সাল ২০০১। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে মাস কমিউনিকেশনস ফার্স্ট ইয়ারের প্রথম ক্লাস।
সবার শেষে একটা ছেলে ক্লাসে ঢুকল। প্রথম দিন প্রফেসর শুভা দাসমল্লিক ‘দিল চাহতা হ্যায়’ ছবিটার স্ক্রিনিংয়ের জন্য তোড়জোড় করার ফাঁকেই সবাইকে জিজ্ঞাসা করছেন মাস কমিউনিকেশনস পড়ার পর কেরিয়ারে কে কী করতে চায়।
ক্লাসে প্রায়ই লেট করা সেই ছেলেটা বলেছিল, “ম্যাম, হিরো হব। কমার্শিয়াল হিন্দি ছবিতে লিড রোলে নিজেকে দেখতে চাই।” সঙ্গে একটা লাজুক হাসি। ক্লাসের সবাই তখন ওর দিকে তাকিয়ে। বলে কী!
কলেজ থেকে নিশানের সঙ্গে সেই পরিচয়। আর ১৩ বছর পর ভাল লাগছে যে প্রথম ক্লাসে ওর বলা কথাগুলো সত্যি হতে চলেছে। আজ মুক্তি পাচ্ছে কর্ম মুভিজের স্পোর্টস ফিল্ম ‘বদলাপুর বয়েজ’। লিড রোলে দেখা যাবে নিশানকেই।
উত্তরপ্রদেশের ছোট্ট একটা গ্রাম বদলাপুর। গ্রামের ছেলেদের নিয়ে তৈরি একটা কবাডি দল গোটা রাজ্যে খেলে বেড়ায়। কিন্তু জিততে পারে না। এই হেরো দলটাকেই জাদুমন্ত্রে বদলে দেন কোচ অন্নু কপূর। তাই নিয়েই ‘বদলাপুর বয়েজ’। ‘লগান’য়ে যেমন ছিল ক্রিকেট, ‘বদলাপুর বয়েজ’য়ে কবাডি। কিন্তু কিছুটা মিল এক জায়গায়। একটা গ্রামের লড়াইয়ের মাধ্যম হয়ে উঠেছে একটা খেলা। ছবির পরিচালক শৈলেশ বর্মা এর আগে সলমন খানের ছবি ‘বীর’য়ের চিত্রনাট্য লিখেছেন। কিন্তু পরিচালক হিসেবে ‘বদলাপুর বয়েজ’ তাঁর ডেব্যু। নিশানের পাশে যাকে দেখা যাবে, সেই পূজা গুপ্তা অবশ্য এর আগেই ‘ভিকি ডোনর’, ‘মিকি ভাইরাস’, ‘ওহ্ মাই গড’, ‘ব্লাড মানি’র মতো বলিউডের ছবিতে কাজ করেছেন। ছবির শু্যটিং অধিকাংশটাই হয়েছে রাজস্থানের জয়পুরের কাছের একটা গ্রামে।
‘বদলাপুর বয়েজ’ কেপি নিশানের প্রথম হিন্দি ছবি হলেও মালয়ালম ও তেলুগু ছবিতে অভিনয় করেছেন ইতিপূর্বে। পনেরোটা ছবির লিড রোলে দেখা গিয়েছে বেহালার ছেলেটিকে। পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে অভিনয় নিয়ে পাশ করা নিশানের সঙ্গে মুম্বইয়েও প্রায়ই আড্ডা হত। নিশান তখন স্ট্রাগল করছে। সুভাষ ঘাই ‘সাইকেল কিক’ বলে একটা ছবির জন্য ওঁকে সইও করিয়েছিলেন। কিন্তু রিলিজ হয়নি ছবি। এর পরেই দক্ষিণের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম ব্রেক। মালয়ালম ছবি ‘রিতু’র জন্য ২০১০-এ একাধিক পুরস্কার জিতেছেন। প্রিয়দর্শনের ছবি ‘গীতাঞ্জলি’তে কাজ করেও প্রশংসা পেয়েছে দক্ষিণের। কথাবার্তা চলছে বাংলা ছবিতে কাজের জন্য।
‘বদলাপুর বয়েজ’ কি আলাদা করে জায়গা করে নিতে পারবে দর্শকমনে? “কেন নয়? গত কয়েক বছর ধরে স্পোর্টস ফিল্মগুলো আলাদা জায়গা করে নিয়েছে দর্শকের মনে। ‘লগান’, ‘চক দে...’, ‘মেরি কম’...। মানছি ছবিগুলোয় অত বড় মাপের তারকারা কাজ করেছেন। কিন্তু কোথাও না কোথাও খেলাগুলোও টেনেছে দর্শকদের। কবাডির জনপ্রিয়তা হালে বেড়ে যাওয়ায় ‘বদলাপুর বয়েজ’ হতাশ করবে না দর্শকদের,” বলছে নিশান।
বাবা কেএস প্রসাদ সত্তরের দশকে মহামেডান স্পোর্টিংয়ের হয়ে ফুটবল খেলেছেন। জন্মসূত্রে কন্নড় নিশান নিজেও টেনিসে প্রতিনিধিত্ব করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাড়ায় ফুটবল-ক্রিকেট তো ছিলই। কিন্তু কবাডি প্রথম বার। তা-ও আবার সেলুলয়েডে ফুটিয়ে তোলার চ্যালেঞ্জ। ‘বদলাপুর বয়েজ’ কি পারবে বক্স অফিসে সাড়া জাগাতে? “কোনও খেলায় অভিষেক হওয়ার আগে একজন ক্রীড়াবিদের স্নায়বিক চাপটা কোন পর্যায়ে থাকে, এখন বুঝতে পারছি,” বলছিল প্রথম বার নিজেকে হিন্দি ছবির লিড রোলে দেখতে চলা লাজুক ছেলেটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy