ডিটক্স, এই একটা শব্দের ভরসায় থাকেন এখন অনেকেই। ক’দিন খুব ভারী, তেলমশলাযুক্ত খাওয়াদাওয়া হল, তার পরে ক’দিন চলল ডিটক্স ওয়াটার, ডিটক্স ডায়েট। শরীরে কোনও সমস্যা দেখা দিলেও ডিটক্স সাপ্লিমেন্টসের ভরসায় থাকেন অনেকে। এ ছাড়াও এখন ডিটক্স জুস, ডিটক্স টি-র মতো নানা বাজারজাত পণ্য রয়েছে হাতের কাছে। কিন্তু এই ডিটক্স প্রডাক্টে কি আদৌ কোনও লাভ হয়?
ডিটক্স শব্দ চিকিৎসার পরিভাষা
ডিটক্স শব্দটা কেন এসেছে, কী ভাবে তা শরীর থেকে বেরোয়, বিষয়টা বুঝতে হবে। ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট প্রিয়াঙ্গী লাহিড়ি বললেন, “কিডনির সমস্যা হলে বা হেভি মেটাল পয়জ়নিং বা যে কোনও বিষক্রিয়া হলে ডিটক্সিফিকেশন করা হয়। অ্যালকোহল বা কোনও নেশা ছাড়ানোর প্রক্রিয়াও আসলে ডিটক্সিফিকেশন। এটা একটা মেডিক্যাল টার্ম, তা এ ভাবে ডিটক্স ওয়াটার খেয়ে হয় না। যেমন ধরুন কিডনির সমস্যা হলে ক্রিয়েটিনিন বাড়তে থাকলে টক্সিন তৈরি হয় শরীরে, তখন সেটা ডায়ালিসিসের মাধ্যমে বার করতে হয়। হেভি মেটাল পয়জ়নিং হলে ইমার্জেন্সিতে গিয়ে চিকিৎসকের উপস্থিতিতে ডিটক্সিফিকেশন করা হয়। এগুলো সম্পূর্ণ চিকিৎসার পরিভাষা। সুস্থ মানুষের আলাদা করে কোনও প্রডাক্ট খেয়ে ডিটক্স করার প্রয়োজন নেই। শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াতেই এই শুদ্ধিকরণ হয়ে যায়।” অনেকে ওজন কমানোর জন্য, মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডিটক্স ওয়াটার বা সাপ্লিমেন্টসের দিকে ঝুঁকছেন। সেটা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডিটক্স পণ্যে ভরসা নয়
প্রিয়াঙ্গী বললেন, “আসলে ডিটক্স এই শব্দটা ব্যবহার করে একটা বিশাল বাজার তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেগুলো কোনও দরকার নেই। শরীর নিজেই ডিটক্স করতে জানে। তার জন্য লিভার, কিডনি চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করে চলেছে। সেটা যদি না হত, আমরা বেঁচে থাকতেই পারতাম না। টক্সিন বার করে শরীরের ঘাম, মল-মূত্রের মতো শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। আলাদা করে বাইরে থেকে কোনও জুস বা সাপ্লিমেন্টস খেয়ে কিন্তু ডিটক্স সম্ভব নয়।”
প্রত্যেক দিন বাইরের প্যাকেটজাত নানা পণ্য এখন বাচ্চা থেকে বয়স্করা খান। তার মধ্যে অ্যাডিটিভিস, প্রিজ়ারভেটিভস থাকে প্রচুর পরিমাণে। এই সব ক্ষেত্রে বিষাক্ত ফরেন কেমিক্যালস শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াতেই শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ডিটক্স করতে চাইলে এই ধরনের খাবার খাওয়া আগে বন্ধ করতে হবে। এক প্যাকেট চিপস বা ইনস্ট্যান্ট নুডলস খেয়ে তার পরে এক গ্লাস ডিটক্স ওয়াটার খেয়ে নিলে সেই জলের জন্য বিষের পরিমাণ কমে যাবে, এটা ভাবা ভুল।
ডিটক্স ওয়াটারের বদলেফল খান
অনেকেই বাড়িতে বানিয়ে ডিটক্স ওয়াটার খান। একটু শসার টুকরো, কয়েকটা আদা, লেবুর টুকরো ফেলে সারা রাত রেখে সকালে উঠে খেয়ে নেন। প্রিয়াঙ্গীর কথায়, “চারটে ফলের টুকরো জলে ফেলে রাখলে ওর কতটা পুষ্টি জলে আসে! বরং সেগুলো চিবিয়ে খেলে অনেক উপকার। জল না খেয়ে আপনার কিছু নরম ঠান্ডা পানীয় খেতে ইচ্ছে করছে, তখন এ রকম ফল দিয়ে তৈরি ইনফিউজ়ড ওয়াটার খেলেন, সেটা এক রকম। কিন্তু উপকার হবে ভেবে ফল ভেজানো জলে খেয়ে তেমন লাভ নেই। ফলের জুসের চেয়ে গোটা ফল খাওয়া জরুরি, তাতে ফাইবারটা শরীরে যায়। ফলের সম্পূর্ণ ভিটামিনস, মিনারেলস শরীর পায়।”
সুস্থ থাকতে আসলে যা দরকার
ডিটক্স করার জন্য যেটা করতে হবে, তা হল নিয়মিত পরিমাণ মতো জল খেতে হবে। এতে ফ্লুয়িড ব্যালান্স বজায় থাকবে। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ জলে দ্রবীভূত হয়ে বেরিয়ে যাবে। পুষ্টিকর ব্যালান্সড ডায়েট দরকার। এতে এনজ়াইম, ভিটামিনস টক্সিনের সঙ্গে লড়াই করবে। ঠিক মতো বিশ্রাম নিতে হবে। এগুলো মেনে চললে উপকার পাবেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)