Advertisement
E-Paper

মধুমেহ সামাল দেবে বিশেষ যন্ত্র

কন্টিনিউয়াস গ্লুকোজ় মনিটরিং (সিজিএম) ডিভাইস এখন খুবই জনপ্রিয়। মধুমেহজনিত বিপদ থেকে কী ভাবে বাঁচায় এই প্যাচ?

চিরশ্রী মজুমদার 

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:৫০
Share
Save

গত বছর দীপাবলির মরসুমে ক্যাটরিনা কাইফের ভাইরাল হওয়া ছবিতে সুন্দর সাজপোশাকের চেয়েও বেশি নজর কেড়েছিল তাঁর কনুইয়ের ঠিক উপরে কালো রঙের একটি প্যাচ। এটি আসলে গ্লুকোজ় মনিটরিং ডিভাইস। এ ধরনের প্যাচ, চিকিৎসাবিজ্ঞানে যার নাম কন্টিনিউয়াস গ্লুকোজ় মনিটরিং (সিজিএম) মধুমেহ রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। সাধারণত ডায়াবেটিক রোগীরা দিনের বিভিন্ন সময়ে রক্তের শর্করার মাত্রার ওঠানামা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। এই আধুনিক যন্ত্রটি এই সমস্যায় কী ভাবে কাজে দেয়, আলোচনা করলেন জেনারেল ফিজ়িশিয়ান সুবীর কুমার মণ্ডল।

শর্করা নিয়ন্ত্রণের নতুন উপায়

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য ফাস্টিং, পিপি সুগারের হিসেব রাখা, এইচবিএওয়ানসি পরীক্ষা ইত্যাদি ধীরে ধীরে পুরনো পদ্ধতি হয়ে যাচ্ছে। ডা. মণ্ডল বললেন, “হয়তো সুগারের পরীক্ষা হবে বলে ভয়ে আগের দিন রোগী কম খেয়েছেন, তখন কিন্তু তাঁর ফাস্টিং সুগারের মাপ ভাল আসবে। এ ভাবে আসল সমস্যা ধরা পড়বে না। এই কারণে শর্করার মাত্রার তিন মাসের গড় ধরে এইচবিএওয়ানসি পরীক্ষা করা হত। কিন্তু এখন সেই পরীক্ষাকেও যথেষ্ট মনে করা হচ্ছে না। কারণ বিভিন্ন কারণে এর মানেও তারতম্য হয়। হয়তো, দেখা গেল রোগীর এইচবিএওয়ানসি-র মাপ বেশির দিকে, কিন্তু রাত তিনটের সময়ে তাঁর রক্তে শর্করার মাত্রা নেমে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তাঁর শর্করার ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে বিপদ হতে পারত। এই কারণেই এখন শর্করার পরিমাপ দেখা হয় ‘টাইম ইন রেঞ্জ’-কে মাথায় রেখে। লক্ষ রাখা হয় সারা দিনের মধ্যে শর্করার মাত্রাকোন সীমার মধ্যে থাকে। সেটা পরিমাপের জন্য এসেছে সিজিএম।” শরীরে এই যন্ত্রটি লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাতে যথাযথ শর্করার মাত্রা দেখে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এটি একটি প্যাচ যার মধ্যে মাইক্রোফিলামেন্ট থাকে। সাধারণত হাতের ঊর্ধ্বাংশে মেদের মধ্যে বসানো থাকে। ১৪ দিন লাগানো থাকে। উপরে আচ্ছাদন লাগিয়ে স্নানওকরতে পারেন।

উপকারিতা কতখানি

সাধারণত এই প্যাচ লাগানোর পরে মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে হয়। প্যাচের চার ইঞ্চি দূরত্বে মোবাইল আনলেই অ্যাপ সে সময়ের রক্তে শর্করার পরিমাপ দেখিয়ে দেয়। এ ভাবে সারা দিনে বিভিন্ন সময়ে শর্করার মাত্রার তালিকা তৈরি করা হয়। ১৪ দিনের সেই চার্ট দেখে চিকিৎসক বোঝেন কখন শর্করার মাত্রা বাড়ছে, কখন কমছে। সেই বুঝে ওষুধ দেন, ডোজ় স্থির করেন এবং ওষুধের মধ্যে প্রয়োজনীয় রদবদল করেন। ফলে সফল ভাবে মধুমেহকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। হাইপারগ্লাইসেমিয়া (শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি), হাইপোগ্লাইসেমিয়া-র (শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম) ভয় এড়ানো যায়। এতে মধুমেহ থেকে হৃদ্‌যন্ত্র, বৃক্ক বা মস্তিষ্কের ক্ষতির বিপদও অনেক কমে। ওষুধের সংখ্যাও কমে। আবার কোন খাবার খেলে সত্যিই শর্করা বাড়ছে, আদৌ প্রিয় খাবার ছাড়তে হবে কি না— সেটাও রোগী জানতে পারেন। সুচ ফোটানোর দরকারই পড়ে না।

টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিসের (ইনসুলিন-নির্ভর) ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রার ওঠানামা নিয়ে চিন্তা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে ১৪ দিন করে বছরে অন্তত তিন মাস এই প্যাচ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।

ব্রিটল ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার ওঠাপড়া বেশি দেখা যায়। হয়তো দেখা গিয়েছে আগের দিন যে খাবার খেয়ে রোগীর শর্করা ৫৮ ছিল, পরের দিন একই খাবার খেয়ে শর্করা ৩০০ হয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সিজিএম অপরিহার্য।

ডা. মণ্ডল জানালেন, এই ডিভাইসের সঙ্গে সেন্সরকে ব্যবহার করে ‘কন্টিনিউয়াস ইনসুলিন ইনফিউশন পাম্প’ বাজারে চলে এসেছে। এটি ওই প্যাচের সঙ্গেজোড়া লাগানো থাকে ও যৌথ ভাবে কাজ করে। যে মুহূর্তে রোগী কিছু খেলেন, শর্করা বাড়ল, ডিভাইস তা ধরে ফেলবে। তখনই প্রয়োজনমতো ইনসুলিন রোগীর দেহে চলে যাবে। যান্ত্রিক বিভ্রাট না হলে এই ডিভাইস-এর ফলে রোগীর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হবে না। ইনসুলিন মাপমতো চলবে, অপচয় হবে না। বার্ষিক খরচ কমবে। এখন খুব কম রোগীই এটি ব্যবহার করছেন। তবে, গোটা প্রক্রিয়াটিই অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক। আগামী দিনে এর প্রচলন যত বাড়বে, ততই এর দাম কমবে বলে আশা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

new technologies Diabetes

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}