হাঁটলে ওজন কমবে, এমন পরামর্শ চিকিৎসকেরাই দেন। কিন্তু সকালে উঠে বা বিকেলে হেঁটে দেখেছেন লাভ তেমন ভাবে হয় না। কেনাকাটা, বাজার-দোকান এই সময়গুলোতে গাড়িতে না উঠে একটু হাঁটলেই কি উপকার মিলবে? না কি ঘণ্টার পর ঘণ্টা শরীরকে খাটিয়ে না হাঁটলে কোনও উপকারই নেই? কখন হাঁটবেন আর কত ক্ষণ ধরেই বা হাঁটলে উপকার হবে, তার নিয়ম আছে। হঠাৎ করেই একদিন সকালে উঠে হাঁটতে শুরু করলেন আর ভাবলেন সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ওজন কমে যাবে, তা কিন্তু হবে না। খুচরো হাঁটায় শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সচল থাকবে। তবে এতে খুব একটা মেদ ঝরে না। মেদ ঝরাতে গেলে নিয়ম ও সঠিক পদ্ধতি মেনে হাঁটতে হবে। কেমন ভাবে হাঁটলে ওজন কমবে, তার কিছু পদ্ধতি আছে।
পাঁচ পদ্ধতিতে হাঁটলে দ্রুত মেদ গলবে
পাওয়ার ওয়াকিং
এটি দ্রুত গতিতে হাঁটা। দৌড়োনো নয় কিন্তু। তবে গতি বাড়িয়ে হনহন করে হাঁটতে হবে। হাঁটার সময়ে দুই হাত জোরে জোরে দোলাতে হবে। দ্রুত শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার হলে তাকে ‘পাওয়ার ওয়াকিং’ বলা হবে। এমন ভাবে হাঁটলে ক্যালোরি দ্রুত ঝরবে, খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমবে।
কত ক্ষণ হাঁটবেন— সপ্তাহে ৫-৬ দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটতে হবে।
কাদের জন্য ভাল— অতিরিক্ত মেদ, স্থূলত্ব থাকলে এমন ভাবে হাঁটলে বেশি উপকার হবে। হার্টের অসুখ থাকলে বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অথবা হাঁটুতে বাতের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কী ভাবে হাঁটলে ওজন কমবে? ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
ইন্টারভাল ওয়াকিং
প্রথমে ৫ মিনিট স্বাভাবিক গতিতে হাঁটা (ওয়ার্ম-আপ)। এরপর ৫ মিনিটের জন্য দ্রুত গতিতে হাঁটতে হবে। তার পর ২ মিনিট আবার স্বাভাবিক গতিতে হাঁটতে হবে। এই পদ্ধতি ৭-৮ বার করে করুন। এই ধরনের হাঁটায় দ্রুত ও শ্লথ গতির মধ্যে সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা করা হয়। এতে সারা শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়, পেশির সক্রিয়তা বাড়ে, ওজনও কমে।
কত ক্ষণ হাঁটবেন— সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ২০ মিনিট করে হাঁটতে হবে।
কাদের জন্য ভাল— ওজন কমাতে চাইলে, পেশির জোর বৃদ্ধিতে ইন্টারভাল ওয়াকিং কার্যকরী হবে। বয়স্কেরা, যাঁরা বেশি জোরে হাঁটতে পারেন না, তাঁরা এই ভাবে হাঁটলে উপকার পাবেন। তবে হার্টে স্টেন্ট বসেছে এমন ব্যক্তিরা বা অন্তঃসত্ত্বারা চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে হাঁটবেন না।
আরও পড়ুন:
ফ্যাট বার্নিং জ়োন ওয়াকিং
খুব দ্রুত গতিতে হাঁটা। এমন ভাবে হাঁটতে হবে যাতে হৃৎস্পন্দনের হার বাড়ে। এমন হাঁটার উদ্দেশ্য হল, সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন যাতে দ্রুত গতিতে হয়। শরীর ওয়ার্ম আপ হয় এবং তাড়াতাড়ি চর্বি ঝরে যায়। টানা হাঁটতে কষ্ট হলে মাঝে বিরতি নিতে পারেন।
কত ক্ষণ হাঁটবেন— সপ্তাহে চার দিন ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা হাঁটলে ভাল ফল হবে।
কাদের জন্য ভাল— ওজন খুব বেশি হলে এমন ভাবে হাঁটা কার্যকরী হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে হাঁটতে গিয়ে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না। হার্টের অসুখ থাকলে অথবা শ্বাসের রোগ থাকলে এই ধরনের হাঁটার পদ্ধতি উপযুক্ত নয়। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ওয়েটেড ওয়াকিং
খালি হাতে নয়, ওজন নিয়ে হাঁটতে হবে। যাঁরা হাঁটাহাঁটিতে অভ্যস্ত, তাঁদের জন্য সহজ হবে। মেদ ঝরিয়ে টানটান চেহারা চাইলে এমন ভাবে হাঁটতে পারেন। এতে পেশির গঠনও সুন্দর হয়। তবে খেয়াল রাখা দরকার দুই হাতে যেন মোটামুটি একই ওজনের জিনিস থাকে। হাঁটতে হবে নির্দিষ্ট গতিতে একটানা। গতি হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেওয়া বা কমিয়ে আনা চলবে না।
দু'হাতে ওজন নিয়ে হাঁটার উপকারিতা অনেক। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
কত ক্ষণ হাঁটবেন— সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন ২০-২৫ মিনিট করে হাঁটতে হবে।
কাদের জন্য ভাল— জিম করেছেন আগে বা বাড়িতে ব্যায়াম করা অভ্যাস আছে, তাঁরা করতে পারেন। সবে হাঁটতে শুরু করেছেন যাঁরা, তাঁরা হঠাৎ করে ওজন নিয়ে হাঁটতে যাবেন না। বয়স্কদের জন্য এই ব্যায়াম নয়। ভার্টিগো বা মাথাঘোরার সমস্যা থাকলে এ ভাবে না হাঁটাই ভাল।
পিলাটেস ওয়াকিং
পিলাটেস শুধু শরীর ফিট রাখে না, এর কাজ আরও বেশি। শুধু ওজন কমানো নয়, স্লিপ ডিস্ক, ফ্রোজ়েন শোল্ডার, স্পন্ডিলোসিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস— এই ধরনের সমস্যা, ব্যথা থেকে পিলাটেস অনেকাংশে মুক্তি দেয়। পিলাটেস ওয়াকিংয়ের সময়ে হাঁটতে হাঁটতে স্ট্রেচিং বা ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম করা যাবে। হাঁটার সময়ে হাঁটু তোলা ও নামানো, কোমর ঘোরানো, কাঁধ ও হাতের ব্যায়াম করতে হবে। একই সঙ্গে শরীরের সমস্ত পেশির ব্যায়াম হবে।
কত ক্ষণ করবেন— সপ্তাহে তিন দিন ২০ মিনিট করে করতে পারেন ব্যায়াম।
কাদের জন্য ভাল— পিলাটেস এমন এক ধরনের ব্যায়াম, যাতে শরীর ফিট থাকার পাশাপাশি নানা রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। যে কেউ এই ভাবে হাঁটতে পারেন, তবে আর্থ্রাইটিসের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।