আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ বেড়েছে। ঘরে ঘরেই জ্বরে পড়ছে শিশুরা। সঙ্গে সর্দি ও শুকনো কাশি সারতে চাইছে না। দিল্লির চিকিৎসকেরা সম্প্রতি তাঁদের একটি সমীক্ষায় জানিয়েছেন, বিরল ধরনের এক সংক্রমণ ঘটছে দেশের নানা জায়গায়। এতে যে শুধু শরীরের তাপমাত্রা বাড়ছে তা-ই নয়, ব্যথা হচ্ছ পায়ের পেশিতেও। গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণাও ভোগাচ্ছে। এই ধরনের সংক্রমণে তিন থেকে সাত বছর বয়সি শিশুরাই বেশি আক্রান্ত।
দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রেও দাবি করা হয়েছে, নানা ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ মাথাচাড় দিয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের ভাইরাল নিউমোনিয়া বেশি হচ্ছে। এতে জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। তবে গাঁটে গাঁটে ব্যথার কারণ কী, তা এখনও ধরা যায়নি। জ্বর, হাত-পায়ে ব্যথা ও ডায়েরিয়ার লক্ষণ নিয়ে অনেক শিশুই আসছে চিকিৎসকের কাছে।
আরও পড়ুন:
চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে হাসপাতালগুলিতে ভিড় বাড়ছে অন্য ভাইরাল জ্বরে আক্রান্তদের। সব চেয়ে বেশি ভিড় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর। অনেক সময়ে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের কারণেও গাঁটে গাঁটে ব্যথা হয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সাধারণ জ্বরের অ্যাডিনোভাইরাস বা রাইনোভাইরাসের সঙ্গে মশাবাহিত চিকুনগুনিয়ারও সংক্রমণ ঘটছে।
এই বিষয়ে চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মত, বাংলায় ‘আরবোভাইরাস’ অর্থাৎ মশাবাহিত ভাইরাসের মধ্যে তিনটির প্রকোপ বেশি— ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া আর জাপানি এনসেফালাইটিস (জেই)। চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ মাঝে কমেছিল। কিন্তু এখন ডেঙ্গির মতোই ছড়াচ্ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে ১০০, ১০১ ডিগ্রি জ্বর হয়। চিকুনগুনিয়ায় জ্বর থাকে বেশি। সঙ্গে গাঁটে ব্যথা। কিছু ক্ষেত্রে আবার গায়ে ও মুখে র্যাশও বেরোয়। চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হল, জ্বর হওয়ার সাত দিন আগে রক্ত পরীক্ষা করলে কিছুই ধরা পড়ে না। প্রাণঘাতী না হলেও এ ক্ষেত্রে ভুগতে হয় অনেক বেশি।
শরীরে ব্যথার সঙ্গে জ্বর দেখা দিলেই ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক। জ্বরের পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে সারা শরীর নাড়াতে গেলেও ব্যথা হয়। আইজিএম ও আরটিপিসিআর পরীক্ষা করালে কোন ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে, তা ধরা যাবে। সঙ্গে টিসি-ডিসি হিমোগ্লোবিন টেস্ট করিয়ে নেওয়াও জরুরি। এতে বোঝা যাবে, জ্বরের পাশাপাশি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমছে কি না। তা হলে সেই মতো চিকিৎসা করা হবে।