে হত পরিচালকের নির্দেশে’। গানের মাধ্যমে যে বক্তব্য পেশ হয়েছে, সংলাপে যেন তার পুনরাবৃত্তি না-হয় সেদিকেও নজর রাখতেন গুরু। ফলে, গানের দায়িত্ব বেড়ে যেত। গান ব্যবহৃত হত কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। ‘সুন সুন সুন সুন জালিমা’ গান শুরুর আগে দেখা যায় গ্যারাজে গাড়ি মেরামত করতে করতে কালু (গুরু দত্ত) গানের মুখড়াটি শিস দিচ্ছে। নিক্কি (শামা) সেটি নকল করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। গান এখানে হতেও পারে, না-ও হতে পারে, এ রকম একটি সিচুয়েশন থেকেই গানটি শুরু হচ্ছে। কালুর প্রেম নিবেদন থেকে নিক্কির প্রেমে পড়া, গোটাটাই কিন্তু গানের দৃশ্যে ঘটছে।
‘পিয়াসা’র শুরুতে পার্কে শুয়ে থাকা বিজয়ের (গুরু দত্ত) কানে বাজছে মহম্মদ রফির কণ্ঠে ‘ইয়ে হসতে হুয়ে ফুল, ইয়ে মেহকা হুয়া গুলশন’। ক্লান্ত দ্বিপ্রহরে কবি উপভোগ করছেন প্রকৃতির আপন সৌন্দর্য। তার চোখে পড়ে ফুলের উপরে একটি মৌমাছি, সেটি উড়ে ঘাসের উপরে বসতেই কারও জুতোসুদ্ধ পা সেটি পিষে দেয়। ওই একটি ছোট দৃশ্যেই গোটা ছবিতে কী ঘটতে চলেছে তার অর্থবহ ইঙ্গিত ফুটে ওঠে। গানের কথা, সুর ও সামান্য যন্ত্র-সঙ্গতের হাল্কা মেজাজে ব্যবহার যে ‘আয়রনি’ তৈরি করে তা-ই যেন পরিণতি পায় ওই ছবিরই পরবর্তী তিনটি গান ‘জিনহে নাজ হ্যয় হিন্দ পর উয়ো কঁহা হ্যায়’, ‘জানে উয়ো ক্যয়সে’ এবং অন্তিমে ‘ইয়ে দুনিয়া অগর মিলভি যায়ে তো ক্যয়া হ্যায়’-তে। গুরু দত্তের ছবিতে ছবির প্রেক্ষিতে ব্যবহৃত প্রতিটি গানের দৃশ্য নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হতে পারে, যেটা এই প্রতিবেদনে সম্ভব নয়।
ভারতে প্রথম সিনেমাস্কোপে তোলা ছবি ‘কাগজ কে ফুল’। তবে, সাধারণ হলে দেখানো হবে বলে ছবিটা একই সঙ্গে ৩৫ এমএম ক্যামেরাতেও তোলা হয়েছিল। আলভি এবং গুরু দত্তের সিনেমাটোগ্রাফার ভি কে মূর্তির স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় গুরুর চিত্রগ্রহণের পদ্ধতি ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা। ক্যামেরার কাজে হলিউডের ছবির প্রায় নিখুঁত, ঝকঝকে ভাবটা পছন্দ করতেন তিনি। মূর্তির সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করে স্থির হত কী ভাবে দৃশ্যগ্রহণ হবে। ‘কাগজ কে ফুল’-এর শুটিংয়ের আগে তিনি ভি কে মূর্তিকে এক বিশেষ প্রকৌশল (matte technique) শিখতে পাঠান বিদেশে, ‘গানস অফ ন্যাভেরোন’-এর পরিচালক জন লি টমসনের কাছে।
গুরু দত্তের ছবিতে কাহিনি যে-ভাবে, যে-ভঙ্গিতে এগোয় সেটা প্রধানত মেলোড্রামার ধরন। মেলোড্রামার ব্যবহারে তাঁর কাজের সঙ্গে কিছুটা তুলনা হতে পারে ঋত্বিক ঘটকের। ঋত্বিকের মতোই গুরুর ছবির আখ্যানে সরাসরি নাটকীয়তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় কাহিনির সাঙ্গীতিক কাঠামো। নাটকীয় টেনশনের মুহূর্তে অভিনেতা-অভিনেত্রীর চড়া দাগের অভিনয়ের প্রয়োজন হয় না, বরং সেটা নিচু স্বরেই হয়। টেনশনের মুহূর্ত ফুটে ওঠে মিজ-অঁ-সেন (mise en scene) বা অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং সেই নির্দিষ্ট দৃশ্যের সম্মিলিত বিন্যাসে। ‘পিয়াসা’য় কীর্তনের সুরে ‘আজ সাজন মোহে অঙ্গ লাগা লো’ ও ‘কাগজ কে ফুল’-এর ‘ওয়ক্ত নে কিয়া’ গানের দৃশ্যে ওই কৌশলের দুর্দান্ত ব্যবহার হয়েছে। ঋত্বিকের সঙ্গে গুরু দত্তের আর একটি মিলের জায়গা, দু’জনের ছবিতেই পরিদৃশ্য (panoramic vision), ফোকাসের গভীরতা ও ছকভাঙা ফ্রেমের ব্যবহার। উপর থেকে, নীচের থেকে, বিভিন্ন পাশ থেকে নানা অ্যাঙ্গলে শট নেওয়ার কৌশলও ঋত্বিককে মনে পড়ায়। এক একটি ফ্রেমে গুরু দত্ত যে ভাবে পরিসর (space) এবং একাধিক তলকে (differential planes) ব্যবহার করেন, সেটাও লক্ষণীয়। ‘কাগজ কে ফুল’ এবং ‘সাহেব, বিবি অউর গুলাম’-এর প্রথম দৃশ্যেই তার পরিচয় রয়েছে।
গুরু দত্ত এবংস্ত্রী গীতা দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
ইয়ে দুনিয়া অগর মিল ভি যায়ে তো ক্যায়া হ্যয়... (পিয়াসা)
৯ অক্টোবর গভীর রাতে ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয় গুরু দত্তের। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৯। গীতা দত্তের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে। মুম্বইয়ের পেডার রোডের ফ্ল্যাটে পরিচারককে নিয়ে একাই থাকেন। আলভির কথায়, ‘বাহারে ফির ভি আয়েঙ্গে’-র কাজ চলছে। সেদিন বিকেল থেকেই টানা মদ্যপান শুরু করেছিলেন গুরু। শিশুকন্যাকে দেখবেন— এই অনুরোধ জানিয়ে ফোন করেন গীতাকে। সেদিন রাত হয়ে গিয়েছে, পরের দিন সকালে মেয়েকে গুরুর কাছে পাঠাবেন বলে ফোন রেখে দেন গীতা। শুনে গুম মেরে যান গুরু দত্ত। পরদিন কাজের ব্যাপারে দেখা করবেন বলে কয়েক জনের সঙ্গে ফোনে অ্যাপয়েন্টমেন্টও করেন। যাঁদের একজন রাজ কপূর। আলভি এবং তাঁদের উভয়ের পরিচিত এক বন্ধুও সেদিন সন্ধেয় গুরুর ফ্ল্যাটে এসেছিলেন। তাঁরা চলে যাওয়ার পরে পরিচারক রতনকে আবারও একটি হুইস্কির বোতল দিতে বলেন। সেটি নিয়ে শোওয়ার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। পরের দিন সকালে বার বার ফোন করেও স্বামীর সাড়া না-পেয়ে রতনকেই ঘরের দরজা ভাঙতে বলেন গীতা। উদ্ধার হয় গুরু দত্তের নিষ্প্রাণ দেহ। পাশে মদের বোতল, সাইড টেবিলে একটি গ্লাসে প্রচুর ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো জল। দুর্ঘটনা, না আত্মহনন, তা কখনওই পরিষ্কার হয়নি। তবে, গুরুর ঘনিষ্ঠদের মতে, আগেও অন্তত দু’বার আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন গুরু দত্ত।
ওয়াহিদা রেহমান একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, শেষের বছরগুলিতে (বিশেষ করে ‘কাগজ কে ফুল’ বাণিজ্যিক ভাবে ব্যর্থ হওয়ার পরে) প্রায়ই বিষাদের সুর থাকত গুরুর কথাবার্তায়। যেন নিজেকেই বলতেন, ‘এ বার আর কী করব? খ্যাতি, অর্থ সবই অনেক হয়েছে। সিনেমা করব, সেটা হয় হিট হবে, নয়তো ফ্লপ। সবই তো দেখা হয়ে গিয়েছে’। এ কি প্রতিকূল পরিস্থিতির চাপে এক জাত শিল্পীর বিষাদজনিত আক্ষেপ? ওঁরই লেখা ‘ক্লাসিক্স অ্যান্ড ক্যাশ’ নিবন্ধটির শেষের কয়েক ছত্রে বোধহয় গুরু দত্তের অন্তর্দ্বন্দ্বের আভাস মেলে— ‘আমাদের ফর্মুলা-জর্জরিত ফিল্মি দুনিয়ায় কেউ যদি প্রচলিত ছকের বাইরে গিয়ে কাজ করার সাহস দেখান তা হলে তাঁর অবস্থা হয় শেলি সম্পর্কে ম্যাথিউ আর্নল্ড যা বলেছিলেন, নিরালম্ব শূন্যতায় পাখা ঝাপটানো দেবদূত। আমি বিশ্বাস করি, সিনেমার জগতে গতানুগতিকতার বাইরে যেতে চাইলে তার মূল্য দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রশংসা এবং ধিক্কার, সাফল্য এবং প্রাণঘাতী হতাশা। দুটোই মেনে নেওয়ার মতো মনের জোর থাকতে হবে। তা সেই ধ্রুপদী ছবি বানাই বা পয়সা তোলার ছবি বানাই। এই বিভ্রান্তিকর অনিশ্চয়তার মধ্যেই রয়েছে ছবি নির্মাণের উত্তেজনা’।
কিন্তু কী হয়, যখন সেই সৃজনী-উত্তেজনার পূর্ণ পাত্রও নিঃশেষ হয়?
(তথ্যসূত্র- ‘গুরু দত্ত: আ লাইফ ইন সিনেমা’, নাসরিন মুন্নি কবির; ‘টেন ইয়ার্স উইথ গুরু দত্ত: আব্রার আলভিজ জার্নি’, সত্য সারন; ‘ইন ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট: বলিউড অ্যান্ড দ্য মেলোড্রামা অফ গুরু দত্ত’, ডেরিয়াস কুপার; ‘বিনিদ্র’, বিমল মিত্র; ‘গুরু দত্ত’, রেশমি ডোরাইস্বামী; ‘গুরু দত্ত: আ ট্র্যাজেডি ইন থ্রি অ্যাক্টস’ অরুণ খোপকর; ‘দ্য ডায়ালগস অফ পিয়াসা’ (অনুবাদ ও ধারাভাষ্য) নাসরিন মুন্নি কবির। এ ছাড়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ইউটিউবে ওয়াহিদা রেহমান, আব্রার আলভি, কইফি আজ়মি, গুরু দত্তের পুত্র অরুণ দত্তের পুরনো সাক্ষাৎকার)