শরবত যা দিয়ে তৈরি হয়, নামেও তার উল্লেখ থাকে সাধারণত। লেবু দিয়ে তৈরি শরবত— লেবুর শরবত। তেমনি বেল দিয়ে তৈরি শরবতের নাম বেলের পানা, কাঁচা আম পুড়িয়ে বানানো হলে নাম হয় আমপোড়া শরবত। দই আর আম দিয়ে তৈরি হলে আমের লস্যি। কিন্তু এ শরবত সেই বাঁধা গতের বান্দা নয়। এর নাম শিকঞ্জি। শিকঞ্জি কোনও খাওয়ার বস্তু নয়। এই শব্দ এসেছে পারস্য শব্দ শিকঞ্জা থেকে। যার আক্ষরিক অর্থ হল ফাঁদ! রান্নাঘরে এই ফাঁদ অবশ্য পাতা হয় লেবুর জন্য!
ভাঁজ করা কাঠের সেই ছোট্ট যন্ত্র অল্পবিস্তর সব বাড়িতেই মেলে। লেবুকে আধাআধি কেটে তার ভিতরে রেখে চাপ দিলেই সহজে বেরিয়ে আসে রস। সেই যন্ত্রই শিকঞ্জা। শরবতের নামকরণ সেই যন্ত্রকে সম্মান দিয়েই। অবশ্য শিকঞ্জির নামের মানে বিশ্লেষণ করলে এই শরবতের কাহিনি কিছুই বলা হয় না। শিকঞ্জির ইতিহাস জুড়ে আছে মহাভারতের সঙ্গে।
মহাভারতে যুদ্ধ, রাজনীতি, সম্পর্কের জটিল হিসাব যেমন আছে, তেমনই রয়েছে রসনাতৃপ্তির গল্পও। সেই এক গল্পে অবতারণা রাজা নালের। যাকে পুরাণে ঈশ্বরের আশীর্বাদধন্য রাঁধুনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাল নানা ধরনের রন্ধনপদ্ধতির আবিষ্কারক, যার মধ্যে অন্যতম হল নালপাক। এই পদ্ধতিতে রসালো আখ লেবুর রসে ভিজিয়ে চড়া রোদে রেখে দেওয়া হত ৫-৬ দিন। তার পরে তার থেকে রস বার করা হত। ভিনিগার বানানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেকটা মিল রয়েছে এর। অনেকে মনে করেন শিকঞ্জির আদি রূপ এটিই। তবে শিকঞ্জিতে লেবু আর মিষ্টি রস ছাড়াও অনেক কিছু পড়ে।
আরও পড়ুন:
শিকঞ্জি পারস্যে খাওয়া হত ঔষধি পানীয় হিসাবে। তার নাম ছিল শেকঞ্জাবিন। এক হাজার খ্রিস্টাব্দে পারস্যের এক চিকিৎসক ইবন সিনার লেখা পাণ্ডুলিপিতে এই শেকঞ্জাবিনের ঔষধি গুণের কথা বলা আছে। পারস্যের শেকঞ্জাবিনেও ভিনিগার এবং মধুর ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তী কালে ইউনানি চিকিৎসা পদ্ধতিতে এই পানীয়ের ঔষধি গুণ বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের মশলা এবং ভেষজও মেশানো হত। এক এক ধরনের রোগের জন্য তৈরি হত এক এক ধরনের শিকঞ্জি। তাতে শরবতের স্বাদ যেমন বাড়ত, তেমনই খাওয়ার পরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তিও বেড়ে যেত।
ওই পদ্ধতিই হাজার বছর ধরে নানা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়ে পৌঁছেছে আজকের শিকঞ্জিতে। যা এখনও হজমে সহায়ক পানীয় হিসাবে খাওয়া হয়। শিকঞ্জি বাড়িতেও বানানো যেতে পারে। জেনে নিন কী ভাবে বানাবেন।
উপকরণ: আধ কাপ লেবুর রস
৪ কাপ জল
৫ টেবিল চামচ চিনি
৩/৪ চা চামচ বিট নুন
১/২ চা চামচ ভাজা জিরেগুঁড়ো
১ চা চামচ আদার রস
১/৪ চা চামচ নুন
১/৪ চা চামচ আমচুর
১/৪ চা চামচ গোলমরিচ
পুদিনাপাতা সাজিয়ে নিন
বরফের টুকরো
প্রণালী: বরফ আর পুদিনাপাতা ছাড়া সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে জলে গুলে নিন। এ বার পুদিনা হালকা থেঁতো করে উপরে ছড়িয়ে দিন। তৈরি শিকঞ্জি। বরফ দিয়ে পরিবেশন করুন।