Advertisement
০২ মে ২০২৪
Thromboembolism

অসুখ যখন রক্তে

রক্তে থ্রম্বাস তৈরি না হলে থ্রম্বোইম্বলিজ়মের মতো সমস্যার আশঙ্কাও এড়ানো যাবে। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে জেনে নিন বিশদে।

Representational image of Thromboembolism.

অস্বাভাবিক ভাবে রক্তনালির ভিতরে রক্ত জমাট বাঁধা বিপজ্জনক। প্রতীকী ছবি।

কোয়েনা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ০৭:৩৯
Share: Save:

মানুষের দেহে রক্ত সংবহনে সাহায্য করে শিরা এবং ধমনী। ধমনীর মাধ্যমে অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। অন্য দিকে শিরা দূষিত রক্ত বহন করে। শরীরে রক্ত সর্বদা প্রবহমান হলেও, হঠাৎ আঘাতে কোথাও কেটে গেলে তা জমাট বাঁধাও জরুরি। শরীরে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনের কার্যকলাপে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু অস্বাভাবিক ভাবে রক্তনালির ভিতরে রক্ত জমাট বাঁধা বিপজ্জনক। হেমাটোলজিস্ট ডা. শর্মিলা চন্দ্রের কথায়, “শিরা, ধমনী কিংবা পেশিতে রক্ত জমাট বাঁধলে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে সেখানের কোষগুলির মৃত্যু হতে পারে এবং অঙ্গের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি বা আংশিক ভাবে বিনষ্ট হতে পারে।” জমাট বাঁধা এই রক্তকে বলা হয় থ্রম্বাস। অনেক সময়ে শিরা থেকে জমা রক্তখণ্ড (থ্রম্বাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য কোথাও চলে যায়। চিকিৎসা-বিজ্ঞানের ভাষায় তখন একে বলা হয় এম্বলিজ়ম। থ্রম্বোএম্বলিজ়মের কারণে পরিস্থিতি হয়ে যেতে পারে মারাত্মক। হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত পরিস্রুত হওয়ার জন্য পালমোনারি আর্টারির মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। রক্তপ্রবাহের সঙ্গে জমাট রক্ত অনেক সময়ে পালমোনারি আর্টারিতে জমা হয়। একে পালমোনারি এম্বলিজ়ম বলে। এ সব ক্ষেত্রে ব্যক্তির ধীরে ধীরে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ও কাশি শুরু হয়। এমনকি পালমোনারি এম্বলিজ়মের কারণে মানুষ কয়েক মিনিটের মধ্যে মারাও যেতে পারেন। তা ছাড়া থ্রম্বোএম্বলিজ়মের কারণে জমাট বাঁধা রক্তখণ্ড মস্তিষ্কের রক্তনালিতে পৌঁছলে ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে। হৃদযন্ত্রের রক্তনালিতে পৌঁছলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও থাকে।

থ্রম্বোইম্বলিজ়ম কেন হয়?

ডা. শর্মিলা চন্দ্র জানান, সাধারণত বয়সজনিত কারণে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা তৈরি হয়। তবে তাছাড়াও, একাধিক কারণে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। শরীরে থ্রম্বাস উৎপত্তিই থ্রম্বোএম্বলিজ়মের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

ইস্ট্রোজেনযুক্ত ওষুধ থ্রম্বোজেনিক। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে এর ব্যবহারে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। অল্প বয়সে কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল ব্যবহারের কারণেও এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। পাশাপাশি অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। গর্ভকালীন এবং প্রসব পরবর্তী ছ’ সপ্তাহ এক্ষেত্রে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

স্তন ক্যান্সা‌র, প্রস্টেট ক্যান্সারের মতো হরমোন সংবেদনশীল ক্যান্সারের চিকিৎসাতে ইস্ট্রোজেন যুক্ত ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেক সময়েই শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা হয়।

এ ছাড়াও, অস্ত্রোপচারের পর যাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, প্যারালিসিসের মতো শারীরিক অসুস্থতার কারণে যাঁরা দীর্ঘ দিন চলাফেরা করতে পারেন না তাঁদের ক্ষেত্রেও থ্রম্বোএম্বলিজ়মের সম্ভাবনা দেখা যায়।

ভ্যাসকিওলাইটিস অর্থাৎ ধমনীর অসুখের কারণে, ধমনী স্ফীত হলেও এর ভয় বেড়ে যায়।

হার্টে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল জমাট বাঁধলেও রক্তনালিতে অনেক সময়েই থ্রম্বাস তৈরি হয়। এ ছাড়াও হার্টের ভালভের সমস্যা, ঠিক ভাবে রক্ত পাম্প না হওয়ার কারণেও রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। ফলে ফুসফুসে থ্রম্বোএম্বলিজ়মের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, লিপিড প্রোফাইলের তারতম্যে, সিকল সেল অ্যানিমিয়ার কারণেও রক্তে থ্রম্বাস তৈরি হয়।

ডা. শর্মিলা চন্দ্রের মতে, “থ্রম্বোএম্বলিজ়ম কিংবা থ্রম্বোসিসের মতো সমস্যা কিন্তু জিনবাহী। রক্তে থাকা প্রোটিনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে অল্প বয়সেই এ ধরনের সমস্যা হয়। তাই পারিবারিক ইতিহাসে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকলে সন্তানেরও এই সমস্যা হতে পারে।”

চিকিৎসা

ডা. চন্দ্রের কথায়, “এর ফলে প্রতি বছর বিশ্বে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। তা সত্ত্বেও সচেতনতার অভাব দেখা যায়।” বর্তমান যুগের উন্নতমানের চিকিৎসা ব্যবস্থায় ঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে রক্তে থ্রম্বাস তৈরি প্রতিরোধ করা সম্ভব। থ্রম্বাস তৈরি না হলে থ্রম্বোএম্বলিজ়মের মতো সমস্যার আশঙ্কাও এড়ানো যাবে। প্রাথমিক ভাবে রক্তকে তরল রাখতে এ ক্ষেত্রে হেপারিন জাতীয় ওষুধের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে, অনেক সময়েই অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হয়।

আনতে হবে বদল

ওষুধের পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে সামান্য বদল এই রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম, উচ্চতা অনুযায়ী সঠিক ওজন বজায় রাখা জরুরি। কোলেস্টেরল, ডায়াবিটিসের মতো সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডিহাইড্রেশনের কারণে রক্ত ঘন হয়ে যায়। ফলে থ্রম্বাস তৈরির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া দরকার। ডা. চন্দ্রের পরামর্শ, “রোজ কমপক্ষে আধ ঘণ্টা হাঁটা জরুরি। যাঁরা একনাগাড়ে দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন, তাঁরা কাজের ফাঁকে একটু হাঁটাচলা করুন। যাঁরা দীর্ঘ দিন শয্যাশায়ী, নিয়মিত তাঁদের পায়ের ব্যায়াম করানো প্রয়োজন।” মনে রাখবেন, অনেক সময়েই বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা দেখা যায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Thromboembolism Health Blood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE