সুগার এক বার ধরে যাওয়া মানে আজীবন ওষুধ খেয়ে যেতে হবে, এমন ধারণাই রয়েছে। আর শুধু কী ওষুধ খাওয়া, পছন্দের সব খাবারও একে একে ছেঁটে ফেলতে হবে। দেশে ডায়াবিটিসের রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, এমনই জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) পরিসংখ্যান। ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষার ফল ছিল আরও উদ্বেগজনক। দেখা গিয়েছিল, ভারতেই ডায়াবিটিস সংক্রান্ত কারণে শিশুর মৃত্যু হয়েছে সবচেয়ে বেশি! ডায়াবিটিসকে নির্মূল করার উপায় সে ভাবে আয়ত্ত হয়নি, রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তবে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা বলছে, ডায়াবিটিস যদি নির্মূল করতে হয়, তা হলে এক রকম অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি আছে। এই ধরনের অস্ত্রোপচার এ দেশেও হয়।
দেশের ন্যাশনাল ইনস্টটিউট অফ হেল্থ এবং আমেরিকান সোসাইটি ফর মেটাবলিক অ্যান্ড বেরিয়াট্রিক সার্জারির গবেষকেরা জানাচ্ছেন, মেটাবলিক সার্জারি আশার আলো দেখাচ্ছে। এটি একধরনের বেরিয়াট্রিক সার্জারি যা ওজন কমায় এবং ডায়াবিটিসও নির্মূল করতে পারে। মেটাবলিক সার্জারি নিয়ে হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলেরও একটি গবেষণা রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা জানিয়েছেন, ‘গ্যাস্ট্রিক বাইপাস’ নামক এক ধরনের সার্জারি করলে টাইপ ২ ডায়াবিটিস থেকে অব্যাহতি পাওয়া যেতে পারে। গ্যাস্ট্রিক বাইপাস হল ওজন কমানোর এক ধরনের অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি, যা সুগারও নির্মূল করতে পারে।
কী এই মেটাবলিক সার্জারি?
উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাওয়া, ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া সব মিলিয়ে যে রোগের জন্ম দিচ্ছে তা-ই হল মেটাবলিক সিনড্রোম। এর জন্য যেমন মেদ বাড়ে, তেমনই রক্তে শর্করার মাত্রাও বেড়ে যায়। ঝুঁকি বাড়ে হৃদ্রোগের। এই সব সমস্যাকে একসঙ্গে বশে আনতে এখন বেরিয়াট্রিক সার্জারির সাহায্য নিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এই বেরিয়াট্রিকেরই একটি ধরন মেটাবলিক সার্জারি, যা বিভিন্ন পদ্ধতিতে করা যায়। রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝে চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করা হয়। তেমনই একটি পদ্ধতি হল গ্যাস্ট্রিক বাইপাস, যা ওজন বৃদ্ধির রাস্তাটাই বন্ধ করে দেয়, পাশাপাশি ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
আরও পড়ুন:
গ্যাস্ট্রিক বাইপাসের জন্য পাকস্থলীর একটা বড় অংশ কেটে ফেলা হয়। পাকস্থলী অনেকটা থলির মতো দেখতে, এর বড় অংশ যদি কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তখন বাকিটা একফালি পাইপের মতো দেখায়। এই সরু অংশে স্বাভাবিক ভাবে কম খাবার ঢোকে। এই ধরনের সার্জারি করলে খাওয়ার পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমে যায়। একে বলে ল্যাপারোস্কোপিক স্লিভ গ্যাস্ট্রেকটমি। আরও একটি ভাবে এই অস্ত্রোপচার করা হয়, যাতে পাকস্থলীর আকার কমিয়ে দেওয়া হয়। পাকস্থলীকে ছোট করে তার সঙ্গে ক্ষুদ্রান্তের একটা ছোট অংশ বাইপাস করে জুড়ে দেওয়া হয়। কম খাবার পাকস্থলীতে ঢোকে এবং অতিরিক্ত টক্সিন জমতে পারে না। এই পদ্ধতিতেও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রিত হয়। এতে ডায়াবিটিসের সমস্যা নির্মূল হতে পারে বলেও দাবি।