আগে মরসুম বদলের সময়েই সর্দিকাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা নিউমোনিয়ার সংক্রমণ বেশি দেখা যেত। কিন্তু এখন ঝুঁকি সারা বছরই রয়েছে। বিশেষ করে, বয়স্কদের মধ্যে যাঁদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁরাই ভুগছেন বেশি। দেখা যাচ্ছে, অনেক প্রবীণেরই সর্দিকাশি সারতে চাইছে না। রাতে শুলে বুক ধড়ফড় করে বা শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রাও আচমকা কমে যায় অনেকের। এগুলি কিন্তু ‘অ্যাকিউট নিউমোনিয়া’র লক্ষণ। ৬০ বা ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রবীণেরাই ভুগছেন বেশি।
লক্ষণ অনেক রকমের
ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ থেকে নিউমোনিয়া হতে পারে। স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি নামের ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ নিউমোনিয়া রোগের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। আবার ছত্রাক থেকেও নিউমোনিয়া হয়।

নিউমোনিয়ার নানা লক্ষণ চিনে রাখা জরুরি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
নিউমোনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হল জ্বর, তার সঙ্গে কাশি। পাশাপাশি, শ্বাসকষ্টও থাকে। সংক্রমণ যত বাড়ে, শ্বাসকষ্টও বাড়তে থাকে। বুকে ব্যথা হতে পারে। বুকের ব্যথার এই ধরন একটু আলাদা। সাধারণত, গভীর শ্বাস নেওয়ার সময়ে বুকে ব্যথা অনুভূত হবে। ফুসফুসের প্রদাহের কারণে এই ব্যথা হয়। এ ছাড়া, মাথা যন্ত্রণা, ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়া, খাওয়ায় অনীহা, সারা ক্ষণ বমি বমি ভাবও আনুষঙ্গিক লক্ষণের মধ্যে পড়ে।
চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল জানাচ্ছেন, বয়স্কদের অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় শ্বাসের হার মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছে। প্রতি মিনিটে শ্বাসপ্রশ্বাসের হার ৩০ বা তারও বেশি হয় অনেকের। প্রতি মিনিটে হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে ১২০ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা জরুরি।
চিকিৎসা কী?
ঠান্ডা লাগানো একেবারেই যাবে না। যাঁদের ফুসফুসের রোগ আছে অথবা ডায়াবিটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, হার্টের রোগের মতো কোমর্বিডিটি রয়েছে, তাঁদের সাবধানে থাকতেই হবে।
নিউমোনিয়ার টিকা নিয়ে রাখাও জরুরি। এই বিষয়ে চিকিৎক অরুণাংশু তালুকদারের মত, “নিউমোনিয়ার দু’রকম টিকা আছে— নিউমোকক্কাল কনজুগেট ভ্যাকসিন (পিসিভি) এবং নিউমোকক্কাল পলিস্যাকারাইড ভ্যাকসিন (পিপিএসভি)। পিসিভি টিকা শিশু ও বয়স্কদের জন্য। আর পিপিএসভি টিকা তাঁদেরই দেওয়া হয়, যাঁদের বয়স ষাট পেরিয়েছে এবং ফুসফুস দুর্বল বা সিওপিডি, হাঁপানির মতো রোগ বা অন্য কোনও জটিল অসুখ রয়েছে।”
নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক এবং প্রয়োজনে অক্সিজেন দিতে হয়। কাশি, জ্বর ও নিঃশ্বাসের কষ্ট হলে নিজে থেকে ওষুধ কিনে না খেয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।