ক্যানসার থেকে প্রতি বছর যত রোগীর মৃত্যু হয়, তাঁদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন কোলন ক্যানসার বা মলাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা। এর কারণ, মলাশয়ের ক্যানসার যখন ধরা পড়ে, তখন রোগ অনেকটা ছড়িয়ে যায়। এর উপসর্গ সহজে বোঝা যায় না। এটি শরীরের ভিতরে নিঃসাড়ে বাড়তে থাকে। ফলে যখন ধা পড়ে তখন তাকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে!
মলাশয়ের ক্যানসারের ক্ষেত্রে তাই রোগের উপসর্গ বোঝা অত্যন্ত জরুরি। কারণ সময় থাকতে রোগ ধরতে পারলে তার নিরাময় সম্ভব। রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। তবে উপসর্গ জানার আগে বুঝতে হবে, কোলন ক্যানসার বা মলাশয়ের ক্যানসার আসলে কী রকম।
কোলন ক্যানসার কী?
কোলন হল অন্ত্রের সেই অংশ, যেখানে খাবার হজম হওয়ার এবং তা থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে নেওয়ার পরে শরীর বর্জ্য হিসাবে জমিয়ে রেখে। এই বর্জ্যই হল মল। আর তা যেখানে জমে থাকে, সেটি মলাশয়। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় কোলন। উল্টনো ‘ইউ’-এর মতো দেখতে বৃহদন্ত্রের শুরু এবং শেষের প্রান্তের সামান্য অংশ ছাড়া বাকি বেশির ভাগ অংশটিই হল এই কোলন। আর কোলনে যখন হঠাৎ অনিয়মিত এবং অনিয়ন্ত্রিত ভাবে কোষ বাড়তে শুরু করে, তখন তাকেই কোলন ক্যানসার বলে।
কোলন ক্যানসার কেন হয়?
কোলন ক্যানসার হওয়ার বিভিন্ন কারণ হতে পারে। পরিবারে কারও হয়ে থাকলে বা জিনগত কারণে হতে পারে, মলাশয়ে পলিপ হলে এবং তার চিকিৎসা না হলেও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া আলসারেটিভ কোলাইটিসের সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত প্রদাহের কারণেও বাড়তে পারে এ ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি। জীবনযাপনের ধরনের উপরেও নির্ভর করে অনেক কিছু। দৈনিক খাবারে যদি ফাইবারের মাত্রা কম থাকে, রেড মিট বেশি খান, যদি অতিরিক্ত মদ্যপান করেন বা অতিরিক্ত ধূমপানের অভ্যাস থাকে, তবে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এ ছাড়া শারীরিক ভাবে সক্রিয় না থাকলে, দিনের অধিকাংশ সময় বসে কাটালে, শরীরে স্থূলত্ব বাড়লেও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
কোলন হল অন্ত্রের সেই অংশ, যেখানে খাবার হজম হওয়ার এবং তা থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে নেওয়ার পরে শরীর বর্জ্য হিসাবে জমিয়ে রেখে। ছবি: সংগৃহীত।
কখন সতর্ক হবেন?
কিছু কিছু উপসর্গ লক্ষ করলে সতর্ক হওয়া ভাল। নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শও নেওয়া যেতে পারে।
১। পেট পরিষ্কার হওয়ার সমস্যা
কোলন ক্যানসারের রোগীদের অনেক সময়েই মনে হয়, পেট পরিষ্কার হচ্ছে না পুরোপুরি। এই বিষয়টি যদি বেশ কিছু দিন টানা চলতে থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এ ছাড়াও টানা পেট-খারাপ বা কোষ্ঠকাঠিন্য হলে এবং ওষুধ খেয়েও তা না কমলে সতর্ক হওয়া উচিত। অনেক সময় কোলন ক্যানসারের রোগীদের মলের আকৃতি সরু হয়ে আসে, এ ছাড়াও অন্য নানা রকমের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। যে কোনও ব্যাখ্যাহীন পরিবর্তন দেখলে তা এড়িয়ে না যাওয়াই সমীচীন।
২। মলে রক্ত
যদি মলের রং লালচে বা অত্যন্ত বেশি কালচে হয়, তবে বুঝতে হবে, মলাশয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যা কোলন ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। এই ঘটনা দিনের পর দিন ঘটলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুন:
৩। পেটে ফাঁপা এবং যন্ত্রণা
টানা পেটে ব্যথা বা সূচ বেঁধানোর মতো যন্ত্রণা হলে এবং পেট ফাঁপার সমস্যা টানা চলতে থাকলে তা কোলনে টিউমারের কারণে হতে পারে। ব্যথা এবং ব্লোটিং বা পেট ফাঁপার সমস্যা কয়েক দিন ধরে টানা চলতে থাকলে, অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
৪। হঠাৎ ওজন কমা
আচমকা ওজন কমাও ভাল লক্ষণ নয়। হয়তো প্রথম প্রথম ওজন কমলে ভাল লাগতে পারে। কিন্তু তা অকারণে হলে চিন্তার বিষয়। কোলন ক্যানসার না হলেও অন্য যে কোনও বড় রোগের কারণে এমন হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৫। রক্তাল্পতা, ক্লান্তিবোধ
অনেক সময় মলাশয়ে টিউমার হলে শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়। যা থেকে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার সমস্যা হতে পারে। তা থেকে আসতে পারে ক্লান্তিবোধ। এ ছাড়াও টানা অকারণ ক্লান্তিবোধ হতে থাকলে সতর্ক হোন।