Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ব্রাজিলের বিচ্ছু

চেতন ভগত লিখতে পারতেন ‘দ্য টু কান্ট্রিজ’

ব্রাসিলিয়ার গ্যালারিতে আলাপ হল আলেকজান্দ্রার সঙ্গে। গোটা শরীরে হলুদ-সবুজ রং মেখে ব্রাজিল-ক্যামেরুন ম্যাচ দেখতে এসেছিল ও। ইন্ডিয়া থেকে এসেছি শুনে বলেছিল, “তোমাদের কিন্তু বিশ্বকাপ খেলা উচিত। এত বুদ্ধিমান মানুষজন তোমাদেরই দেশে। সাংস্কৃতিক ভাবে ঐতিহ্যের দিক থেকে তোমরা এগিয়ে। তোমরা কেন বিশ্বকাপ খেলবে না?”

অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

ব্রাসিলিয়ার গ্যালারিতে আলাপ হল আলেকজান্দ্রার সঙ্গে। গোটা শরীরে হলুদ-সবুজ রং মেখে ব্রাজিল-ক্যামেরুন ম্যাচ দেখতে এসেছিল ও। ইন্ডিয়া থেকে এসেছি শুনে বলেছিল, “তোমাদের কিন্তু বিশ্বকাপ খেলা উচিত। এত বুদ্ধিমান মানুষজন তোমাদেরই দেশে। সাংস্কৃতিক ভাবে ঐতিহ্যের দিক থেকে তোমরা এগিয়ে। তোমরা কেন বিশ্বকাপ খেলবে না?” এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে যা কথা বলতে হয়, তার সময় থাকে না এই ছোট্ট আলাপচারিতাগুলোয়। আলেকজান্দ্রা যদিও বলে যাচ্ছিল, “জানো আমি বায়োটেকনলজি নিয়ে রিসার্চ করি এখানে। যত পেপার পড়তে হয় তার অধিকাংশটাই দেখি ইন্ডিয়ার। তখনই আমার বারবার মনে হয় তোমরা কেন বিশ্বকাপ খেলো না।” ব্রাসিলিয়ার মিডিয়া সেন্টারে ঘানার এক সাংবাদিক এসে আমাদের ভারতীয় সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার নিলেন। তাঁরও একই প্রশ্ন— ‘তোমরা কেন বিশ্বকাপ খেলো না?’

বেলো হরাইজন্তে বাসস্টপে আলাপ নরওয়ের ছেলে জন-এর সঙ্গে। বিশ্বকাপ দেখতে একা একাই চলে এসেছে জন। ফুটবলের সঙ্গে প্রচুর খোঁজখবর রাখে দাবা খেলার। ‘বিশ্বনাথন আনন্দকে দেখে ইন্ডিয়ানদের সম্পর্কে শ্রদ্ধা আমার অনেক বেড়ে গিয়েছে। আনন্দ গত বছর কার্লসনের কাছে হেরে আবার চ্যালেঞ্জার হিসেবে যে ভাবে কামব্যাক করল, তাতে বুঝতে পারি তোমাদের মানসিকতা কত টাফ। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলে তোমরা নেই কেন?’ বলছিল জন। ওর দেশও এ বার বিশ্বকাপে নেই। ‘আমরা কিন্তু তিন বার শেষ পর্বে খেলেছি। আমরা কিন্তু জানি গ্যালারিতে নিজের দেশের হয়ে চিৎকার করার মজাটা কী?’ জনের গলায় তৃপ্তি। টুকরো টুকরো কিছু কথা। কিন্তুু বিশ্বাস করুন, মনে দাগ কেটে যায় অবিরত। গোটা পৃথিবীর এই রং, এই মেলা, এত আবেগ, এত ভালবাসার মাঝে আমাদের দেশ কোথাও নেই। খাতাকলম নিয়ে ব্রাজিল ডায়েরির পাতা উল্টোলেই এই আফশোসটাই যেন বেরিয়ে আসছে। আর আবেগ বলে আবেগ! এই কয়েক দিনে যা যা ছবি দেখলাম, যে সব মানুষের মুখোমুখি হলাম, তা সত্যিই যেন নেশা ধরিয়ে দেয়। ইরান ম্যাচের আগে আলাপ হল আন্দ্রেস আর পাওলার সঙ্গে। দু’জনেই আর্জেন্তিনার মানুষ। থাকেন রিও ডি জেনেইরোতে। রিও থেকেই সন্তানসম্ভবা পাওলাকে নিয়ে ড্রাইভ করে বেলোয় চলে এসেছিলেন আন্দ্রেস। গায়ে আর্জেন্তিনার নীল-সাদা জার্সি। মুখে নীল-সাদা রং। আর পাওলার ভারী পেট সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। পেটের ওপর নীল-সাদা রং দিয়ে ফুটবল আঁকা। পাওলা ওঁর পেটে হাত দিয়ে বলছিলেন, “এখানে আমার ছেলে জোনাথন আছে।” এখন থেকেই পা ছুড়ছে, তাতেই বুঝেছি নতুন মেসি আসছে। জোনাথন উইল বি দ্য নিউ মেসি।” পাওলার স্বপ্নমাখা গলা। স্বপ্ন বোধ হয় দেখতেই পারেন ওঁরা। গায়ে মারাদোনার দেশের রক্ত। বড় হবে পেলের দেশে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই নেইমারের দেশের স্টেডিয়ামে বসে দেখবে মেসির খেলা। এই ছেলে ফুটবলার হবে না, হয় নাকি?

মেসির দেশ আর নেইমারের দেশ নিয়ে মোটামুটি যা যা গল্প আছে, তাতে চেতন ভগত ‘দ্য টু স্টেটস’য়ের মতো ‘দ্য টু কান্ট্রিজ’ লিখেই ফেলতে পারেন। রীতিমতো সাপে-নেউলে সম্পর্ক। দেখা হলেই সর্বক্ষণ গানের লড়াই চলছে। আর্জেন্তিনা বলছে ‘পেলেটেলে আবার কে! ফুটবলের শেষ কথা মারাদোনা। আর আর্জেন্তিনা।’ ব্রাজিলের গলায় পাল্টা কথা। এরই মাঝে আলাপ হল মাদ্রিদের লিওনার্দো আর তাঁর গার্লফ্রেন্ড সারার সঙ্গে। মারাকানা স্টেডিয়ামের বাইরে দেখি তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। একজনের গায়ে ব্রাজিলের জার্সি। অন্য জনের আর্জেন্তিনার। ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা একসঙ্গে। আলাপটা করতেই হল। লিওনার্দো আর্জেন্তিনার ছেলে। মাদ্রিদে ইংলিশ পড়ায়। সারা জন্মসূত্রে ব্রাজিলের। বড় হয়েছে স্পেনে। ফ্যাশন ব্লগ লেখে। মাদ্রিদে থাকার জন্য রিয়ালের সাপোর্টার আর গায়ে ব্রাজিলিয়ান রক্ত থাকার জন্য ব্রাজিলের ভক্ত। লিওনার্দো ঠিক উল্টো। আর্জেন্তিনার সাপোর্টার তো বটেই। মেসির জন্য বার্সেলোনার। তাই বাড়িতে ব্রাজিল বনাম আর্জেন্তিনা এবং রিয়াল বনাম বার্সেলোনার টক্কর লেগেই আছে। লিওনার্দো বলছিলেন, ‘সে প্রথম দিন থেকেই চলেছে। আমাদের আলাপ আমেরিকায় একটা ইউনিভার্সিটিতে। প্রথম দিনই ও বলল, ও ব্রাজিল আর রিয়াল। আর আমি আর্জেন্তিনা আর বার্সেলোনা। ভাবলাম, যাঃ! বন্ধুত্বটা বোধহয় চটকে গেল। কিন্তু না, ফুটবলের এই লড়াইটাই আমাদের এই সম্পর্কটাকে মুচমুচে করেছে।’

মারকানার পাশেই এই রকমই ব্রাজিল আর আর্জেন্তিনার জার্সি গায়ে আরও দু’জনকে পেয়ে যাবেন। নকল পেলে আর নকল মারাদোনা। স্টেডিয়ামের এক দিকে রয়েছে বেলিনির বড় একটা মূর্তি। জুলে রিমে কাপ মাথার ওপর তুলে ১৯৫৮-র ব্রাজিলের অধিনায়ক। এর সামনেই পেলে আর মারাদোনা সেজে দু’জন। পেলে সেজেছেন যে ভদ্রলোক তিনি ব্রাজিলের লোক।

আর মারাদোনা এসেছেন আর্জেন্তিনা থেকে। মাথায় ঝাঁকড়া চুলের পরচুলা। গায়ে দশ নম্বর আর্জেন্তিনার জার্সি। পায়ের সামনে বল। ও ভাবে সেজে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছেন। সামনের চাদরে লোকজন পয়সা রেখে যাচ্ছে।

ও ভাবেই বিশ্বকাপ দেখতে আসার খরচ তুলছেন ‘মারাদোনা’। আমার অনুরোধে পেলে-মারাদোনা পাশাপাশি ছবিও তুললেন।

অসম্ভবকে সম্ভব করার অনেক অনেক গল্প দেখলাম বিশ্বকাপে। আতলেতিকো মিনেইরো ক্লাবের বাইরে আর্জেন্তিনার বেস ক্যাম্পের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। দেখি একটা বিরাট ডবল ডেকার বাস একটু দূরে দাঁড়ানো। সামনে গিয়ে খোঁজ নিতে মার্টিন পরিবারের সঙ্গে আলাপ হল। বুয়েনেস এয়ারেসের একটি সরকারি সংস্থায় কাজ করেন মার্টিন। দুই ছেলে এক মেয়ে। ছোট ছেলে ফার্নান্দো ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। এই ছেলেই বছরখানেক আগে একদিন এসে বলল, ‘বাবা চলো বিশ্বকাপ দেখতে যাই সবাই মিলে।’ কিন্তু বিশ্বকাপ দেখার অনেক খরচ। পরিবারের সবার বিমান টিকিট, হোটেল ভাড়া সব মিলিয়ে তো প্রচুর। ফার্নান্দো প্ল্যানটা জানাল।

‘চলো, একটা পুরনো বাস কিনে তাতেই থাকার ব্যবস্থা করে নিই। আমি তৈরি করে দেব সবটা।’ ইঞ্জিনিয়ার ছেলের কথায় ভরসা করেছিলেন বাবা। মার্টিনের কথায় এক বছর আগে এই সেকেন্ডহ্যান্ড বাসটা কিনে আমরা সিটগুলো প্রথমে খুলে ফেললাম। তার পর পুরোটা তৈরি করলাম নিজের প্রয়োজন মতো। ভেতরে ঢুকে সত্যি চমকে যেতে হয়। ড্রাইভারের সিটের পাশেই বড় টিভি। সেখানে খেলা দেখার ব্যবস্থা। সামনে কতগুলো চেয়ার। পেছনে একটা ওপেন কিচেন। ফ্রিজ। তার পেছনে থাকার ব্যবস্থা। তারও পেছনে ওয়ার্ড্রোব। টয়লেট। কতগুলো আর্জেন্তিনার জার্সি শুকোচ্ছে সেখানে। দারুণ ব্যবস্থা। সত্যি, সবটা দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। মার্টিন বলেছিল “পুরোটা তৈরি করতে আমার এক বছর সময় লেগেছে। ফার্নান্দো খুব খেটেছে। আমার বৌও অনেক সাহায্য করেছে। আজকে আমরা যে পরিবারের পাঁচ জন মিলেই বিশ্বকাপ দেখতে আসতে পারলাম তার আনন্দই আলাদা,” বলেই মার্টিন, ফার্নান্দোরা চলে গেলেন ফুটবল খেলতে। আর্জেন্তিনা বেস ক্যাম্পের বাইরে এখন প্রায় মেলা বসেছে। যাঁরা এখানে একবার মেসিদের দেখার আশায় এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের গায়ে আর্জেন্তিনার জার্সি, হাতে দেশের পতাকা। আর সঙ্গী ফুটবল। ছোট ছোট ছেলেদের নিয়ে বাবারা চলে এসেছেন। তারা ফুটবল খেলছে। কেউ আবার তাঁবু খাটিয়ে তার সামনে টিভি দেখার ব্যবস্থা করেছে। এ রকমই একজনের সঙ্গে আলাপ হল। পল। আর্জেন্তিনায় ফিজিওথেরাপিস্টের কাজ করে। কেউ আবার গাড়ি চালিয়ে সোজা চলে এসেছেন ব্রাজিলে। তাঁবু গেড়েছেন আর্জেন্তিনার বেস ক্যাম্পের বাইরে। হামাগুড়ি দিয়ে ওর ক্যাম্পে ঢুকতে দেখলাম, পড়ে আছে একটা ফুটবল আর একটা বিয়ারের ক্যান। পাশে একটা স্টোভ। চাউমিনের প্যাকেট। এটাই গত এক সপ্তাহের সংসার পলের। সাত দিনে একবারও মেসিদের দেখা পায়নি। শুধু কার্লোস বিলার্দোকে একবার দেখতে পেয়েছে বলেই খুব উত্তেজিত।

বিলার্দো এ বার মেসিদের টিমের টেকনিক্যাল ম্যানেজার।

বিশ্বাস করুন, একটা অদ্ভুত নেশা ওঁদের সবার গলায়। ফুটবলের প্রতি ভালবাসা, দেশের প্রতি আবেগ যে এই পর্যায়েও যেতে পারে, ব্রাজিলে না গেলে বুঝতেই পারতাম না। আরেক দিন আর্জেন্তিনার বেস ক্যাম্পে গেছি। দেখি একটা বাস থেকে অনেকগুলো বাচ্চা নামল। গায়ে লাল সাদা জার্সি। ওদের মধ্যে টমাস বলে একটা ছেলে ভাঙা ভাঙা ইংরাজি বলছিল। ও বলল, “আমরা রোসারিও থেকে আসছি।” রোসারিও! মানে মেসির শহর। আমার উৎসাহ দ্বিগুণ। ভিক্টর জানাল, “হ্যাঁ, ওখানে রেন্টো সেজারিনি ফুটবল স্কুলে আমরা সবাই ফুটবল শিখি। আমাদের স্কুল থেকেই মাসকারেনো আর ডেমিসেল উঠে এসেছে।” কিন্তু ওঁরা আর্জেন্তিনা থেকে এখানে এসে কী করছে? ভিক্টর জানাল, খেলা দেখবে। আর রোজ বেস ক্যাম্পে এসে প্র্যাকটিস দেখবে। যতটা দেখতে পাওয়া যায়। ওদের কোচরা বলেছেন, “যত দেখবে, তত চোখ খুলবে।” আমার মনে হচ্ছিল, এটা বোধহয় আরেকটা পদ্ধতি। পরম্পরা তৈরি করার। ক্যাম্পের বাইরে এলাম। আবেগের জ্বালানিটা আবার উসকে দিলেন আন্দ্রেয়া আর রামিরেজ। বুয়েনস এয়ারেসের দুই ট্যাঙ্গো ডান্সার। বেস ক্যাম্পের সামনে অডিও প্লেয়ার চালিয়ে ট্যাঙ্গো দেখাচ্ছিল ওরা। স্বপ্ন, মেসিদের একদিন নাচ দেখাবে। আর ওখানে নাচ দেখিয়ে যা পয়সা উঠছে, তার থেকে ব্রাজিল আসার খরচ কিছুটা মেটাচ্ছে দু’জনই।

কে জানে, আমাদের বলিউড সিনেমা এত রোম্যান্টিক হতে পারবে কিনা! এ রকম কত কত ছবি আশেপাশে ছড়িয়ে তার ইয়ত্তা নেই। রিওতে স্পেন আর চিলি ম্যাচের আগে দেখি গোটা কোপাকাবানা বিচটার দখল নিয়েছে চিলির সাপোর্টাররা। চিলির সমর্থকরা কিন্তু আক্ষরিক অর্থে একেবারে রেড হট চিলি। গাড়ির ছাদে উঠে পাগলের মতো পতাকা নাড়াচ্ছেন। মিছিল করছেন। কী করছেন না! ওই ম্যাচের আগে নাকি ৬০ হাজার চিলি সাপোর্টার এসেছিলেন ব্রাজিলে। ভাবতে পারেন! ৬০ হাজার!

হঠাৎ দেখা কোপাকাবানায় রাস্তার ধারে কয়েক জন ব্রাজিলিয়ান গেরুয়া ধুতি-পাঞ্জাবি পরে হরেকৃষ্ণ হরেরাম করছেন। ওঁরা ইস্কনের সদস্য। লম্বা টিকি, হাতে খোল, করতাল, আর হাতের মাইক্রোফোনে আমাদের চেনা সুরে তারস্বরে কৃষ্ণনাম করছিলেন ওঁরা। কিন্তু যতই মাইক্রোফোন থাক, ওই হাজার বিশেক মানুষের চিৎকারের সঙ্গে পাল্লা দেবেন কী ভাবে! ওদের খোল কিছুক্ষণের মধ্যেই চিলির সমর্থকদের দখলে। মাইক্রোফোনও। আর কিছুক্ষণ পরেই দেখি, ইস্কন সন্ন্যাসীরাও চিৎকার করছেন চিলির সমর্থকদের সুরেই। শুধু চি-চি-চিটা বদলে হরে-হরে আর ল্লি-ল্লি-ল্লিটা বদলে হয়ে গেল কৃষ্ণ-কৃষ্ণ-কৃষ্ণ! এই পাগলামি সত্যিই কৃষ্ণনামও ভুলিয়ে দেয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anilabha chattopadhyay fifaworldcup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE