উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁরা জানেন, নিয়মিত ওষুধ খেয়েও কখনওসখনও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়। হাসপাতালে অনেক সময়েই দেখা যায়, কোনও উচ্চরক্তচাপের রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না, কারণ তাঁর রক্তচাপ কমছে না। অথচ তিনি নিয়ম মেনে ওষুধ খেয়েছেন! অর্থাৎ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুধু ওষুধ যথেষ্ট, তা নয়। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ওষুধের পাশাপাশি উচ্চরক্তচাপের রোগীদের জীবনযাপন এবং তাঁরা কী খাওয়াদাওয়া করছেন, অনেক ক্ষেত্রে তার উপরেও নির্ভর করে, তাঁদের ভাল থাকা।
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তা হার্টের রোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির রোগেরও ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই ভাল থাকার জন্যই খাবারে ফল, সব্জি, বাদাম, তৈলাক্ত মাছ এবং দারচিনি জাতীয় বিশেষ ধরনের মশলা রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা। আমেরিকার কৃষি দফতরের একটি গবেষণা থেকে আবার জানা যাচ্ছে, প্রতিদিন এক জন উচ্চরক্তচাপের রোগীর খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত এক কাপ রান্না করা বা কাঁচা সব্জি, এক কাপ ফল বা এক কাপ তাজা ফলের রস, ২ কাপ কাঁচা পাতাজাতীয় সব্জি দিতে তৈরি স্যালাড এবং আধ কাপ শুকনো ফল। কিন্তু উচ্চরক্তচাপের সমস্যা থাকলে কোন ফল বা কোন খাবার খাওয়া ভাল, তা জানেন কি? নানা রকম গবেষণা লব্ধ ফলের উপর ভিত্তি করে এমন ১৩টি খাবারের একটি তালিকা তৈরি করেছেন পুষ্টিবিদেরা।
১। কলা: কলাতে থাকা পটাশিয়াম শরীরের সোডিয়ামের খারাপ প্রভাব দূর করতে সাহায্য করে।
২। বিট: বিটের রস সিস্টোলিক রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে বলে জানাচ্ছে ২০২২ সালে ব্রাজিলের সাওপাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, প্রতিদিন বিটের রস খাওয়ার বদলে যদি বিট দিয়ে স্যালাড বা অন্য রান্না খাওয়া যায়, তা হলেও একই উপকার মিলবে।
৩। তরমুজ: সাইট্রুলিন নামে একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে তরমুজে। সেই উপাদানও রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
৪। ওট্স: ওটসে থাকা বিটা গ্লুকান হার্ট ভাল রাখে। রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণ করে।
৫। পাতাজাতীয় সব্জি: বাঁধাকপি, সর্ষে শাক, পালং শাকে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
৬। রসুন: রসুন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।
৭। বাদাম: বাদাম ‘হাইপারটেনশন’ কমাতে সাহায্য করে।
৮। লেবু জাতীয় ফল: ২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রতিদিন লেবুর রস খেয়েও কোনও রোগীর রক্তচাপ কমেছে।
৯। তৈলাক্ত মাছ: আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, প্রতি সপ্তাহে দু’বার তিন আউন্স করে তৈলাক্ত মাছ খেলে তা হার্টের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তৈলাক্ত মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
১০। মজানো খাবার: কিমচি, কোমবুচা, দই, অ্যাপল সাইডার ভিনিগার জাতীয় মজানো খাবার হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
১১। ডাল জাতীয় খাবার: ২০২২ সালের একটি গবেষণা বলছে, নিয়মিত ডাল জাতীয় খাবার খেয়েছেন, তাঁদেরও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থেকেছে
১২। দারচিনি: প্রতিদিন ২ গ্রাম করে দারচিনি আট সপ্তাহ ধরে খাওয়ানোর পরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
১৩। টম্যাটো: টম্যাটোয় থাকা লাইকোপিন এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। যা হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। ২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, টম্যাটো সিস্টোলিক রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করেছে।