Advertisement
E-Paper

বাড়িতেই চার দিন জিমযাত্রা

জিম তো পুজোয় বন্ধ থাকবেই। তা বলে ওয়ার্কআউটও বন্ধ রাখা যায় নাকি? পরামর্শ দিলেন তিন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ। শুনলেন অদিতি ভাদুড়ি।জিম তো পুজোয় বন্ধ থাকবেই। তা বলে ওয়ার্কআউটও বন্ধ রাখা যায় নাকি? পরামর্শ দিলেন তিন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ। শুনলেন অদিতি ভাদুড়ি।

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০০

কোর এক্সারসাইজ অবশ্যই

চিন্ময় রায়

ফিটনেস বিশেষজ্ঞ

পুজোর চার দিনের ওয়ার্কআউট স্ট্র্যাটেজিতে থাক স্ট্রেচিং, কোর এক্সারসাইজ আর অতি অবশ্যই বডিওয়েট এক্সারসাইজ।

চিন্ময় রায়

ঘুম থেকে উঠেই এক গ্লাস হাল্কা গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে খান। দেরিতে ঘুম থেকে উঠলেও ঘুম থেকে ওঠার এক ঘণ্টার মধ্যেই সেরে ফেলুন ওয়ার্কআউট।

কী কী করবেন পুজোর এই ক’দিন?

ঘরের এক দেওয়াল থেকে অন্য দেওয়াল পর্যন্ত দ্রুত হাঁটুন। হাঁটার সময় হাত চক্রাকারে ঘোরাবেন। হাঁটতে হাঁটতেই সামনে কয়েকটা কিক মারুন। ঘাম ঝরতে শুরু করলেই মেঝেতে শুয়ে স্ট্রেচিং শুরু করবেন।

স্ট্রেচিং করলে পেশিতে রক্তের সঞ্চালন ভাল হবে। পাশাপাশি নিউট্রিয়েন্ট পৌঁছবে। শরীরে এনার্জি আসবে।

করতে পারেন ওয়াইপারও। চিত্‌ হয়ে শুয়ে হাত দুটো কাঁধ বরাবর ছড়িয়ে দিন। দুই হাঁটু ভাঁজ করে কোমরটা শরীরের দু’দিকে ঘোরান। দু’দিকেই করুন ১০ বার করে।

একটা ভাল ওয়ার্কআউট হল হিপের ৯০-৯০ স্ট্রেচ। মাটিতে বসে দুটো হাত এমন ভাবে ভাঁজ করুন যাতে থাইয়ের সঙ্গে শিনবোন-এর ৯০ ডিগ্রি কোণ তৈরি হয়। একটা হাঁটু শরীরের সামনে আর অন্যটা রাখুন কোমরের পিছনে। এ বার ঠাকুর প্রণামের ভঙ্গিতে সামনে ঝুঁকে বুক হাঁটুতে লাগানোর চেষ্টা করুন আর ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। দু’দিকেই করবেন তিন বার। এতে হিপের পেশি দীর্ঘায়িত হয়। টানা হাঁটা বা বসার পর কোমর ধরে থাকার ব্যাপারটা কমে যায়। পেটের অস্বস্তি, পেটভার কম হয়।

আর একটা মজার ওয়ার্কআউট আছে। আমেরিকান মিলিটারিরা এই ওয়ার্কআউটটা করে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দু’পায়ে ভর রেখে সামান্য লাফান। লাফানোর সময় পেট থেকে শ্বাস ছেড়ে জোরে হো হো আওয়াজ করুন। মোট ২০-৩০ বার লাফান আর আওয়াজ করুন। একটু বিশ্রাম নিয়ে রিপিট করুন ২-৩ বার।

শরীরে অনেক অক্সিজেন ঢোকে এই ওয়ার্কআউটটা করলে। শরীর রিল্যাক্সড হয়। ছেলেরা ১৫-২০টা পুশ আপ দিতে পারেন। পরে রিপিট করে নেবেন চার বার। মেয়েরা হাঁটুতে ভর রেখে ৩০ সেট পুশ আপ দিন সম্ভব হলে। দু’লিটারের দুটো জলভর্তি বোতল দু’হাতে নিয়ে করতে পারেন বটল স্যুইংও। সোজা দাঁড়ানো অবস্থা থেকে হাফ স্কোয়াট করুন আর উঠেই বোতলটা সামনে দোলনাতে দোলার ভঙ্গিতে স্যুইং করুন।

৩-৪ সেট ভাবে করুন ১২ বার। একদিন করুন এই দুটো জোর বাড়ানোর ব্যায়াম। পর দিন করুন পায়ের জন্য শরীরের ওজন বা ২ লিটারের বোতল নিয়ে ১২-১৫ টা স্কোয়াট। ৩-৪ বার রিপিট করুন। সঙ্গে বোতল নিয়েই ১২-১৫টা লাঞ্জ একই রকম ভাবে ৩-৪ বার রিপিট করুন।

কিনে নিন থেরাব্যান্ড

কুন্তল রায়

সিনিয়র ফিটনেস কনসালট্যান্ট

পুজোর ক’দিন ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের জুড়ি নেই। যাদের বয়স কম, ফিটনেস লেভেল ভাল, তারা বার্পি এক্সারসাইজ করতে পারেন। এটা একটা ওভারঅল কার্ডিও এক্সারসাইজ যেটা একই সঙ্গে মাসল ঠিক রাখে আবার কার্ডিও ভাসকুলার সিস্টেমটাকে মজবুত করে তোলে।

২০ সেকেন্ড সময় দিয়ে করতে পারেন পুশ আপ, জাম্প বা স্কোয়াট। ২-৩টো সেট করলেই যথেষ্ট। আর ১৫-২০ বার রিপিট করলে তো কথাই নেই।

কুন্তল রায়

মাউন্টেন ক্লাইম্বিং করতে পারেন প্রধানত লোয়ার অ্যাবসের জন্য। এই ওয়ার্কআউটের কার্ডিও ভাসকুলার ইনটেনসিটি লেভেল বেশ বেশি। কার্ডিওর কাজটা ভাল হওয়ার পাশাপাশি মাসলটাও সুন্দর তৈরি হবে এই ওয়ার্কআউটটা করলে।

পুজোর শেষ বাজারে কিনে নিতে পারেন একটা থেরাব্যান্ড রাবার টিউব।

কী ভাবে করবেন, তার গাইডলাইন দেওয়াই থাকে। ঘরে বসে সারা শরীরের মাসলের ওয়ার্কআউটের জন্য এর থেকে ভাল ব্যবস্থা সত্যিই নেই। আধ ঘণ্টা করলেই যথেষ্ট। ইনস্ট্যান্ট মাসল পাম্প করা, ট্রাইসেপ বা বাইসেপ তৈরিতে এই ওয়ার্কআউটের জুড়ি নেই।

পেটের অংশ সুন্দর করতে কোর মাসলের এক্সারসাইজ করতেই হবে। অ্যাবস সুদৃঢ় করা বা শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে বার্ডডগ ওয়ার্কআউটের কোনও জুড়ি নেই। অবশ্যই কোর মাসলের প্ল্যাঙ্ক বা সাইড প্ল্যাঙ্ক করতেই হবে। এর মাধ্যমে পেটের পেশিগুলোকে সঙ্কুচিত করা যায়। প্রায় ২০-৩০ সেকেন্ড করতে হবে এই ওয়ার্কআউটগুলো।

সার্কিটের হিসেবে প্রত্যেকটা এক্সারসাইজ তিনটে সার্কিট করলেই চলবে।

পুজোতে সারা দিন হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে গেলে শিরদাঁড়ার ওপরেও সাঙ্ঘাতিক চাপ পড়ে যায়। পেশাগত কারণেও ইদানীং আমাদের স্পাইনের ওপর যথেষ্ট চাপ তৈরি হয়।

শিরদাঁড়া ভাল রাখতে করতে পারেন পেলভিক ব্রিজ, ভুজঙ্গাসন এবং অর্ধশলভাসন।

পেলভিক ব্রিজ করতে সোজা হয়ে শুয়ে পা দুটো ভাঁজ করে কোমর আস্তে আস্তে ওপরে তুলে ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। আবার ধীরে ধীরে নীচে নামান। এ ভাবে করুন ১০ সেকেন্ড।

হাঁটুন পারলে করুন সাইক্লিংও

প্রীতম মুখার্জি রায়

ফিটনেস অ্যান্ড নিউট্রিশনাল কনসালট্যান্ট

পুজোর ক’দিন প্রচুর খাওয়াদাওয়া হয়ে যায়।


প্রীতম মুখার্জি রায়

নিয়মিত এক্সারসাইজ করাটা তাই ভীষণ জরুরি। যাঁদের ফিটনেস লেভেল ভাল, তাঁদের বলব স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটি করুন। পারলে ব্যাডমিন্টন, স্কোয়াশ খেলুন বেশি করে। এতে ঘোরার ক্লান্তি যেমন কাটবে, তেমনই রুটিনের বাইরে কিছু নতুনত্বও আসবে।

এ সব না হলে স্রেফ হাঁটুন। যত পারেন। হাঁটার মতো ভাল এক্সারসাইজ হয় না। ছুটির ক’দিন শুয়েবসে না থেকে করতে পারেন কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজও। স্কোয়াট, স্পট জাম্পিং, স্কিপিংও এই দিনগুলোয় করার জন্য খুব ভাল এক্সারসাইজ।

যাই করুন না কেন, কোর মাসলকে মজবুত করে তুললেই কিন্তু অনেকটা কাজ হয়ে যায়। কাজেই লোয়ার অ্যাবস, লোয়ার ব্যাক এক্সারসাইজ করতেই হবে। মিউজিক চালিয়ে ডান্সও করতে পারেন। এতে যেমন কার্ডিওটা হবে, মাসলগুলোও শক্তিশালী হবে।

যাঁদের সাইকেল আছে, তাঁদের বলব সাইক্লিং করুন। ব্যায়াম যদি করতে চান, সূর্য-নমস্কার করতে পারেন। এটা এমন একটা পাওয়ার যোগা যাতে ফিটনেসের পুরো ব্যাপারটাই কভার করা যায়।

পুজোর সময় খাওয়াদাওয়ার বিধিনিষেধ মেনে চলেন এমন মানুষ খুঁজে পাবেন কি না সন্দেহ আছে। রাত্রের দিকে যদি ভারী খাবার খেয়ে ফেলেন, তা হলে বলব লাঞ্চটা সারুন স্যুপ-স্যালাড দিয়ে। জল খাওয়া দরকার প্রচুর পরিমাণে। এতে শরীরে টক্সিনের পরিমাণ কমবে। আর অবশ্যই দু-আড়াই ঘণ্টার গ্যাপে খাবার খাবেন।

জিমে না গেলে...

• ঘুম থেকে দেরিতে উঠলেও ওঠার ১ ঘণ্টার মধ্যে সেরে ফেলুন ওয়ার্কআউট।

• যে এক্সারসাইজই করুন না কেন, তিনটে সার্কিট করতেই হবে। আর প্রত্যেকটা ওয়ার্কআউটের ক্ষেত্রে রিপিটেশন মাস্ট।

• ফিটনেস ভাল হলে স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটি করুন। ব্যাডমিন্টন, স্কোয়াশ বা সাইক্লিং পুজোর দিনগুলোয় ফিট রাখবে আপনাকে।

• নানা ধরনের ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ জিমে ওয়ার্কআউটের বিকল্প হিসেবে খুব ভাল। সূর্য প্রাণায়ামও করতে পারেন। এই পাওয়ার যোগা-টা করলে ফিটনেসের গোটা ব্যাপারটাই একধাক্কায় মিটে যাবে।

• পুজোয় খাওয়ার বেশ অনিয়ম হয়। প্রচুর জল খাওয়া দরকার। এতে শরীরের টক্সিন বেরিয়ে যাবে।

fitness tips aditi bhaduri ananda-plus pujo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy