ভারতীয় রাজনীতির কেতাদুরস্ত নেতা-নেত্রীদের তালিকা বানানো হলে মহুয়া মৈত্র তাতে অনায়াসে প্রথম দশে জায়গা করে নেবেন। বাংলার সাংসদের গাল ঢাকা রোদচশমা, কাঁধ ছোঁয়া ‘স্ট্রেট’ চুল, নিত্যনতুন হ্যান্ডলুম শাড়ি, এমনকি, তিনি কখন কোন হাত ব্যাগ নিয়ে সংসদ ভবনে ঢুকছেন, সে দিকেও নজর রাখেন ফ্যাশন সচেতন এবং খবর সচেতন ভারতীয়েরা। বছরখানেক আগে এই নজরদারদেরই চোখ আটকেছিল মহুয়ার একটি লুই ভিতোঁ ব্যাগে। যার দাম ছিল ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। ওই ব্যাগ নিয়ে কম কটাক্ষ শুনতে হয়নি কৃষ্ণনগরের সাংসদকে। মহুয়া অবশ্য পাল্টা জবাবও দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘মোদীর দশ লক্ষ টাকার স্যুট বিক্রি করে ব্যাগ কিনেছি।’’ সেই মহুয়া বৃহস্পতিবার বিয়ে করলেন বার্লিনের রাজপ্রাসাদে। পরলেন বলিউডের অভিনেত্রীদের প্রিয় ব্র্যান্ড ‘র ম্যাঙ্গো’র শাড়ি। প্রশ্ন উঠেছে, হাতব্যাগের জন্য যদি দেড় লক্ষের বেশি টাকা খরচ করে থাকেন, তবে বিয়ের শাড়িতে না জানি কত খরচ করেছেন মহুয়া! উত্তর দিয়েছে খোদ মহুয়ার জন্য শাড়ি বানানো সংস্থাই।
বাংলার সাংসদ মহুয়া আর পাঁচটি বাঙালি মেয়ের মতোই বিয়েতে বেনারসি শাড়ি পরেছিলেন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
শুক্রবার মহুয়ার বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই ‘র ম্যাঙ্গো’ তাদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে মহুয়ার বিয়ের তিনটি ছবি পোস্ট করেছিল। সেই সঙ্গে দিয়েছিল শাড়ির বিবরণ। দেখা গেল, বাংলার সাংসদ মহুয়া আর পাঁচজন বাঙালি মেয়ের মতোই বিয়েতে বেনারসি শাড়ি পরেছিলেন।
বাঙালি বিয়েতে অনেক কনেই মা-ঠাকুরমা-দিদিমাদের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সোনার গয়না আর বেনারসি শাড়ি পরে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। বার্লিনের রাজপ্রাসাদের চত্বরে মহুয়াকে দেখা গেল স্বামী প্রাক্তন সাংসদ পিনাকী মিশ্রের পাশে সিঁথিতে অল্প সিঁদুর, কপালে সোনার টিকলি, পুরনো ছাঁদের বাঙালি নকশার জড়োয়ার গয়না আর দুধে আলতা রঙের বেনারসি শাড়িতে। ‘র ম্যাঙ্গো’ জানিয়েছে শাড়িটির দাম ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৮০০ টাকা। কেন এত দাম?
মহুয়ার বেনারসিটি কড়ওয়া পদ্ধতিতে জাল নকশায় বোনা। ওই ধরনের শাড়ি পরে এ বছর কান চলচ্চিত্রোৎসবে গিয়েছিলেন ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন। পরেছেন নীতা অম্বানীও। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
সংস্থাটি জানাচ্ছে, ওই বেনারসিটি তাদের ব্র্যান্ডের সবচেয়ে সূক্ষ্ম কাজের বেনারসিগুলির একটি। শাড়িটির নাম ‘পরিগুল ব্রোকেড বেনারসি’। এতে রয়েছে কড়ওয়া পদ্ধতিতে হাতে বোনা নকশা। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি বুটি আলাদা আলাদা ভাবে বোনেন শিল্পীরা। বুনতে সময় এবং পরিশ্রম লাগে বেশি। পদ্ধতিটিও কঠিন। তাই কাজের নাম ‘কড়ওয়া’। হিন্দিতে যার অর্থ ‘কঠিন’। মহুয়ার বেনারসিটি ওই কড়ওয়া পদ্ধতিতে জাল নকশায় বোনা। ওই ধরনের কাজের শাড়ি পরে এ বছর কান চলচ্চিত্রোৎসবে গিয়েছিলেন ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন। কড়ওয়া কাজের জাল নকশার বেনারসি পরতে দেখা গিয়েছে মুকেশ অম্বানীর স্ত্রী নীতা অম্বানীকেও। তবে মহুয়ার এটি বিয়ের শাড়ি। বিয়ের দিনের সাজের জন্য মেয়েরা বাড়তি খরচ করেনই। ফ্যাশন দুনিয়ার মানুষজন বলছেন, সাংসদ যদি দেড় লক্ষের হাতব্যাগ নেন, তবে বলতে হবে বিয়ের দিনের শাড়ির জন্য তেমন খরচই করেননি!