মানুষের গড় আয়ু যত বাড়ছে, ততই চারপাশে বাড়ছে এমন মানুষের সংখ্যা, যাঁদের স্মৃতি দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা স্পষ্টই জানিয়ে দেন, এর নিরাময়ের কোনও ওষুধ এখনও তৈরি হয়নি। তা হলে উপায়? অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগের লক্ষণ ধরাই যেখানে প্রায় দুঃসাধ্য, সেখানে মাত্র তিন মিনিট সময়ে রোগের কারণ ও উপসর্গ বলে দিতে পারবে বিশেষ এক ধরনের পরীক্ষা। এমনটাই দাবি করেছেন আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকেরা।
‘ফাস্টবল টেস্ট’ খুব দ্রুত অ্যালঝাইমার্সের লক্ষণ ধরতে পারবে বলে দাবি গবেষকদের। ‘ব্রেন কমিউনিকেশন’ জার্নালে এই গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ৫৩ জন রোগীর উপর পরীক্ষাটি করা হয়েছে। গবেষকেরা দাবি করেছেন, ‘ফাস্টবল টেস্ট' হল এক ধরনের ‘ইলেক্ট্রোএনসেফ্যালোগ্রাফি টেস্ট’ (ইইজি)। সহজ করে বললেন কম্পিউটারে এক ধরনের মেমরি টেস্ট করা হয়, যেখানে অ্যালঝাইমার্স রোগীর মস্তিষ্কে ঘটে চলা স্নায়বিক বদলগুলি ধরা পড়ে। স্মৃতির পাতা কতটা ধূসর হয়েছে, তা-ও ধরা যাবে ওই পরীক্ষায়।
বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, অ্যালঝাইমার্সের মতো অসুখে শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বাভাবিক হার অনেক বেড়ে যায়। এই রোগে মস্তিষ্কে যে হেতু অক্সিজেনের প্রবাহ কমতে থাকে, তাই শ্বাসের হার আর পাঁচজন সুস্থ ব্যক্তির থেকে আলাদাই হয়। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের অন্দরে স্নায়ুর গঠনে অনেক বদল আসে। পরীক্ষাটি করার সময়ে রোগীর মস্তিষ্কের সঙ্গে সেন্সর সংযুক্ত করে দেওয়া হবে। তার পর খুব দ্রুত গতিতে রোগীকে নানা রকম ছবি দেখানো হবে, লেখা পড়ানো হবে। তার পর সেই সব ছবির দৃশ্য মনে করতে বলা হবে। দ্রুত গতিতে ছবি দেখানোর সময়ে রোগীর মস্তিষ্কের ভিতরে কী কী বদল হতে থাকবে, কেমন ভাবে প্রতিক্রিয়া দেবেন রোগী, সে সব বিশ্লেষণ করে বলা যাবে যে শুধুমাত্র ডিমেনশিয়া, সাময়িক স্মৃতিনাশ বা রোগ কতটা গভীরে, বাসা বাঁধছে কি না অ্যালঝাইমার্সের মতো ব্যাধি।
আরও পড়ুন:
অ্যালঝাইমার্স রোগের নানা স্তর রয়েছে। দীর্ঘকালীন অবসাদ, বাইপোলার ডিজঅর্ডার থেকে অ্যালঝাইমার্স হতে পারে। অত্যধিক মানসিক চাপের কারণে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গেলে তা মস্তিষ্কের কোষগুলির উপর প্রভাব ফেলে। ‘কগনিটিভ ডিসফাংশন’ হতে পারে। তখন ভুলে যাওয়ার সমস্যা বাড়ে। অ্যালঝাইমার্সের রোগীদের যে কেবল স্মৃতিনাশ হয় তা নয়, যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে কোনও কিছুর পরিকল্পনা করা, যুক্তি দিয়ে বিচার করার ক্ষমতা, সমাজে মেলামেশা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তাঁরা। কথাবার্তাও অসংলগ্ন হয়ে যায়। নিজের মনের ভাব ভাষায় ব্যক্ত করতে পারেন না। এই সব লক্ষণ দেখে রোগটি যে অ্যালঝাইমার্স না অন্য কিছু, তা বোঝার উপায় থাকে না অনেক সময়েই। কারণ, ডিমেনশিয়ার রোগীরাও এমন আচরণ করেন অনেক সময়ে। তাই সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয় করতেই নতুন এই পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে।