কাশতে কাশতে গলা ব্যথা হবে। কফের সঙ্গে উঠে আসতে পারে রক্ত। সেই সঙ্গেই শুরু হবে শ্বাসকষ্ট। খাবার খাওয়া, এমনকি জল খেতে গেলেও কষ্ট হবে। ফুসফুসের এমনই এক সংক্রামক রোগ ক্রমশ বাড়ছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (আইএপি)-এর সমীক্ষা বলছে, হুপিং কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। হাঁপানি, সিওপিডি-র রোগীরা তো বটেই, যাঁদের ফুসফুসের রোগ ছিলই না তাঁরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। হুপিং কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার রোগীদের সংখ্যা ৪০ শতাংশের বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে ছোটরাও রয়েছে।
কাশি কি হার্টের রোগের কারণ হতে পারে?
নাগাড়ে কাশি শ্বাসনালির প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে। আইসিএমআরের গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ক্রনিক কাশি বা হুপিং কাশির সঙ্গে হৃদ্রোগের সম্পর্ক আছে। শ্বাসনালিতে প্রদাহ বাড়তে থাকলে অক্সিজেন সমৃদ্ধ বাতাস হার্টে গিয়ে পৌঁছবে না। তা ছাড়া ফুসফুসে জল জমতে থাকলে রক্ত সঞ্চালনে বিঘ্ন ঘটবে। ফুসফুসে জমা তরল বেরোতে শুরু করলে কাশির দমক আরও বাড়বে। কফের সঙ্গে হলদেটে বা গোলাপি রঙের শ্লেষ্মা উঠে আসবে। ফুসফুস থেকে তরল নিঃসরণের হার বাড়তে থাকলে শ্বাসকষ্ট হবে, অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে হৃৎস্পন্দনও।
আরও পড়ুন:
যে হারে দূষণ বাড়ছে, তাতে ফুসফুসের নানা রোগ বেড়েই চলেছে। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার গড় পরিমাণের (পিএম ২.৫) মাত্রা বেড়ে গেলে শ্বাসজনিত সমস্যা, সর্দি-কাশি, হাঁপানির সমস্যা বাড়ে। দূষিত বাতাসের সঙ্গে ব্যাক্টেরিয়াও ঢুকে পড়ে শ্বাসনালিতে এবং খুব দ্রুত সংখ্যায় বেড়ে ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে। আইসিএমআরের সমীক্ষা জানাচ্ছে, ৫ বছরের নীচে গড়ে প্রতি হাজার জন শিশুর মধ্যে ১১৫ জন এতে আক্রান্ত হয় প্রতি বছর, আর ১০ বছরের নীচে সেই সংখ্যা ৮৫ বা তার বেশি।
দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব নয়। তাই দূষিত বাতাস থেকে ফুসফুস বাঁচাতে হলে মাস্ক পরতেই হবে। ঘরের ভিতরের বাতাস পরিশুদ্ধ রাখার চেষ্টা করতে হবে। এর জন্য এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। দূষিত বাতাস থেকে শিশুর ফুসফুস বাঁচানোর উপায় হল সঠিক সময়ে টিকা দিয়ে রাখা। শিশুদের কী কী প্রতিষেধক দিতে হবে, তার তালিকা তৈরি করেছে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স’। ৬ মাস বা তার বেশি বয়সি শিশুদের ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দিয়ে রাখতেই হবে। এতে ভাইরাল জ্বরের হাত থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া যাবে। পাঁচ বছরের নীচে শিশুদের জন্য নিউমোকক্কাল প্রতিরোধী টিকা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। এতে নিউমোনিয়া ও মেনিনজাইটিসের সংক্রমণ রোখা যাবে। কেবলমাত্র হুপিং কাশির জন্য ‘হোল-সেল পার্টুসিস’ ও ‘অ্যাসেলুলার পার্টুসিস’ প্রতিষেধক রয়েছে। ডিটিপি-১, অর্থাৎ ডিপথেরিয়া, টিটেনাস এবং পার্টুসিসের টিকাও রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টিকা নিয়ে রাখলে ভাল হয়।