হৃৎপিণ্ডের অবস্থা গুরুতর। সম্প্রতি হার্টের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার হয়েছে প্রবীণ অভিনেতা প্রেম চোপড়ার। জানা গিয়েছে, ‘অ্যায়োর্টিক স্টেনোসিস’ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। তবে হার্টের একটি ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করার পরে ৯০ বছর বয়স্ক অভিনেতার অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল।
কী এই ‘অ্যায়োর্টিক স্টেনোসিস’?
হার্টের এমন এক রোগ, যা হলে হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলির মধ্যে দিয়ে আর রক্ত চলাচল করতে পারে না। ফলে হার্টের ‘পাম্প’ করার ক্ষমতা নষ্ট হয়। হার্টের দু’টি অলিন্দ ও দু’টি নিলয় রয়েছে। যারা রক্তপ্রবাহে ভূমিকা নেয়। অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে এবং নিলয় সেই রক্ত সারা শরীরে পাঠায়। রক্ত গ্রহণ করা ও পাঠানোর কাজটি হয় ধমনী ও শিরার মাধ্যমে। হার্টের এমন অসংখ্য ধমনী ও শিরা রয়েছে। হার্টের বাম নিলয় ও মহাধমনীর পথে রয়েছে একমুখী একটি কপাটিকা, যাকে বলে অ্যায়োর্টিক ভাল্ভ। রক্ত চলাচলের সময়ে এই দরজা খুলে যায় এবং রক্ত প্রবাহকে সচল রাখে।
আরও পড়ুন:
এরও একটি ছন্দ রয়েছে। হার্ট যখন প্রসারিত হয়, তখন অ্যায়োর্টিক ভাল্ভ বন্ধ হয়ে যায় ও সঙ্কোচনের সময়ে সেটি খুলে যায়। এই সঙ্কোচন-প্রসারণের মাধ্যমেই রক্তপ্রবাহ সঠিক পথে ও গতিতে চালিত হয়। এ বার বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অথবা যদি ধমনীপথে ক্যালশিয়ামের ‘প্লাক’ জমে যায়, তা হলে ভাল্ভের এই সঙ্কোচন-প্রসারণের প্রক্রিয়াটি বাধা পায়। কপাটিকার পথ সরু হতে থাকে, ফলে এর মধ্যে দিয়ে আর রক্ত চলাচল করতে পারে না। যখন এই সমস্যা হয়, তখন হার্টে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে বিপদ ঘনায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ওই অবস্থাটিকে বলা হয় ‘অ্যায়োর্টিক স্টেনোসিস’। প্রেম চোপড়া এই রোগেই আক্রান্ত হয়েছেন।
কী চিকিৎসা হয়েছে?
বর্ষীয়ান অভিনেতার যে চিকিৎসাটি করা হয়েছে, তার নাম ‘ট্রান্সক্যাথিটার অ্যায়োর্টিক ভাল্ভ রিপ্লেসমেন্ট’ যাকে ‘ট্রান্সক্যাথিটার অ্যায়োর্টিক ভাল্ভ ইমপ্ল্যান্টেশন’ বা টাভি বলা হয়। এক সময়ে এই রোগ হলে পাঁজরের হাড় কেটে জটিল অস্ত্রোপচার করা হত, যা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু এখন তা করা হয় না। টাভি-র ক্ষেত্রে খুব ছোট ছিদ্র (ইনশিসন) করে সেখান থেকেই ভাল্ভের অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের এই পদ্ধতিটিকে বলে ‘মিনিমাল ইনভেসিভ সার্জারি’। যেহেতু পাঁজরের হাড় কাটার দরকার পড়ে না, তাই এই অস্ত্রোপচার করলে রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। খুব বেশি দিন হাসপাতালে থাকার দরকার পড়ে না। অস্ত্রোপচার-পরবর্তী জটিলতাও খুব কম হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে বা যাঁদের নানা রকম অসুখবিসুখ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ধরনের অস্ত্রোপচারই এখন বেশি হচ্ছে।