Advertisement
E-Paper

ব্যক্তিগত বাঁধ ভেঙে কলঙ্কিত তারকা-জীবন

কেটেছে এগারোটা বছর। কম জলঘোলা হয়নি ‘বিবি নম্বর ওয়ান’ করিশ্মা কপূরের বিয়ে নিয়ে। ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ বলার বিস্তর চেষ্টা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত গত শনিবার, ৩১ মে বান্দ্রা পারিবারিক আদালতে জমা পড়েছে করিশ্মা ও তাঁর শিল্পপতি স্বামী সঞ্জয় কপূরের বিবাহবিচ্ছেদের আর্জি।

প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৪ ০১:০৮

কেটেছে এগারোটা বছর। কম জলঘোলা হয়নি ‘বিবি নম্বর ওয়ান’ করিশ্মা কপূরের বিয়ে নিয়ে। ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ বলার বিস্তর চেষ্টা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত গত শনিবার, ৩১ মে বান্দ্রা পারিবারিক আদালতে জমা পড়েছে করিশ্মা ও তাঁর শিল্পপতি স্বামী সঞ্জয় কপূরের বিবাহবিচ্ছেদের আর্জি।

সে দিন কোর্টের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নানা কানাঘুষো ছড়ায় সংবাদমাধ্যমে। সকালে বিচ্ছেদের আর্জি জমা দেওয়ার পর করিশ্মা-সঞ্জয় নাকি কোর্টেই একপ্রস্ত রাগারাগি করে ফেলেন। এবং তখন নাকি সইফ আলি খান তাঁর শ্যালিকা করিশ্মাকে বোঝান, যে সম্পর্ক থাকার নয়, তা নিয়ে কোর্টে এ ভাবে কাটাছেঁড়া করা অর্থহীন। করিশ্মা-সঞ্জয় সেই পরামর্শ শোনেন। সব ঠিক থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যেই দু’জনের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যেতে পারে। এমন গুজবও রয়েছে, করিশ্মা নাকি এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে দ্বিতীয় বার গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছেন। এবং সেই কারণেই সঞ্জয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ মামলাটা মসৃণ ভাবে সেরে ফেলতে চাইছেন তিনি।

গত ২২ এপ্রিল সঞ্জয়ের তরফে সন্তানদের অভিভাবকত্ব চেয়ে কোর্টে আবেদন করা হয়েছিল। আলোচনা চলছিল বিচ্ছেদ পরবর্তী বন্দোবস্ত নিয়েও। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, দুই বাচ্চাই থাকবে করিশ্মার কাছে। তবে সঞ্জয় বেশ অনেকটা সময় বাচ্চাদের সঙ্গে একা কাটাতে পারবেন। তাঁকে অবশ্য খোরপোষ দিতে হবে করিশ্মাকে। বাচ্চাদের দেখভালের খরচও বহন করতে হবে।

ইতিমধ্যে কোর্টে এসেছিলেন রণধীর কপূর-ববিতাও। মেয়ের বিবাহবিচ্ছেদ মামলায় বাবা-মায়ের আসাটা যেহেতু স্বাভাবিক, তাই এ নিয়ে হইচই করেনি সংবাদমাধ্যম। কিন্তু সইফের ‘মধ্যস্থতা’ নিয়ে ভালই চর্চা হয়েছে। ৩১শে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর আদালতে আসেন সইফ ও করিনা। শুনানি চলাকালীন সইফকে ঝুঁকে পড়ে করিশ্মার সঙ্গে কথাও বলতে দেখা যায়। সঞ্জয়ের আইনজীবী আমন হিঙ্গোরানির অবশ্য দাবি, সইফকে নিয়ে সংবাদমাধ্যম যে সব লিখছে, বাস্তবে তেমন কিছুই ঘটেনি।

তবে মোদ্দা কথা হল সঞ্জয় বা করিশ্মা কেউই তাঁদের সমস্যা নিয়ে প্রকাশ্যে বা সংবাদমাধ্যমে কাদা ছোড়াছুড়ি করেননি। বলিউডে হাই প্রোফাইল বিয়ে বা সম্পর্ক ভেঙেছে অনেক। ব্যক্তিগত অশান্তিকে হাটের মাঝে না এনেও যে সম্পর্কে ইতি টানা যায়, তার উদাহরণ আছেন অনেকেই।

আমির খানের বিবাহবিচ্ছেদের সময়ে তাঁর আইনজীবী ছিলেন ম্রুণালিনী দেশমুখ। পরে হৃতিক ও সুজান রোশনের বিচ্ছেদ মামলায় তিনিই সুজানের কৌঁসুলি। প্রসঙ্গত, হৃতিক শুধু একটি বিবৃতিতে তাঁর এবং সুজানের আলাদা হয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশ করেছিলেন। ভক্তদের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, এই সময়টা তাঁদের একা ছেড়ে দেওয়ার জন্য। ম্রুণালিনীর কথায়, “সেলেব্রিটিদের আশেপাশে সুপরামর্শদাতা থাকলে পরিস্থিতি নোংরা হয় না। ওঁরা বোঝেন, বিয়েটা ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে লোক হাসানো অর্থহীন।”

অথচ এই ম্রুণানিলীরই আর এক মক্কেল রিয়া পিল্লাইয়ের সঙ্গে তাঁর লিভ-ইন পার্টনার লিয়েন্ডার পেজের সমস্যা গড়িয়েছে দৃষ্টিকটূ দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপে। লিয়েন্ডার সম্প্রতি মেয়ে আইয়ানা-র একক অভিভাবকত্ব চেয়ে বান্দ্রা পারিবারিক আদালতে ২৭ পাতার আর্জি জানান, কোর্টের অনুমতি ছাড়া রিয়া যেন আইয়ানাকে মুম্বইয়ের বাইরে নিয়ে যেতে না পারেন। রিয়ার অভিযোগ, লিয়েন্ডার তাঁকে আটকাতে বাড়ির সামনে গুন্ডা বসিয়েছিলেন।

২০০৭ নাগাদ পরিচালক শেখর কপূরের স্ত্রী সুচিত্রা কৃষ্ণমূর্তি নিজের ব্লগে একটি কবিতা লিখেছিলেন। সেই কবিতা পড়ে অনেকেই বলেছিলেন, শেখরের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির জন্য প্রীতি জিন্টাকে দুষছেন সুচিত্রা। প্রীতি এক সাক্ষাৎকারে সুচিত্রাকে ‘অপ্রকৃতিস্থ’ বলেন। জবাবে সুচিত্রা খোলাখুলি কটূক্তি করেন প্রীতিকে।

কম তামাশা হয়নি ওম পুরী এবং নন্দিতা সি পুরীর বিয়ে নিয়েও। নন্দিতা এক দিন বধূ নির্যাতনের অভিযোগ আনেন প্রবীণ অভিনেতার বিরুদ্ধে। এ কথাও ওঠে, ওমের জীবনে তাঁর প্রথম স্ত্রী সীমার পুনরাবির্ভাবই নাকি অশান্তির অন্যতম কারণ। ওম বলেন, নন্দিতা তাঁকে শেষ করার চেষ্টা করছেন।

আদনান সামির বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা তিন। তার মধ্যে এক জনকে দু’বার বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বার সেই স্ত্রী সাবা গালাধারি-র সঙ্গে সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে দাঁড়ায় যে, ট্যাবলয়েডে রোজ তাঁদের চার দেওয়ালের কেচ্ছা ফলাও করে বেরোত। জোরে মিউজিক শোনা থেকে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার কী নেই সেই সব মশালাদার সাক্ষাৎকারে!

একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক। এই ঘটনাটা হৃতিকের (প্রাক্তন) শ্বশুরমশাইয়ের। যদিও জামাইয়ের মতো মার্জিত আচার-আচরণের কোনও গল্প নেই। ১৯৭৯ সাল। জিনত আমনের প্রেমে পড়েন সুজান রোশনের বাবা সঞ্জয় খান। ‘আবদুল্লা’র সেটে মাখোমাখো প্রেম। গোপনে নাকি বিয়েও করেন তাঁরা। সে খবর পৌঁছয় সুজানের মা জারিনের কাছে। তখন জারিন ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এক দিন তাজ হোটেলের এক পার্টিতে সঞ্জয় আর জিনতের হাতাহাতি বাধে। জিনতকে নাকি বেধড়ক পেটান সঞ্জয়। এমনকী জারিনও নাকি দু’-এক ঘা দেন। তবু সঞ্জয়দের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ করেননি জিনত।

চলে আসুন ১৯৫৭-য়। আইনি যুদ্ধে দুই কিংবদন্তি। দিলীপকুমার-মধুবালা। চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে মধুবালার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল বি আর ফিল্মস। সেই মামলার শুনানিতে মধুবালার আইনজীবী অভিযোগ করেন, ‘আহত প্রেমিক’ দিলীপকুমারই ওই ফিল্ম কোম্পানির প্রোডাকশন কন্ট্রোলার সি ভি কমলেশ্বর শাস্ত্রীকে উস্কেছিলেন মামলাটি করার জন্য। দুই তারকার প্রেম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে কোর্টে। সেখানে দিলীপকুমার জানান, “আই, টু, লাভ্ড হার, ইট ওয়াজ আ মিউচুয়াল ফিলিং।” এর পরে প্রেম থেকে চড় সব নিয়েই নাকি চর্চা হয় কোর্টে। পরের দিনে সেগুলোই হেডলাইন।

দিন বদলেছে। তবু সেই ট্র্যাডিশন কেন বদলায় না? তারকারা তো জানেনই, তাঁরা সর্বদা নজরবন্দি। তবু কেন ব্যক্তিগত সঙ্কটে কেউ কেউ হারিয়ে ফেলেন সংযম?

আইনজীবী আমন হিঙ্গোরানির মতে, ‘ইমেজ’ ধরে রাখাটাই তারকাদের সব চেয়ে বড় চাপ। তাঁর কথায়, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঔদ্ধত্য কাজ করে। আমি আইনজীবী হিসেবে আবেদনে এমন কিছু লিখি না, যেখানে কেচ্ছার উপাদান থাকে।” আর তারকাদের ছেলেমেয়েরা? আইনি যুদ্ধে নামার সময়ে বাবা-মায়েরা কি তাদের অবস্থাটা বোঝেন? হতেই তো পারে, স্কুলে গিয়ে তারা সহপাঠীদের টিটকিরির মুখে পড়ল। নিশ্চয়ই বোঝেন বলছেন ম্রুণালিনী। “ওঁদের সব থেকে বড় ভয় হল মিডিয়া। যে মুহূর্তে কোর্টে ঝগড়া করেন, নিজেরাই বুঝতে পারেন পরের দিনের হেডলাইন কী হতে চলেছে। আস্তে আস্তে ওঁদের স্বর নরম হয়ে যায়,” বলছেন তিনি।

সন্তান নিয়ে সমস্যা এক রকম। আবার পুরনো প্রেমের বিড়ম্বনাও কম নয়। যদি বেরিয়ে পড়ে অতীত? প্রিয়ঙ্কা চোপড়া আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন প্রাক্তন প্রেমিক আসিম মার্চেন্টকে। সম্প্রতি আসিম ঘোষণা করেছিলেন, প্রিয়ঙ্কার প্রাক্তন সচিব প্রকাশ জাজুকে নিয়ে ছবি বানাবেন। প্রিয়ঙ্কার চরিত্রে কে অভিনয় করবেন, তা-ও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। নোটিস পেয়েও আসিম পিছু হটতে নারাজ। কাজেই প্রাক্তন বিশ্বসুন্দরীর জীবনের গপ্পো ফিল্মি পত্রিকার পাতা থেকে ঝাল-মশলা সহকারে বড় পর্দায় পরিবেশিত হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।

মুম্বইয়ে একটি অনুষ্ঠানে বিদ্যা বালন। শনিবার। ছবি: এএফপি

karishma kapoor saif ali khan om puri divorce priyanka das gupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy