ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রমের রোগে কয়েক কোটি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতি বছর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) হিসাবেই মিলছে এই তথ্য। আর এক স্নায়ুবিজ্ঞানী বলছেন, স্মৃতিভ্রম-সহ মস্তিষ্কের নানা রোগের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যেই।
শান্তির আশ্রয়েই মস্তিষ্কের অশান্তি?
ঘর মানে খানিক জিরোনোর আশ্রয়। হাজার কাজের পরে যেখানে ফিরলে মস্তিষ্কও নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নেয়। কিন্তু সেই ঘরও মস্তিষ্কের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ নয় বলে জানাচ্ছেন ওয়াশিংটনের স্নায়ুবিজ্ঞানী রবার্ট ডব্লিউ বি লাভ।
খ্যাতনামী স্নায়ু গবেষক তথা অ্যালঝাইমার্স এবং ডিমেনশিয়া সংক্রান্ত বেশ কিছু বইয়ের লেখক রবার্ট তাঁর সমাজমাধ্যমেও সক্রিয়। মাঝেমধ্যেই তাঁর অর্জিত জ্ঞান ভাগ করে নেন অনুরাগীদের সঙ্গে। তাঁর অনুগামীদের তালিকায় রয়েছেন ম্যাডোনা, করিশ্মা কপূর, সামান্থা রুথ প্রভুর মতো তারকারা। সম্প্রতি রবার্ট একটি ভিডিয়োয় জানিয়েছেন, ঘরে থাকা কোন কোন জিনিস মস্তিষ্কের ক্ষতি করছে। তিনি বলছেন, ‘‘দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের আপাতসাধারণ কিছু জিনিস মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এতটাই যে, তাকে শুধু ক্ষতিকর না বলে 'বিষাক্ত' বলাই ভাল।’’
কোন কোন জিনিসে ক্ষতি হতে পারে মস্তিষ্কের?
রবার্ট জানাচ্ছেন, শুধু ২০২১ সালেই ৫ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষের স্মৃতিভ্রমের রোগ ধরা পড়েছিল। তিনি বলছেন, ‘‘অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়া যে বাড়ছে, তার কারণ আমাদের চারপাশের বিষাক্ত পরিবেশ। আমরা যে পরিবেশে নিশ্চিন্তে শ্বাস নিচ্ছি, যা খাচ্ছি, সে সবই এখন অনেক বেশি বিষাক্ত।’’ দৈনন্দিন ব্যবহারের এমনই তিন বিষাক্ত জিনিসের কথা উল্লেখ করেছেন রবার্ট।
১। ঘরের সুগন্ধী
রবার্টের বিষাক্ত জিনিসের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ঘরে সুগন্ধ ছড়ানোর জিনিসপত্র। তিনি বলছেন, যে কোনও ধরনের এয়ার ফ্রেশনার ঘরে সুগন্ধ ছড়ানোর পাশপাশি শরীরেরও ক্ষতি করছে। কারণ, এয়ার ফ্রেশনার বাতাসে এক ধরনের উদ্বায়ী জৈব যৌগ ছড়ায়, যা শ্বাসের সঙ্গে শরীরে গেলে, রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। ওই উপাদান যেমন ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে, তেমনই মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ক্রিয়ারও ক্ষতি করতে পারে।
২। মোমবাতি
ইদানীং লোডশেডিং হলে মোমবাতি জ্বালানোর চল নেই তেমন। তবে ঘর সাজানোর জন্য বা মনকে শান্ত করার জন্য নানা ধরনের সুগন্ধী মোমবাতি জ্বালান অনেকেই। সারাদিনের ব্যস্ত সময়ের পরে বাড়ি ফিরে এমন সুগন্ধী মোমবাতি জ্বালিয়ে বিশ্রাম নেওয়া সাম্প্রতিক ট্রেন্ড। কিন্তু রবার্ট বলছেন, ‘‘মোমবাতিতে ব্যবহৃত প্যারাফিন, সিন্থেটিক সুগন্ধী শরীরের ক্ষতি করছে। ঘরে প্যারাফিন জ্বললে তা থাকে টোলুইন নামের এক ক্ষতিকর উপাদান নিঃসৃত হয়, যা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। ঘরের পরিবেশ বিষাক্ত হতে পারে ওই উপাদানে।’’ রবার্টের পরামর্শ, যদি বিশ্রামের জন্য এমন বাতি জ্বালাতেই হয় তবে মৌমাছির চাক থেকে বার করা মোম বাজার থেকে কিনে এনে তার সঙ্গে এসেনসিয়াল অয়েল মিশিয়ে বাড়িতে বাতি বানান। তাতে ক্ষতির মাত্রা অনেক কমবে।
৩। ননস্টিক রান্নার বাসন
কম তেলে রান্নার সুবিধার জন্য ননস্টিক প্যান, কড়াই ব্যবহার করার চল রয়েছে বহু পরিবারে। কিন্তু রবার্ট জানাচ্ছেন, তেল কম যাওয়ায় ওই ধরনের প্যানকে স্বাস্থ্যের জন্য ভাল বলে মনে হলেও আদপে তা নয়। তাঁর কথায়, ‘‘যে সমস্ত ননস্টিক বাসনে টেফলনের কোটিং থাকে, তা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ, টেফলন হল এক ধরনের ফ্লিউরোপলিমার, যা অতিরিক্ত গরম হলে বা তাতে হাতা-খুন্তির ঘষা লাগলে তা থেকে ফ্লুওরাইড় বেরিয়ে মিশতে পারে খাবারে। এই ফ্লুওরাইড মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়।’’